এশিয়ার সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে বাংলাদেশে আসুন: শীর্ষ ব্যবসায়ীদের হাসিনা

এশিয়ার সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে বাংলাদেশে আসুন: শীর্ষ ব্যবসায়ীদের হাসিনা
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য দেওয়া নানা সুবিধার কথা তুলে ধরে সেগুলোকে কাজে লাগাতে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের এদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্থানীয় সময় বুধবার বিকালে লন্ডনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ফোরামের নেতাদের সঙ্গে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের গোলটেবিল বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মের সঞ্চালনায় গোলটেবিলে ১৪টি দেশের সরকারপ্রধান উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও ই-কমার্স এবং সংঘাতমুক্ত শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বরোপ করেন।

ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, বিশেষ করে, বিশ্বের যেসব ব্যবসায়ী নেতারা এখানে উপস্থিত আছেন তাদের।

“আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এশিয়ার সবচেয়ে বেশি এফডিআই (প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ) প্রণোদনা দেওয়া দেশে আপনারা আমাদের সরকারের কাছ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পাবেন।”

কমনওয়েলথভুক্ত এসআইডিএস (স্মল আইল্যান্ড ডেভেলপিং স্টেট), এলএলডিসি (ল্যান্ড লকড ডেভেলপিং স্টেট) এবং আফ্রিকান ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বৃহৎ বাজার এবং বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের সুবিধা পাওয়ার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৯ কোটি মধ্যবিত্ত ক্রেতা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপানের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশকে এশিয়ার ভবিষ্যৎ সেরা বিনিয়োগ হাব হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও ব্র্যান্ডিং করছে।”।”

টেকসই বিনিয়োগ সুরক্ষা দিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিশেষ করে, তেল ও গ্যাস উৎপাদনে সরকার সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

অবকাঠামো উন্নয়ন, মানবসম্পদের সক্ষমতা ও কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং প্রযুক্তির ব্যবহার গতিশীল করার ওপরও সরকার জোর দিচ্ছে বলে জানান তিনি।

এসবের ফলে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমে আসার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯১ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা ২০১৫ সালে ২২ দশমিক ৪০ ভাগে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, চলতি অর্থবছরে ৩ বিলিয়ন ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে।

অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচির সুফল এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানিকেন্দ্রিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের কর্মসংস্থান বাড়াতে ও দারিদ্র্য কমাতে ভূমিকা রেখে চলেছে।

গত মাসে জাতিসংঘ থেকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি মেলার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বেসরকারি অংশীদারিত্বকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। এর ফলে কর্মসংস্থানের আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্প বাংলাদেশের উন্নয়নে বহুমুখী ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বাড়ানো ও দারিদ্র্য বিমোচনে এসএমই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ই-কমার্সের উন্নয়নে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যা থেকে এসএমই খাত সুবিধা পাচ্ছে।

অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ বাড়ানো ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সাশ্রয়ী প্রযুক্তি, কাঁচামাল, ভবিষ্যত উদ্যোক্তাদের তথ্যভিত্তিক বাজার সুবিধা দেয়ার মতো বিষয়গুলোর দিকে সরকার মনোযোগ দিয়েছে। বিনা জামানতে এক অংকের সুদে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।

এ মাসের শুরুতেই দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এসএমই পরামর্শ কেন্দ্র চালুর কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

সদস্য দেশগুলোর টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার ও বেসরকারি খাতকে কমনওয়েলথ সহায়তা দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার থেকে থেকে শুরু হয়েছে কমনওয়েলথের সরকার প্রধানদের ২৫তম সভা। ‘টুয়ার্ডস এ কমন ফিউচার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া এ সম্মেলনে যোগ দিতে সোমবার লন্ডন এসেছেন শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার সভার শুরুতেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসদের মতো ব্যক্তিত্বরা বক্তব্য দেন। ওই দিন সকালে লন্ডনের ওয়েস্ট মিনস্টারে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্মেলন কক্ষে ‘এডুকেট টু এম্পাওয়ার: মেইকিং ইকুইটেবল অ্যান্ড কোয়ালিটি প্রাইমারি এডুকেশন অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন এ রিয়েলিটি ফর গার্লস অ্যাক্রস দ্য কমনওয়েলথ’ শীর্ষক অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

বিকালে এই সভায় যোগ দেওয়ার আগে দুপুরে লন্ডনের গিল্ড হলে কমনওয়েলথ বিজনেস ফোরাম আয়োজিত ‘এশিয়ান লিডারস রাউন্ডটেবিল: ক্যান এশিয়া কিপ গ্রোয়িং?’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।

রাতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।