রোহিঙ্গা নিপীড়ন: মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

রোহিঙ্গা নিপীড়ন: মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দমন-পীড়নের ঘটনায় মিয়ানমারের চার সামরিক ও পুলিশ কমান্ডারসহ দুটো সামরিক ইউনিটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

শুক্রবার এ নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়। রোহিঙ্গা নিপীড়নের জবাবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এটিই এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ।

তবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের কেউ এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই। তাছাড়া, রোহিঙ্গা বিরোধী প্রচারকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কিংবা গণহত্যাও আখ্যা দেয়নি ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারে এ বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গতবছর রোহিঙ্গদের ওপর নতুন করে অভিযান শুরুর পর অগাস্ট থেকে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তারা জানায়, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সেনা সদস্যরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মেরেছে।

এরপর অক্টোবরেই এর জবাবে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবা হচ্ছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, “রাখাইনে যেসব সহিংসতার খবর আসছে, বিশ্ব তা দেখেও চুপ করে থাকতে পারে না।” যা ঘটেছে সেজন্য মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বকেই দায়ী করেন তিনি।

পরে ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের মেজর জেনারেল মাউং মাউং সোয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এবারের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র যোগ করেছে- মিয়ানমারের সামরিক কমান্ডার অং কায়াও জ, খিন মাউং সোয়ে, খিন হায়িং এবং সীমান্ত পুলিশ কমান্ডার থুরা সান লিউইন কে। তাদের সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে পদাতিক বাহিনীর ৩৩ এবং ৯৯ তম ডিভিশন।

গত জুনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক বিশেষ প্রতিবেদনে মিয়ানমারের পদাতিক বাহিনীর এ দুই ডিভিশনের ভূমিকার পুরো চিত্রই তুলে ধরে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি সেক্রেটারি সিগাল মান্ডেলকার বলেছেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী দেশজুড়ে জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা, জাতিগত শুদ্ধি অভিযান, হত্যা, ধর্ষণ, নির্বিচার হত্যাযজ্ঞসহ অন্যান্য মারাত্মক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে।

মন্ত্রণালয় এ সমস্ত ভয়াবহ কর্মকান্ড তদারককারী ইউনিট এবং নেতাদের ওপরই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। মানুষকে এত বড় দুর্ভোগে ফেলার জন্য দায়ীদের জবাবদিহি করতে যুক্তরাষ্ট্র বৃহত্তর নীতি ও পরিকল্পনার আওতায় এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

রাখাইনে সেনা অভিযানকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও সেনাবাহিনী তা অস্বীকার করেছে। ওই অভিযানকে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই’ হিসেবে বর্ণনা করেছে তারা।