উত্তেজনা ছড়িয়ে বার্সা-রিয়ালের ড্র
শিরোপা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে আগেই কিন্তু ক্লাসিকো ঠিকই ছড়ালো উত্তেজনা। স্পেনের সেরা দুই দল রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা উপহার দিল রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ। দুই দলের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষায় ছড়ালো বারুদ। দুবার এগিয়ে গিয়েও জিততে পারলো না বার্সেলোনা। তবে এক অর্ধ একজন কম নিয়ে খেলে রিয়ালের সঙ্গে ড্রও কম প্রাপ্তি নয়।
এরই মধ্যে শিরোপা নিশ্চিত করা বার্সেলোনা ও গতবারের চ্যাম্পিয়ন রিয়ালের ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র হয়। লুইস সুয়ারেসের গোলে শুরুতে এগিয়ে যায় এরনেস্তো ভালভেরদের দল। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর গোলে সমতা ফেরায় রিয়াল।
প্রথমার্ধের শেষ বেলায় লাল কার্ড দেখেন বার্সেলোনার সের্হিও রবের্তো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে স্বাগতিকদের এগিয়ে নেন লিওনেল মেসি। জিনেদিন জিদানের দলকে এবার সমতায় ফেরান গ্যারেথ বেল।
কাম্প নউয়ে শুরুতে রিয়ালকে চেপে ধরে বার্সেলোনা। তাদের গতিময় ফুটবলে রক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় জিদানের শিষ্যদের।
মেসি আর সুয়ারেসের চতুরতায় দশম মিনিটে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। ডান দিক থেকে রবের্তোর ক্রস যেন মেসিকে খুঁজে না পায় সেই চেষ্টায় ব্যস্ত ছিল অতিথিদের ডিফেন্স। সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগান অরক্ষিত সুয়ারেস। মাত্র আট গজ দূর থেকে তার ডান পায়ের ভলি ফেরানোর কোনো সুযোগই ছিল না কেইলর নাভাসের।
পাঁচ মিনিট পরেই সমতা ফেরায় রিয়াল। রোনালদোর ব্যাক হিলে টনি ক্রুসের ক্রস খুঁজে পায় করিম বেনজেমাকে। তার হেডের পর সঙ্গে লেগে থাকা জেরার্দ পিকেকে ফাঁকি দিয়ে দুই গজ দূর থেকে বল জালে পাঠান রোনালদো।
১৯তম মিনিটে মেসির ক্রসে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি জর্দি আলবা। ২৭তম মিনিটের মধ্যে হ্যাটট্রিক পেয়ে যেতে পারতেন রোনালদো। ২৬তম মিনিটে এগিয়ে এসে তার শট ঠেকিয়ে দেন মার্ক-আন্ড্র টের স্টেগেন। পরের মিনিটে অফ সাইডের ফাঁদ ভেঙে তাকে একা পেয়েও শট লক্ষ্য রাখতে পারেননি রোনালদো।
পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না বার্সেলোনা। পাল্টা আক্রমণে তাদের রক্ষণ কাঁপিয়ে দেয় রিয়াল। তবে ফিনিশিংয়ে ব্যর্থতায় প্রথমার্ধে এগিয়ে যেতে পারেনি দলটি।
৩৭তম মিনিটে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি রোনালদো। তিন মিনিট পর শট লক্ষ্যে রাখতে ব্যর্থ হন বেনজেমা।
৪২তম মিনিটে সামনে কেবল গোলরক্ষককে পেয়েও বল জালে পাঠাতে পারেননি মেসি। দারুণ দক্ষতায় তার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে রিয়ালের ত্রাতা নাভাস।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে লাল কার্ড দেখেন রবের্তো। তাকে ধাক্কা মারা মার্সেলোর মুখে ঘুসি মারেন। সাইড লাইনে দাঁড়ানো বার্সেলোনার কোচ সবে মার্সেলোর ফাউলের প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন কিন্তু শিষ্যের কাণ্ড দেখে হতভম্ব হয়ে যান।
গোল করার সময়ে চোট পাওয়া রোনালদো বিরতির পর মাঠে নামেননি। ১০ জনের বার্সেলোনাকে চেপে ধরে রিয়াল। তাদের হতাশ করে ৫২তম মিনিটে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
মাঝ মাঠে বল পেয়ে রাফায়েল ভারানেকে পরাস্ত করে সুয়ারেস দারুণ এক পাস দেন মেসিকে। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক এবার কোনো ভুল করেননি। রিয়ালের ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে বাঁ পায়ের বাঁকানো শটে পরাস্ত করেন নাভাসকে। ঝাঁপিয়েছিলেন অতিথি গোলরক্ষক; কিন্তু বার ঘেঁষে যাওয়া বল ঠেকাতে পারেননি তিনি।
৫৭তম মিনিটে মাঠ ছাড়েন নিজের শেষ ক্লাসিকোয় খেলা বার্সেলোনা অধিনায়ক আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। তার বদলি নেমে প্রথম মিনিটেই গোল পেয়ে যেতে পারতেন পাওলিনিয়ো। কিন্তু সেমেদোর চমৎকার ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি এই মিডফিল্ডার।
পাল্টা আক্রমণে ৭০তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। অনেকটা ছুটে এসে কোনাকুনি শট নেন তিনি। কিন্তু দারুণ ডাইভে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন নাভাস।
দুই মিনিট পর চমৎকার এক গোলে সমতা ফেরান গ্যারেথ বেল। মার্কো আসেনসিও কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁকানো শটে টের স্টেগেনকে ফাঁকি দেন ওয়েলসের এই ফরোয়ার্ড।
৭৬তম মিনিটে ডি-বক্সে মার্সেলোকে বার্সেলোনার আলবা পায়ে লাথি মেরে ফেলে দিলেও পেনাল্টি দেননি রেফারি। ছয় মিনিট পর পাল্টা আক্রমণ থেকে মেসির শট একটুর জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। খানিক পর তার বুলেট গতির শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন নাভাস।
শেষ সময়ে বার্সেলোনার ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করে রিয়াল। কিন্তু জমাট রক্ষণ ভাঙতে পারেনি দলটি।
৩৫ ম্যাচে ৮৭ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে বার্সেলোনা। অপরাজিত থেকে মৌসুম শেষ করার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল দলটি। সমান ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে রিয়াল। ৩৬ ম্যাচে ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে এস্পানিওলের কাছে ২-০ গোলে হারা আতলেতিকো মাদ্রিদ।
ট্যাগ :
রোনালদোস্প্যানিশ ফুটবলরিয়াল মাদ্রিদবার্সেলোনাসুয়ারেস মেসিলা লিগা