ইউনাইটেডকে বোকা বানিয়ে সেভিয়ার ইতিহাস

ইউনাইটেডকে বোকা বানিয়ে সেভিয়ার ইতিহাস
খেলা ডেস্ক


গোলের পর ম্যাচের নায়ক ইয়েডারের উদ্‌যাপন। ছবি: রয়টার্স
গোলের পর ম্যাচের নায়ক ইয়েডারের উদ্‌যাপন। ছবি: রয়টার্স

• চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিদায়।
• ২-১ গোলে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ জেতে সেভিয়া।
• ৬০ বছর পর দ্বিতীয়বার শেষ আটে জায়গা করে নেয় সেভিয়া।
• জোড়া গোল করে ম্যাচের নায়ক বেন ইয়েডার।

বেন ইয়েডার নামটি চিনে রাখুন। গতকাল রাতে ম্যাচেস্টার ইনাইটডকে যা দেখালেন সেভিয়ার ফরাসি এই স্ট্রাইকার তাতে তাঁকে চিনে না রেখে উপায় আছে? চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় লেগে বেন ইয়েডারের জোড়া গোলেই শেষ আটে পৌঁছে গেছে সেভিয়া। জোড়া গোল তো পেলেন। ম্যাচের ৯০ মিনিটে সহজ সুযোগটি নষ্ট না করলে তো হ্যাট্রিকই করে ফেলতেন। এখন হয়তো আফসোস করছেন, ‘ইশশ...ডেভিড ডি গিয়াকে একা পেয়েও গোলটা করতে পারলাম না...’

বেন ইয়েডার আফসোস করেছেন কিনা জানা যায়নি। ভবিষ্যতে তাঁকে চিনে রাখার আরো কারণ আসবে কিনা সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু এই মৌসুমে তাঁকে যে চিনে রাখতেই হবে। কারণ চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বোচ্চ গোল সংখ্যার দৌড়ে তিনি দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন। ফুটবলের আরেক মহারাজা ১২ গোল করা রোনালদোর ঠিক পেছনেই ১০ গোল নিয়ে বেন ইয়েডারের অস্থান।

গোলমুখে ইয়েডারের আরেকটি প্রচেষ্টা। ছবি: রয়টার্স
গোলমুখে ইয়েডারের আরেকটি প্রচেষ্টা। ছবি: রয়টার্স

চ্যাম্পিয়নস লিগ যখন ইউরোপিয়ান কাপ নামে খেলা হত তখন; মানে ১৯৫৭-১৯৫৮ মৌসুমে একবার শেষ আটে উঠেছিল সেভিয়া। স্পেনের এই ক্লাবটি এর আগে কখনো শেষ ষোল টপকাতে পারেনি, পরেও পারেনি। ওই অর্থে কাল রাতের জয় তাঁদের জন্য ইতিহাস-ই বটে। চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্যও ইতিহাস। তিনবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি জয়ী দুবারের রানারআপ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তাঁরা কিনা এমন একটা দলের কাছে হেরে গেল? ১৯৯২ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ নামকরণ হওয়ার পর যাদের শেষ ষোল পার হওয়ারই নজির নেই।

প্রথম লেগ ড্র করে আসার পর নিজেদের মাঠ ওল্ডট্রাফোর্ডে মরিয়া হয়েই খেলছিল হোসে মরিনহোর দল। তবে কিছুতেই পেরে উঠিছল না যেন। বরং প্রথমার্ধে ২০-২৫ মিনিট বল দখলের লড়াইয়ে সেভিয়াই এগিয়ে ছিল। গোলমুখে শটও বেশি নিয়েছিল সেভিয়া। প্রথমার্ধেই গোলমুখে ১০টি শট নেয় সেভিয়া। বেশিরভাগই অবশ্য বেপথু ছিল। এই শট নেয়াতেও পিছিয়ে ছিল ম্যানইউ। লুকাকু-ফেলানিরা নিয়েছিল ম্যাচে মোট ১৭টি শট নিয়েছিল। পুরো ম্যাচে সেভিয়া শট নেয় ২১টি। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস লিগে ওল্ডট্রাফোর্ডে ম্যানইউর বিপক্ষে এর আগে সর্বোচ্চ ২২টি শটের রেকর্ড আাছে একমাত্র রিয়াল মাদ্রিদের।

সেভিয়ার খেলোয়াড়দের উল্লাস। ছবি: এএফপি
সেভিয়ার খেলোয়াড়দের উল্লাস। ছবি: এএফপি

ম্যাচের ৬১ মিনিটে এসে ফেলানিকে তুলে নেন মরিনহো। এরপর ভালো কিছু সুযোগও তৈরি করেছিল ইংলিশ এই ক্লাবটি। কিন্তু ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বারবার নিজেদের করে নিচ্ছিল সেভিয়া। যদিও অদেখা গোলের দেখা পাচ্ছিল না কেউ-ই। শেষতক সেভিয়ার কোচ ভিনসেঞ্জো মনটেলা বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নামান বেন ইয়েডারকে। ম্যাচ শেষ হতে তখন ১৮ মিনিট বাকি। ফরাসি এই সেনা নেমেই ৭৪ মিনিটে প্রথম গোল করে গিট্টু খোলেন। এরপর ৪ মিনিট পর আবারো ম্যানইউর জালে বল জড়ান।

দুই গোল হজম করে ম্যানইউ রীতিমতো ফুঁসছিল। চোখ রাঙিয়ে তেড়ে যাচ্ছিল সেভিয়ার রক্ষণভাগ চিরে। ফলাফলও পেল ৮৪ মিনিটে। লুকাকুর দুর্দান্ত শটে গোল ব্যবধান কমায় ম্যানইউ। ওই একমাত্র গোলই ম্যানইউর শান্তনা পুরস্কার হয়ে রইল।

দ্বিতীয়ার্ধে গোলের দেখা পেলেও প্রথমার্ধেই ভালো খেলেছে সেভিয়া। এএফপির কাছে এমনটিই দাবি করেছেন সেভিয়ার কোচ ভিনসেঞ্জো মনটেলার, প্রথমার্ধেই আমরা ভালো খেলছিলাম। কিন্তু গোল করতে পারছিলাম না। দ্বিতীয়ার্ধে ইয়েডার এসে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।


এমন জয়ের পর নিজেদর ‘গ্রেট’ বলেই মনে করছেন ম্যাচের নায়াক ইয়েডার, আমার নিজের এবং দলের ওপর বিশ্বাস আছে। আমরা দেখিয়েছি আমরা ‘গ্রেট’ ক্লাব।

ম্যানইউর খেলা দেখতে আসেন ২৬ বছর দলটির সঙ্গে থাকা কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসন। শেষমেশ হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়েন। অন্যদিকে এভাবে ম্যাচ হেরেও মরিনহো হাল ছেড়ে দিচ্ছেন না। দেখিয়েছেন ইতিবাচক মনোভাব। সাহস যুগিয়েছেন শিষ্যদের। এএফপিকে বললেন, এসব নিয়ে কোনো নাটক করতে চাই না। একদিনের বেশি মন খারাপ করে বসে থাকারও কোনো কারণ দেখছি না। এটা ফুটবল, এখানেই সব শেষ হয়ে যায়নি।

মরিনহোর গলায় ঘুরে দাঁড়ানোর সুর যতই বাজুক, কালকের হারে ম্যানইউ যে ‘বোকা’ বনে গেছে সেটা তো আর বলে দিতে হবে না?