আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্বের ‘উজ্জ্বলতম নক্ষত্র’ স্টিভেন হকিংয়ের চিরপ্রস্থান

আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্বের ‘উজ্জ্বলতম নক্ষত্র’ স্টিভেন হকিংয়ের চিরপ্রস্থান

বিশ্বখ্যাত পদার্থবিদ স্টিভেন হকিং মারা গেছেন, যাকে বিবেচনা করা হত আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্বের ‘উজ্জ্বলতম নক্ষত্র’ হিসেবে।
বুধবার ভোরে কেমব্রিজে নিজের বাড়িতে তার জীবনাবসান হয় বলে জানিয়েছে তার পরিবার। তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার এই দিকপালের বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

বিবিসি লিখেছে, ব্রিটিশ এই পদার্থবিদ সবচেয়ে বেশি পরিচিত অপেক্ষবাদ ও ব্ল্যাক হোল নিয়ে তার তত্ত্বের জন্য। ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ এর মত বই লিখে তিনি বিজ্ঞানের জটিল বিষয়কেও সাধারণ মানুষের অনেক কাছাকাছি নিয়ে গেছেন।

মাত্র ২২ বছর বয়সে বিরল প্রকৃতির মোটর নিউরন ডিজিজে আক্রান্ত হন হকিং। তিনি বড়জোর কয়েক বছর বাঁচবেন বলে সে সময় চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন।

ওই অসুস্থতার কারণেই বাকি জীবন তাকে হুইলচেয়ারে কাটাতে হয়। তার বাকশক্তি প্রায় লোপ পায়। বিশেষভাবে নির্মিত ভয়েস সিন্থেসাইজার দিয়ে কথা বলতে পারতেন তিনি।

  এক বার্তায় হকিংয়ের সন্তান লুসি, রবার্ট ও টিম বলেন, “আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের প্রিয় বাবার আজ জীবনাবসান হয়েছে।”
“তিনি ছিলেন একজন মহান বিজ্ঞানী এবং একজন অসাধারণ মানুষ যার কাজ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবে।”

সন্তানরা স্টিভেন হাকিংয়ের “সাহস ও অধ্যবসায়”-এর প্রশংসা করেছেন। তার “প্রতিভা ও রসবোধ” গোটা বিশ্বের মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই বার্তায়।

“একবার তিনি বলেছিলেন, ‘এটা যদি আমাদের ভালোবাসার মানুষগুলোর আবাসভূমি না হত, তাহলে এটা মহাবিশ্বই হত না,’ আমরা তাকে কখনো ভুলব না।”

১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন্ম নেন স্টিভেন উইলিয়াম হকিং। এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি কীভাবে হয়েছে, তা অপেক্ষবাদ ও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সমন্বয়ে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি নিজের তত্ত্বে।

কৃষ্ণগহ্বর থেকে শক্তি চুইয়ে বেরিয়ে যায় এবং এর ফলে কৃষ্ণগহ্বর একসময় হারিয়ে যায় বলে তিনি যে ধারণা দেন, তাই একসময় হকিং রেডিয়েশন নামে পরিচিতি পায়।

স্যার রজার পেনরোজের সঙ্গে করা যৌথ গবেষণায় তিনি দেখিয়েছিলেন, আইনস্টাইনের দেওয়া আপেক্ষিকতার সাধারণ সূত্রানুসারে স্থান-কালের শুরু বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে এবং এর সমাপ্তি হয় কৃষ্ণগহ্বরে।



তাত্ত্বিক গবেষণার বাইরে এই বিজ্ঞানী সাধারণ মানুষের কাছেও জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি একাধিক টেলিভিশন শোতেও হাজির হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘দ্য সিম্পসনস’, ‘রেড ডোয়ার্ফ’ ও ‘দ্য বিগ ব্যাং থিওরি’। এ ছাড়াও তাকে কেন্দ্র করেও তৈরি হয়েছে একাধিক টেলিভিশন অনুষ্ঠান ও সিনেমা।

স্টিভেন হকিংয়ের প্রয়াণে প্রথম যারা শোক প্রকাশ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জনক স্যার টিম বার্নার্স লি।

“আমরা এক বিশাল হৃদয় আর বিস্ময়কর আত্মাকে হারিয়েছি। শান্তিতে ঘুমান স্টিভেন হকিং।”

মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সাত্যিয়া নাদেলা বলেন- “আমরা মহান একজনকে হারালাম। বিজ্ঞানে অবিশ্বাস্য অবদান আর জটিল তত্ত্ব আর ধারণাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”

“অসম্ভব যেসব বাধার মুখে তিনি পরেছেন, তারপরও মহাবিশ্ব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জনে তার উদ্দীপনা আর সীমাহীন সাধনার জন্যও তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”