উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বৈঠকের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
কিম জং উন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বৈঠকের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একেবারে নিঃশর্ত বৈঠক হবে না। বৈঠক করতে হলে পিয়ংইয়ংকে অবশ্যই ‘সুর্নিদিষ্ট পদক্ষেপ’ নিতে হবে। উন যতক্ষণ না সেরকম পদক্ষেপ নিচ্ছেন, সে পর্যন্ত ট্রাম্প তাঁর সঙ্গে বসবেন না। তবে সেই পদক্ষেপের বিষয়ে কিছু জানায়নি হোয়াইট হাউস।

ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের একটি আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন। বৈঠকের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মে মাস নাগাদ এই বৈঠক হতে পারে বলে ওয়াশিংটনে অবস্থানরত দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা জানান। বৈঠকের সুনির্দিষ্ট তারিখ ও স্থান এখনো ঠিক হয়নি।

বৈঠক শুরুর আগেই কেন যুক্তরাষ্ট্রের এ শর্ত? এর কারণ হচ্ছে, কিমের আমন্ত্রণ গ্রহণ করায় ট্রাম্প সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অনেকে বলছেন, এতে কিমের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে। 
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে সুদৃঢ় পদক্ষেপ ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না দেখা পর্যন্ত বৈঠকে বসবেন না প্রেসিডেন্ট। এতে প্রেসিডেন্ট কিছু পাবেন। তবে উত্তর কোরিয়াকে কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তা তিনি বলেননি। 
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলেন, কিমের সঙ্গে আলোচনায় নতুন কোনো শর্ত বেধে দিতে ইচ্ছুক নন তিনি। তাঁর মন্তব্যে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে অবস্থানের বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করার ইঙ্গিত দেয় না।

গতকাল শুক্রবার ট্রাম্প টুইটারে কিমের সঙ্গে বৈঠকের সময়, স্থান ও শর্ত সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলেননি। তিনি লেখেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তি হলে তা বিশ্বের জন্য ভালো হবে। তবে সময় ও স্থান নিয়ে ভাবতে হবে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনেও হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে উত্তর কোরিয়াকে চাপে রাখার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে চাওয়ার অর্থ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উত্তর কোরিয়াকে একঘরে করে রাখার নীতি কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে কোনা ছাড় না দেওয়ার যে নীতি নিয়েছিল তা কাজ করেছে এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত চাপে রাখবে।

গত এক মাস আগেই ট্রাম্প ও কিম দুজন পরস্পরকে অপমান করে কথা বলেছেন। তবে উত্তর কোরিয়ার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে আলোচনায় সবার আগ্রহ দেখান ট্রাম্প। এখন পর্যন্ত কোনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে বৈঠক করেননি।

এর আগে মাইক পেন্স আলোচনায় বসার বিষয়টিকে দারুণ ব্যাপার বললেও এখন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের শর্ত দিচ্ছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা জানান, বৈঠক হওয়ার আগ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া তাদের সব পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

প্রায় এক বছর ধরে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে হুমকি ও পাল্টা হুমকির ঘটনা ঘটেছে। উত্তর কোরিয়া দূরপাল্লার আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম। তবে আলোচনার টেবিলে বসার বিষয়টিকে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলোচনার বিষয়ে শর্ত দেওয়া হলেও উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যমে এ বিষয়ে খুব বেশি উন্নতির তথ্য উঠে আসেনি। তবে সুইডেনে কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে বলা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ওয়োং-হো শিগগিরই সুইডেন ভ্রমণ করবেন। পিয়ংইয়ংয়ে সুইডেনের দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার কূটনৈতিক বিষয়গুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। তথ্যসূত্র: রয়টার্স, বিবিসি।