জীবন পাল্টে দিয়েছে জুডো

জীবন পাল্টে দিয়েছে জুডো

জুডো শিখে আত্মবিশ্বাসী হচ্ছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীরা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

মা-বাবা সুদামাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে ছিলেন। কিন্তু বেশি দিন সেখানে যেতে পারলেন না। একা একা তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার মতো সাহস ছিল না মা-বাবার। সারা দিন বাসায় থাকতেন আর ভাবতেন, ‘এভাবেই কি চলবে তাঁর জীবন?’
তবে বিষণ্ন ও হতাশ সুদামার জীবন এখন আর তেমন নেই। এলাকায় যাঁরা করুণার চোখে দেখতেন, তাঁরাও এখন সমীহের চোখে তাকান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সুদামার দিকে। জুডো প্রশিক্ষণ নিয়ে এমন আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছেন সুদামার মতো আরও ৬০ নারী। জুডো পাল্টে দিয়েছে তাঁদের জীবন।

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাইটসেভারস নামের আন্তর্জাতিক সংস্থা স্থানীয় অংশীদারদের সহায়তায় ভারতের প্রত্যন্ত এলাকার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীদের আত্মরক্ষায় জুডো প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীদের শারীরিক ও যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে আরও বেশি। অনেকে একা একা বাড়ি থেকে বের হয়ে কোথাও যেতেও পারেন না। তবে নিজেকে রক্ষা করার কৌশল শিখে এখন ৬০ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মেয়ে এখন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে পারছেন, চাকরির সন্ধানে বের হচ্ছেন। এভাবে তাঁরা সমাজের সক্রিয় একজন সদস্য হয়ে উঠছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন জাতীয় প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়ে পদক জয় করেছেন। এলাকার অন্য দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীদেরও তাঁরা এখন জুডো শেখাচ্ছেন।

সুদামা ২০১৪ সালে জুডো শিখতে শুরু করেন। তখন থেকে তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। স্কুল থেকে বাসায় তিনি একা একা ফিরতে শুরু করেন। অথচ এর আগে যাওয়া-আসার সঙ্গীর অভাবে তিনি স্কুলে যাওয়াই ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। মা-বাবা দুজনেই কাজে চলে যেতেন। তাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার কেউ ছিল না। এমনকি স্বজনদের মধ্যেও এমন কাউকে পাওয়া যেত না, যিনি তাঁকে নিয়মিত স্কুল থেকে আনা-নেওয়া করবেন।

জুডো প্রতিযোগিতায় লড়ছেন দুই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারী। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
জুডো প্রতিযোগিতায় লড়ছেন দুই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারী। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সুদামা বলেন, ‘জুডো শেখার আগে আমি ভাবতাম, কীভাবে আমি বাইরে যাব? কীভাবে আমার জীবন চলবে? বাসা থেকে স্কুল অনেক দূর। আমি একা স্কুলে যেতে ভয় পেতাম। মা-বাবাও একা যেতে দিতেন না।’ 

জুডো শেখার পর তা বন্ধুদেরও শেখানো শুরু করেন সুদামা। পরে তিনি জুডো প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান। দিল্লি, গোয়া, গুরুগ্রাম ও লক্ষ্ণৌতে জুডো প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নেন এবং সোনা ও রুপার পদক জিতেন। 
নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পর এলাকায় তাঁর মর্যাদাই বেড়ে গেছে। সবাই তাঁকে সমীহের চোখে দেখা শুরু করেছে।

আত্মরক্ষার জন্য আত্মবিশ্বাস অর্জন করার পর তাঁদের জীবনের স্বপ্ন পূরণের পথ যে একেবারে মসৃণ হয়ে গেছে, তা নয়। জানকি নামে আরেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীর কথাই ধরা যাক। ২০ বছরের এই তরুণীর আত্মবিশ্বাস বাড়ার সঙ্গে স্বপ্নও বড় হলো। একই সঙ্গে প্রতিকূলতাও হাজির। দৃষ্টি ও শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের জাতীয় জুডো প্রতিযোগিতায় সোনা জয়ের পর তাঁর সামনে এখন উন্মুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক দ্বার। তুরস্কে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাটি হবে। অথচ সেটায় অংশ নেওয়ার মতো অর্থ নেই তাঁর হাতে। 

তবে সংগ্রামী জীবন তাঁকে হতাশায় ফেলেনি। তাই এখনো আশাবাদী তিনি। বললেন, ‘আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করে আমি সুখী। আত্মরক্ষার তাগিদে জুডো শেখা ও এখন খেলা আমার জীবনকে এভাবে পাল্টে দেবে, তা কখনো ভাবিনি।’