গোল করার আনন্দে উদ্বেল হিগুয়াইন


গোল করার আনন্দে উদ্বেল হিগুয়াইন। পরে একটি গোলও করিয়েছেন। ছবি: টুইটার
নিজে গোল করার পাশাপাশি একটি গোলও করিয়েছেন হিগুয়েইন।

চ্যাম্পিয়নস লিগে ‘জুভ’দের হয়ে কোনো ম্যাচে এই প্রথম গোল করার পাশাপাশি ‘অ্যাসিস্ট’ করলেন হিগুয়েইন।
জুভেন্টাসের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৭ ম্যাচে এ নিয়ে ৯ গোল করলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
গঞ্জালো হিগুয়েইন বড় ম্যাচের খেলোয়াড় নন। কথাটা কি পুরোপুরি সঠিক?
সর্বশেষ বিশ্বকাপ ফাইনালে হিগুয়েইনের সেই মিস এখনো পোড়ায় আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যারকে একা পেয়েও হিগুয়েইন বল মারলেন পোস্টের বাইরে! এরপর দুটি কোপা আমেরিকার ফাইনালেও তিনি সমর্থকদের ক্রুশবিদ্ধ হবেন। ক্লাব ফুটবলেও হিগুয়েইনের এমন মিস কম নেই।

২০১৪-১৫ মৌসুমে সিরি ‘আ’-তে নাপোলির সেই ম্যাচটা মনে আছে? লাৎসিওর বিপক্ষে ২-২ গোলে সমতায় থাকতে পেনাল্টি পেয়েছিল নাপোলি। হিগুয়েইন গোল করতে পারলে জয় দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা নিশ্চিত করতে পারত তারা। কিন্তু হিগুয়েইন পারেননি। নাপোলি ভক্তরাও তাঁকে ক্ষমা করতে পারেনি। ক্লাব ছেড়ে জুভেন্টাসে যাওয়ার পরও হিগুয়েইন এখনো নাপোলি সমর্থকদের চোখের বালি!

কিন্তু সেই হিগুয়েইনই এখন তুরিনের ‘ওল্ড লেডি’দের চোখের মণি। কাল রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলোর ফিরতি লেগের কথাই ধরুন, ১-০ গোলে পিছিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করেছিল জুভেন্টাস। প্রথম লেগ ২-২ গোলে ড্র করায় দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল ‘জুভ’রা। ফিরতি লেগ শেষে এই স্কোরলাইন থাকলে জুভেন্টাসের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যেত। কিন্তু বিরতির পর জুভেন্টাসকে বলতে গেলে একাই শেষ আটে তুলেছেন হিগুয়েইন, সেটাও আবার তিন মিনিটের ‘ম্যাজিক’-এ! হিগুয়েইনের প্রতি এত দিন বীতশ্রদ্ধ ফুটবলপ্রেমীদের চোখে চোখ রেখে ‘জুভ’ সমর্থকেরা কিন্তু বলতেই পারেন, কে বলেছে চাপের মুহূর্তে হিগুয়েইন পারে না! হিগুয়েইন পারেন। সেটা তিনি করেই দেখালেন।

৬৪ মিনিটে আক্রমণের শুরুটা করেছিলেন মেদহি বেনাশিয়ার বদলি হিসেবে মাঠে নামা স্টেফান লিখস্টেইনার। ডান প্রান্ত থেকে ভাসানো ক্রস বাড়ান টটেনহামের বক্সে। সামি খেদিরা তা হেড করে পাঠান বাঁ প্রান্তে। বলটা ঠিক কোথায় পড়বে হিগুয়েইন যেন তা আগেই থেকেই জানতেন! শূন্যে ভাসা বলকে পায়ের আলতো টোকায় পাঠালেন জালে। গোল!

ঠিক তার ২ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড পরই হিগুয়েইন বনে গেলেন নিখাদ প্লে-মেকার! মাঝমাঠের সামনে থেকে একটু এগিয়ে গিয়েছিলেন। গায়ের সঙ্গে লেপ্টে ছিলেন টটেনহামের এক ডিফেন্ডার। ছিটকে ফেলতে পারবেন না বুঝতে পেরেই হয়তো তাকালেন সামনে। টটেনহাম রক্ষণভাগের শেষ সীমায় দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে ততক্ষণে দৌড় শুরু করেছেন পাওলো দিবালা। কী করতে হবে তা বুঝতে হিগুয়েইনের এতটুকু সময় লাগেনি। একেবারে ডিফেন্স চেরা পাস! গোলের বাকি আনুষ্ঠানিকতাটুকু সেরেছেন দিবালা।

জুভেন্টাসের এ ম্যাচকে দুই আর্জেন্টাইনে রাঙানো বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না। তবে হিগুয়েইন যে এ জয়ের ‘নিউক্লিয়াস’ তা গোল দুটিতেই প্রমাণিত। জুভেন্টাসের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৭ ম্যাচে এ নিয়ে ৯ গোল করলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। টটেনহামের বিপক্ষে বল পেয়েছেন ৪৪ বার, কেড়েছেন ১ বার, গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন ২বার—মজার ব্যাপার হলো, ম্যাচের নিজেদের প্রথম দুটি শট থেকে দুই গোল পেয়েছে জুভেন্টাস, যেখানে হিগুয়েইন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

চ্যাম্পিয়নস লিগে জুভেন্টাসের হয়ে এই প্রথমবারের মতো কোনো ম্যাচে গোল করার পাশাপাশি গোলেও সহায়তা দিলেন হিগুয়েইন। সেটাও আবার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচে, যেখান থেকে ‘জুভ’রা ছিটকে পড়তে পারত। কিন্তু হিগুয়েইন তা হতে না দেওয়ায় তুরিনে সবার কাছে এই আর্জেন্টাইন এখন দারুণ প্রিয়।
জুভেন্টাসের হয়ে এই ম্যাচটির পর ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালের কথা যে খুব করেই মনে পড়ছে আর্জেন্টাইনদের!