আজ সংবর্ধিত হচ্ছেন তিন খ্যাতিমান
আমাদের সময়ের বর্ষপূর্তিতে বাংলাদেশের তিন ক্ষেত্রে তিন খ্যাতিমানকে আজ সংবর্ধিত করা হবে। তারা হচ্ছেনÑ শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা এবং ক্রিকেটের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আমাদের সময় কার্যালয়ের আম্রকাননে আড়ম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের সম্মাননা প্রদান করা হবে। আমাদের সময়ের পরিচালনা পর্ষদ খ্যাতিমানদের এ সম্মাননা দেবে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে। কল্যাণময় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এক নিরলস সাধক তিনি। শ্রেণিবৈষম্যহীন সমাজ তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন। তার লেখালেখি, আদর্শ ও সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনাÑ সব ছিল এক সুতোয় বাঁধা। তিনি মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বিরামহীন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালের ২৩ জুন মুন্সীগঞ্জে। কর্মজীবনের প্রায় পুরোটা সময় ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকতা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
লেখালেখিতে তিনি বেছে নিয়েছিলেন প্রবন্ধকে। মননশীলতার দরজায় আঘাত করে মানুষের ভেতরের মানুষকে জাগিয়ে দিতে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। সমাজসচেতনতার চোখ দিয়ে দেখে তিনি সতর্কভাবে জাতিসত্তার উন্নতির কল্যাণে কাজ করেছেন। ব্যবহার করেছেন কলম। লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন তার চিন্তা। তার লেখালেখির বলয় ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার, রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার ক্রমপরিবর্তন। এ শিক্ষাবিদের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছেÑ জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি : ১৯০৫-১৯৪৭, উপরকাঠামোর ভেতরেই, রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি, দুই যাত্রায় এক যাত্রী, শেক্সপীয়রের মেয়েরা, লিও টলস্টয় : অনেক প্রসঙ্গের কয়েকটি, দুই বাঙালীর লাহোর যাত্রা, স্বাধীনতার স্পৃহা সাম্যের ভয়, বিচ্ছিন্নতার সত্য-মিথ্যা, রাষ্ট্র ও কল্পলোক, মাঝখানের মানুষেরা, কত মূল্য লইবে ইহার, উপনিবেশের সংস্কৃতি, নেতা জনতা ও রাজনীতি, লেনিন কেন জরুরী, বাঙালীর জয়-পরাজয়, ১৮৫৭ এবং তারপর, কালের সাক্ষী।
সম্পাদনা করেছেনÑ ত্রৈমাসিক নতুন দিগন্ত। পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছেÑ লেখক সংঘ পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আবদুর রহমান চৌধুরী পদক, লেখিকা সংঘ পদক, মাহবুবউল্লাহ ফাউন্ডেশন পদক, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, আবদুল রউফ চৌধুরী পুরস্কার, শেলটেক পদক।
রুনা লায়লা
বাংলাদেশের সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা পাচ্ছেন রুনা লায়লা। ছয় বছর বয়সেই শিল্পী রুনা লায়লার জন্ম হয়। মাত্র সাড়ে ১১ বছর বয়সে পাকিস্তানের ‘জুগনু’ ছবির মাধ্যমে প্লেব্যাকে যাত্রা শুরু তার। ১৯৭৪ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। ছবির নামÑ ‘এক ছে বারকার এক’। একই বছর প্রয়াত সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ ছবিতে গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন। গানের কথা ছিল ‘ও জীবন সাথী তুমি আমার’। এ গানে তার সঙ্গে কণ্ঠ দেন খন্দকার ফারুক আহমেদ। এর পর থেকে দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেন এই শিল্পী। তিনি গান গেয়েছেন বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দি, সিন্ধি, গুজরাটি, বেলুচি, পশতু, পার্সিয়ান, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, ইতালীয় ও ইংরেজি ভাষায়। অসংখ্য গান গেয়েছেন বাংলা, হিন্দি ও উর্দু চলচ্চিত্রে। গেয়েছেন কালজয়ী অসংখ্য দেশের গানও।
১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তি এ শিল্পী। এমদাদ আলী ও আমিনা লায়লার কন্যা রুনা লায়লা। তার বোন দীনা লায়লা ও ভাই সৈয়দ আলী মুরাদ। বিয়ে করেন খ্যাতিমান চিত্রনায়ক আলমগীরকে।
পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কারও। একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। ছোট-বড় অন্যান্য পুরস্কারও আছে তার ঝুলিতে। ভারত থেকে পেয়েছেন সায়গল পুরস্কার। পাকিস্তান থেকে পেয়েছেন নিগার, ক্রিটিক্স, গ্র্যাজুয়েটস পুরস্কারসহ জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক।
অর্জনের জায়গায় বাকি কিছুই নেই রুনা লায়লার। তার বিখ্যাত গান ‘দামা দাম মাস্ত কালান্দার’ এখনো উপমহাদেশের বিখ্যাত গানগুলোর একটি, যা এখনো সব রিয়ালিটি শোয়ে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা গেয়ে থাকেন।
সাকিব আল হাসান
খেলাধুলায় বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা পাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। সাকিবের বাবা ছিলেন ফুটবলভক্ত। কিন্তু তার সন্তান পছন্দ করতেন ক্রিকেট ব্যাট আর বল। ভাগ্যিস বাবা তাকে নিজের পছন্দ চাপিয়ে দেননি। ছেলের মতো করে চলতে দিয়েছিলেন। ভর্তি করেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে। না হলে হয়তো দেশ পেত না অপার নির্ভারের এক ক্রিকেটারকে, আর পৃথিবী পেত না তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে সমকালের সেরা অলরাউন্ডারকে।
২০০৬ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে নাম লেখান সাকিব আল হাসান। ওই বছরই টি-টোয়েন্টিতেও নাম লেখান তিনি। পরের বছর টেস্টেও অভিষেক হয় তার।
এর তিন বছর পরই ২০০৯ সালে একমাত্র বাংলাদেশি অলরাউন্ডার ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ের শীর্ষে উঠে আসেন সাকিব। এর পর আসেন টেস্টেও। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই সেরা অলরাউন্ডার হন। বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য যা এক দারুণ গৌরবের বিষয়।
খেলছেন পৃথিবীর সর্বত্রই ফ্রাঞ্চ্যাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টিতে। এর মধ্যে রয়েছেÑ কলকাতা নাইট রাইডার্স, ওরচেস্টারশায়ার, ঢাকা গ্লাডিয়েটরস, লিচেস্টারশায়ার, বার্বাডোজ ট্রাইডেন্ট, অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স। ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর সাকিব আল হাসান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী উম্মে আহমেদ শিশিরের সঙ্গে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেন। শিশির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক। পড়াশোনা করেন মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে।