পাকিস্তানে স্থায়ীভাবে বন্ধ হতে যাচ্ছে মার্কিন সামরিক সহায়তা
পাকিস্তানের ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে নতুন কৌশল নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো বহির্ভূত ‘গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের’ তালিকা থেকে বাদ দেয়া, স্থায়ীভাবে সামরিক সহায়তা বন্ধ ও সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে হোয়াইট হাউজ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের এক রিপোর্টে জানা গেছে এসব তথ্য। তবে ম্যাগাজিনটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ওপর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যেসব দিক বিবেচনা করছে সেগুলো নিয়ে ওয়াশিংটনের অভ্যন্তরীণ সার্কেলে জোর বিতর্ক চলছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা পাকিস্তানের ওপর আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী হলেও, অন্য একটি গ্রুপ এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে হোয়াইট হাউজকে। পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ডে মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছে বলে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে আফগান তালেবানরা পাকিস্তান থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে আফগানিস্তানের মাটিতে সহিংসতা ঘটায় বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। পাকিস্তান অবশ্য এ মার্কিন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে নাকচ করে দিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন চলছে এমন একটি সময়েই এই রিপোর্টটি প্রকাশিত হলো। আগ্রাসী মানসিকতার জন্য পরিচিত জন বোল্টনকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের জায়গায় বসানো হয়েছে সিআইএর প্রধান মাইক পম্পেওকে। ফরেন পলিসির রিপোর্টে ধারণা করা হয়েছে, এসব পরিবর্তনের ফলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার মাত্রা বাড়তে পারে। হোয়াইট হাউজের বর্তমান ও সাবেক ডেপুটিদের উদ্ধৃতি দিয়ে ম্যাগাজিনটি বলছে, ইসলামাবাদের ওপর কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। তার মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাষায় ‘ধ্বংসাত্মক তৎপরতা’র সাথে যুক্ত পাকিস্তানের এমন সরকারি ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই অঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন সেনা ও স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’ তার এই মন্তব্য পাকিস্তানের প্রতি মার্কিন নীতির পরিবর্তনের বিষয় প্রকাশ পেয়েছে। আগের মার্কিন প্রেসিডেন্টরা অবশ্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে বেশ দ্বিধান্বিত ছিলেন। তারা মনে করতেন সহায়তা কমালে পাকিস্তানের পক্ষে উচ্চপ্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে, যা দেশটির আফগান সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পারমাণবিক শক্তিধর দেশটিতে অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া আফগানিস্তানে শান্তিপ্রক্রিয়ার জন্য পাকিস্তানে সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনাদের একটি মর্যাদাকর প্রত্যাহারের পথ খুঁজছে। অবশ্য দেড় দশকের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে তেমন সুবিধা করতে পারেনি।