অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি ছাড়া প্রশাসনে কোনো পদ সৃষ্টি বা বিলুপ্ত করা যাবে না

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি ছাড়া প্রশাসনে কোনো পদ সৃষ্টি বা বিলুপ্ত করা যাবে না। শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ই নয়, সম্মতি নিতে হবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরও। এই বিষয়ে দেখাশোনা করবে একটি কমিটি। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক অতিরিক্ত সচিবকে। কমিটির জন্য তিন দফা কার্যপরিধিও ঠিক করে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক পরিপত্রে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘উল্লিখিত কমিটি পদ সৃজন (তৈরি), পদ স্থায়ীকরণ এবং সমজাতীয় প্রস্তাব অনলাইনে সাবমিশনের লক্ষ্যে একটি সফটওয়্যার তৈরির ব্যবস্থা নেবে। কমিটি প্রতি মাসে সার্বিক কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে এবং কমিটি প্রয়োজনবোধে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তাকে সদস্য হিসেবে কো-অপট করতে পারবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, এ কমিটি গঠনের ফলে সরকারের বিভিন্ন বিভাগে নতুন পদ সৃষ্টি, পদ স্থায়ীকরণসহ বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এর ফলে এক দিকে যেমন নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতনভাতা পাওয়া নিয়ে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হবে না, একই সাথে কাজে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/অধিদফতর/দফতর/সংস্থার পদ সৃষ্টি, বিলুপ্তি ইত্যাদি প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২০১৭ সালের ৮ মার্চ তারিখের ৫৩ নম্বর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘পদ সৃষ্টি, পদ স্থায়ীকরণ এবং জনবল নিয়োগ পদ্ধতি (রাজস্ব) প্রভৃতি সমজাতীয় কার্যক্রমকে আরো সহজতর করার লক্ষ্যে গঠিত কমিটি’র পদ্ধতির পরিবর্তে নতুন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সাথে নতুন নীতি অনুসরণেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এই নির্দেশনা অনুযায়ী, পদ সৃজন, বিলুপ্তি ইত্যাদির ক্ষেত্রে পৃথকভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের সম্মতি গ্রহণ করতে হবে। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগ থেকে প্রস্তাব প্রাপ্তির পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করে চেকলিস্ট অনুযায়ী কাগজপত্র/ তথ্যাদিতে কোনো ঘাটতি থাকলে অনধিক ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/ বিভাগকে অবহিত করতে হবে।

স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব প্রাপ্তির পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অনধিক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্মতি বা অসম্মতি জ্ঞাপন করবে। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর অর্থ বিভাগ প্রস্তাব পর্যালোচনা করে চেকলিস্ট অনুযায়ী কাগজপত্র/ তথ্যাদিতে কোনো ঘাটতি থাকলে অনধিক ৫ দিবসের মধ্যে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/ বিভাগকে অবহিত করবে।

পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব পাওয়ার পর অর্থ বিভাগ অনধিক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্মতি বা অসম্মতি জানাবে। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/ বিভাগ অর্থ বিভাগের সম্মতি গ্রহণ এবং বেতন স্কেল নির্ধারণের জন্য একই সাথে প্রস্তাব পাঠাবে। অর্থ বিভাগের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ/ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও বাস্তবায়ন অনুবিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একই স্মারকে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন এবং বেতন স্কেল নির্ধারণ করবে।

সচিব, অর্থ বিভাগ ব্যয় নিয়ন্ত্রণ/ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও বাস্তবায়ন অনুবিভাগের কার্যক্রম সমন্বয় করবেন। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/ বিভাগ প্রস্তাবের অনুলিপি এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের সম্মতির অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি পরিবীক্ষণ কমিটিতে পাঠাবে।

এই জন্য গঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব/ যুগ্মসচিব (সওব্য), অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব/ যুগ্মসচিব(ব্যয় নিয়ন্ত্রণ/র াষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান), অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব/ যুগ্মসচিব (বাস্তবায়ন) এবং অতিরিক্ত সচিব, প্রস্তাব প্রেরণকারী মন্ত্রণালয় /বিভাগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এই কমিটিকে একটি সফটওয়্যার তৈরি করতে বলা হয়েছে। এই সফটওয়্যার তৈরি করা হলে পদ তৈরি, স্থায়ীকরণ বিষয়ে পুরোটাই ডিজিটালাইজড হয়ে যাবে। এতে করে অনেক কাজ সহজ হয়ে যাবে। আমরা কম্পিউটার টিপেই দেখতে পাবো কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কত পদ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে বা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। পদ তৈরি ও বিলুপ্তি সাবমিশন কাজটিও অনলাইনে করা যাবে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে।