‘গেল টি-টোয়েন্টির দৈত্য, ম্যাচ জিতেছি, প্রাণ ভরে কলকাতার রসগোল্লা খাব আজ
ড্রেসিংরুমে ঢোকার মুখে প্রতিবেদকের অনুরোধে রাজি হয়ে গেলেন সাক্ষাৎকার দিতে। তারপরই ‘এবেলা খেলা’র মোবাইল ফোন রেকর্ডারে ধরা পড়ল ম্যাচ জেতার পর কিংস ইলেভেন পঞ্জাব মালকিনের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।
টম কুরানের ডেলিভারি গ্যালারিতে ওড়ালেন ক্রিস গেল। ইডেনের ‘বি’ ব্লকের চার নম্বর হসপিটালিটি বক্সের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জয়োল্লাসে মাতলেন তিনি। পরনে কালো কেপ্রি, কালো স্লিভলেস টি-শার্ট। মাথায় কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের ক্যাপ। পায়ে সাদা স্নিকার্স। ম্যাচ শেষ হতেই ছুটতে ছুটতে বেরলেন। লিফ্টের জন্য অপেক্ষা না করে সিঁড়ি দিয়েই দৌড়লেন। তিনি, প্রীতি জিন্টা। মাঠে গিয়ে গেল-কে. এল. রাহুলদের উষ্ণ আলিঙ্গন। ম্যাচের সম্প্রচারকারী চ্যানেলে প্রতিক্রিয়া দিলেন। ড্রেসিংরুমে ঢোকার মুখে প্রতিবেদকের অনুরোধে রাজি হয়ে গেলেন সাক্ষাৎকার দিতে। তারপরই ‘এবেলা খেলা’র মোবাইল ফোন রেকর্ডারে ধরা পড়ল ম্যাচ জেতার পর কিংস ইলেভেন পঞ্জাব মালকিনের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।
প্রশ্ন: কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে এরকম দাপট দেখিয়ে জয়। টিম মালকিন কতটা খুশি আজ?
প্রীতি জিন্টা: (দু’হাত তুলে চিৎকার করে উঠলেন, ইয়াহু) কী আর বলব ভাই। ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। অল হেল ক্রিস গেল। গেল ঝড় আছড়ে পড়ল ইডেনে। তবে ঝড় আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত। বাধ সাধল আসল ঝড়। তবে শুধু গেল নয়, দল হিসাবে আমরা খুব ভাল খেলেছি। গেল-কে. এল. রাহুলের ওপেনিং পার্টনারশিপ দারুণ জমে গিয়েছে।
প্রশ্ন: ক্রিস গেল প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েই বিধ্বংসী মেজাজে। কী বলবেন?
প্রীতি: গেলের পরিসংখ্যান দেখুন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১১ হাজার রান। এরকম রেকর্ড গোটা বিশ্বে আর কারও নেই। ও একটা শৃঙ্গ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দৈত্য। শুধু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কেন, সব ফর্ম্যাটেই। ওকে রানের জন্য এত ক্ষুধার্ত দেখতে ভাল লাগে। ওর আগ্রাসী ব্যাটিং দেখতে ভাল লাগে। তবে ব্যাট হাতে যতই আগ্রাসী হোক না কেন, ও খুব নম্র দৈত্য। ওর সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায়, সব সময় ভীষণ শান্ত। ভীষণ মিষ্টি। সব সময় হাসিখুশি থাকে। প্রথম দুই ম্যাচ খেলেনি। এত বড়় তারকা হওয়া সত্ত্বেও কোনও অভিযোগ করেনি। একটা কথাও বলেনি। আমি দলের তরুণদের এটাই বলেছি যে, গেলকে দেখে শেখো। এত বড় তারকা হওয়া সত্ত্বেও প্রচুর দানধ্যান করে। এক কথায় অসাধারণ মানুষ।
প্রশ্ন: নিলামে প্রথমদিন অবিক্রিত ছিলেন গেল। কিংস ইলেভেন পঞ্জাব দ্বিতীয় দিনের শেষ লগ্নে বেস প্রাইসে কিনে নিয়েছিল। এখন যেভাবে ব্যাট হাতে জবাব দিচ্ছেন, কতটা খুশি?
প্রীতি: আমরা ভীষণ, ভীষণ, ভীষণ খুশি। নিলামে আমাদের স্ট্র্যাটেজি একটু অন্যরকম ছিল। সেই কারণেই শুরুতে ওর জন্য ঝাঁপাইনি। কারণ আমাদের ভারতীয় ব্যাটসম্যান দরকার ছিল। সেই জায়গাটা আগে পূরণ করার দরকার ছিল। দ্বিতীয় দিন জানতে পারলাম যে, গেলকে পাওয়া সম্ভব। ওর পরিসংখ্যান দেখুন। অনবদ্য। এত বড় মাপের ক্রিকেটার। আমরা তাই পরিকল্পনা পাল্টাই। একজন বোলার এবং একজন উইকেটকিপার নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে এসে গেলকে নিই। তবে গেল নিলামে অবিক্রিত থাকায় আমরাও অবাক হয়েছিলাম। আর আজ? একটাই শব্দ। ই...য়া...হু... (হাসি)। আমি ভীষণ খুশি।
প্রশ্ন: কিংস ইলেভেন পঞ্জাব মালকিনের ইডেন-জয়ের অনুভূতিটা কীরকম?
প্রীতি: এখানে ম্যাচ জিতে বেশি ভাল লাগছে কারণ, ইডেনে আমরা প্রচুর ম্যাচ হেরেছি। আজ ম্যাচ জিতেছি। এবার প্রাণ ভরে রসগোল্লা খাব (হাসি)।
প্রশ্ন: কলকাতায়, আর শুধু কলকাতায় কেন, গোটা ভারতবর্ষে এই ম্যাচটাকে বীর-জারার দ্বৈরথ হিসাবে দেখা হয়...
প্রীতি: (থামিয়ে দিয়ে) পৃথিবী উল্টে গেলেও বীর জারাকে এবং জারা বীরকে ভালবাসে। ভালবাসবে।
প্রশ্ন: শাহরুখকে কোনও বার্তা দেবেন? কারণ, এবার ওঁর দল হারল আর আপনার দল জিতল?
প্রীতি: যেবার আমরা কেকেআরের কাছে আইপিএল ফাইনাল হেরেছিলাম, শাহরুখ একটা লাল টি-শার্ট পরেছিল। যার অর্থ হল, আই লাভ শাহরুখ। ও বরাবরই আমার ভীষণ ভাল বন্ধু। ওকে খুব সম্মান করি। এটা তো একটা সামান্য ম্যাচ! খেলায় হার-জিত আছে। তবে চার বছর আগে ফাইনালে ও লাল টি-শার্ট পরে (কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের জার্সিও লাল রংয়ের) যে সৌজন্য দেখিয়েছিল, সেটাতেই প্রমাণ হয় শাহরুখ কত বড় মনের মানুষ। এবং আমি ওর বিরাট বড় ভক্ত। কারণ আমি যখন কেরিয়ার শুরু করেছিলাম ‘দিল সে’ সিনেমা দিয়ে, তখন ও সুপারস্টার ছিল। অভিনয়ের অর্ধেক জিনিস তো ওর কাছেই শিখেছি। আমি আজ ভীষণ খুশি। তবে আবার বলছি, ম্যাচে জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন, শাহরুখের প্রতি আমার ভালবাসা কমবে না। সেটা আগের মতোই অবিকৃত থেকে যাবে।