ক্রিকেট
আইপিএলে সেরা বোলারদের তালিকায় ওপরের দিকে সাকিব-মোস্তাফিজ
সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান
দুই টাইগার সাকিব-মোস্তাফিজের জন্য এবারের আইপিএল আসর যে বাংলাদেশীদের আগ্রহের কমতি থাকবে না- তা শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। কারণ ইনজুরি থেকে ফিরে ঝরঝরে ছিলেন সাকিব আল হাসান। আর ত্রিদেশীয় সিরিজ-নিদাহাস ট্রফিতে ছন্দেই ছিলেন মোস্তাফিজ। এই দুই বাংলাদেশী ক্রিকেটার শুরু থেকেই আইপিএলে নজন কাড়ছেন। এর সুবাদে শীর্ষ উইকেটশিকারীদের তালিকায় শুরুতেই নিজেদের জায়গা দখল করে নিয়েছেন। দুর্ধর্ষ সাকিব আছেন তিন নম্বরে। আর মোস্তাফিজ ছয়ে।
১১তম আসরে ইতোমধ্যে তিনটি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন সাকিব-মোস্তাফিজ। দু'জনেই শিকার করেছেন পাঁচটি করে উইকেট। তবে রান দেয়ার বিচারে তিন নম্বরে আছেন সাকিব। আর ছয়ে মোস্তাফিজ।
সাকিব ৭৮ রান দিয়ে নিয়েছেন পাঁচটি উইকেট আর মোস্তাফিজ ৮৮ রান দিয়ে একই সংখ্যক উইকেট তুলেছেন।
এই আসরে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে সাকিবের সেরা বোলিং ফিগার ২১ রানে দুই উইকেট। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে মোস্তাফিজ ২৪ রান দিয়ে শিকার করেছেন তিন উইকেট।
তালিকায় শীর্ষে আছেন মুম্বাইয়ের আরেক বোলার মায়ার মারকান্দি। দুইয়ে আছেন ক্রিস ওকস। দু'জনেরই সংগ্রহ সাত উইকেট।
এই আসরে এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীদের তালিকাটি দেখুন-
শাহরুখের ওপর প্রতিশোধ নিলেন সাকিবরা!
শনিবার রাত ৯টা ২০। তখনও ভর্তি ইডেন। বৃষ্টি হচ্ছে দেখেও কেউ মাঠ ছেড়ে যাননি। শাহরুখ খান আসেননি দেখেও কেউ বেরিয়ে যাননি।
এই হলো আইপিএল!
বৃষ্টিতে খেলা সাময়িক বন্ধ আছে তো কী, ক্রিকেট ছাড়াও যে অন্য বিনোদনের মঞ্চ রয়েছে। সকলের নজর চলে গেল স্কোরবোর্ডের নিচে নাইটদের বেগুনি রংয়ের মঞ্চে। সেখানে ডিজে বাজিয়ে দিয়েছেন সানি লিওনের ‘বেবিডল’। সেই গানের সঙ্গে নাচছেন দুই তরুণী। তাদের তালে তালে নাচছে গোটা ইডেন।
ক্রিকেটের টানটান উত্তেজনা থাকবে, সঙ্গে থাকবে বিনোদনের মোড়ক। এই হলো আইপিএল। অথবা নামকরণ করা যাক, রঙিলা আইপিএল। ঝোড়ো শুরু, রুদ্ধশ্বাস শেষ দৃশ্য— সব পাওয়া যাবে! ছক্কার বন্যা আছে। একঘেয়েমিতে ভোগার ভয় নেই। সারা দিন ধরে বসে থাকা নেই। মাঠে ক্রিকেটারদের অফুরন্ত প্রাণশক্তির মতোই গ্যালারি সারাক্ষণ টগবগে। ঝিমুনি আসবে না। পরিবার নিয়ে সকলে দিব্যি বসে আছেন রাতের ইডেনে যে, বৃষ্টি থামলে কখন আবার খেলা শুরু হবে? রাত বারোটা পেরিয়েও মাঠ ভর্তি।
যা অনেকটা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ঘরানা এবং স্বাদ এনে দিচ্ছে এ ভারতের ক্রিকেটে। ইংল্যান্ডে দুই ম্যাঞ্চেস্টার, চেলসি, লিভারপুল, আর্সেনাল, টটেনহ্যাম বা অন্যান্য ফুটবল দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মতো এখানেও কলকাতা, চেন্নাই, হায়দরাবাদ— তৈরি হয়ে যাচ্ছে শহর বনাম শহর, নতুন ক্রিকেট সভ্যতা।
বিলি স্ট্যানলেকের গতি আর নাইট সংসারের প্রাক্তন প্রতিনিধি সাকিব আল হাসানের বাঁ হাতি স্পিনের সামনে ১৩৮ রানের বেশি তুলতে পারল না নাইট রাইডার্স। কিন্তু অল্প রানের পুঁজি নিয়েও নাইটরা যখন বল করতে এলেন, ‘দ্বাদশ ব্যক্তি’ পেয়ে গেলেন তারা- ইডেনের গ্যালারি। শনিবার কোনো বিরাট কোহালিও ছিলেন না প্রতিপক্ষ দলে যে, আবেগের বিভাজন ঘটাবেন। এ দিন ইডেন মানে শুধুই ‘কে...কে...আর, কে...কে...আর!’
সেই গর্জনে বলিয়ান সুনীল নারাইন দুরন্ত প্রত্যাঘাত করে তুলে নিলেন দুই উইকেট। অন্য দিক থেকে ভারতীয় দলের তারকা স্পিনার কুলদীপ যাদব ফেরত পাঠালেন মণীশ পাণ্ডেকে। চায়নাম্যান (বাঁ হাতি কুলদীপের যেটা ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে গুগলি অর্থাৎ, বাইরের দিকে স্পিন করবে) ধরতে পারেননি মণীশ। কিন্তু যাকে কোহালি এবং স্টিভ স্মিথের সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ভাবা হচ্ছে, সেই কেন উইলিয়ামসন বাড়তে দিলেন না কুলদীপের রহস্য। ঠান্ডা মাথায় ম্যাচ বার করে দিলেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়কই (৪৪ বলে ৫০)।
তবু শেষ পর্যন্ত কলকাতা নাইট রাইডার্স সেই ‘কলকাতা ফাইট রাইডার্স’। হারতে পারি কিন্তু বিনা লড়াইতে হারব না। মিচেল জনসনরা শেষের ওভারগুলোতেও লড়ে গেলেন। মনে হচ্ছিল মুম্বই বনাম দিল্লি প্রথম ম্যাচটার মতোই আর একটা রুদ্ধশ্বাস পরিণতি অপেক্ষা করছে। একটা সময়ে ১৪ বলে ২০ রান। কয়েকটা ‘ডট বল’ (যে বলে কোনো রান হয় না) হলে, কে বলতে পারে, খেলা ঘুরবে না! কিন্তু না, হলো না। পাঁচ উইকেটে হারলেন নাইটরা।
ঋদ্ধিমান সাহা তার ঘরের মাঠে ১৫ বলে ২৪ রান করলেন। সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের (১৬০) জন্য পুরস্কার পেলেন। কিন্তু নাইটদের কাঁটা হয়ে বিঁধলেন তিন প্রাক্তন নাইট। সাকিব আল হাসান চার ওভারে ২১ রান দিয়ে দুই উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ম্যাচ জেতানো জুটি গড়লেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে। বাংলাদেশের জার্সি পরা কয়েক জনকেও দেখা গেল ইডেনে খেলা দেখতে এসেছেন। আন্দ্রে রাসেলকে স্কোয়ারকাটে পয়েন্টের উপর দিয়ে হেলায় ছক্কা মারলেন সাকিব। শটটা যেন চাবুকের মতো সেই সব কেকেআর কর্তার ওপর আছড়ে পড়ল, যারা তাকে ঢাকার প্রতিবেশী শহর থেকে চলে যেতে দিয়েছেন হায়দরাবাদে। পরে ইউসুফ পাঠান এসে পানি ঢেলে দিলেন সব আশায়। রাসেলের বলে বিশাল ছক্কা মেরে হায়দরাবাদকে জয়ের স্কোরে পৌঁছে দিলেন প্রাক্তন নাইট ইউসুফ। নাইট স্পিনারদের বল ‘গ্রিপ’ করতে অসুবিধা হলো ইডেনের শিশিরের জন্যও। শিশিরের কথা ভেবেই টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল হায়দরাবাদ।
শাহরুখ খানের একটা দুর্দশার ইতিহাস আছে প্রাক্তনদের হাতে ধাক্কা খাওয়ার। কেকেআরে থাকতে রান পাননি ক্রিস গেইল। উদ্বোধনী ম্যাচের ঝড় বাদ দিলে বিশেষ কিছু করতে পারেননি ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। নিজের সন্তানদের মতোই তাদের ভালোবেসেছেন শাহরুখ। দামি উপহার দিয়েছেন, বলিউড নায়ক-নায়িকাদের এনে পার্টি করেছেন। তাতেও সেরা খেলাটা বার করতে পারেননি। যেই নাইট রাইডার্স তাদের ছেড়ে দিলো, অন্যত্র গিয়ে দুরন্ত সব ম্যাচে জেতানো ইনিংস খেলেছেন গেইল-রা।
ইডেনে শনিবার তেমনই কাঁটা হয়ে বিঁধলেন প্রাক্তন নাইট ত্রয়ী। সাকিব, ইউসুফ ছাড়াও ছিলেন মণীশ পাণ্ডে। দুরন্ত ফিল্ডিংয়েই তিনি ধ্বংস করলেন কেকেআরকে। বৃষ্টির পরে ফের খেলা শুরু হতেই প্রথম ওভারে বিলি স্ট্যানলেকের বলে আউট নীতীশ রানা। ওটা অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার স্ট্যানলেকের উইকেট নয়, রানা আসলে কট অ্যান্ড বোল্ড মণীশ। পয়েন্টে পাখির মতো উড়ে গিয়ে তুলে নিলেন ক্যাচ।
একটু পরে যেটা করলেন, আরো অবিশ্বাস্য! বাউন্ডারি লাইনের উপর উড়ন্ত অবস্থায় বল ধরে মাঠের ভিতরে পাঠিয়ে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরার চেষ্টা করলেন। ক্যাচটা না ধরতে পারলেও বাঁচিয়ে দিলেন অবধারিত ছক্কা। চমকপ্রদ হচ্ছে, মণীশরা এভাবে ক্যাচ ধরাটা অনুশীলন করেন। এটা কোনো এক রাতের চটক নয়।
এটাই আইপিএলের দান। অবিশ্বাস্যকে তাড়া করা কোরো অঘটন নয়, বরং তারও মহড়া চলে এখানে!