তেলের শীর্ষ রপ্তানিকারক এখন যুক্তরাষ্ট্র
একসময় বিশ্বে জ্বালানি তেলের অন্যতম বড় আমদানিকারক ছিল যুক্তরাষ্ট্র, গড়ে তুলেছিল বিপুল মজুদও; কিন্তু শেল তেলের বিপুল সম্ভাবনা দেশটিকে এখন বিক্রেতায় পরিণত করেছে। গত বছর থেকে বিপুল শেল তেল উৎপাদনের কারণে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অশোধিত জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি অবশ্য জ্বালানি তেল আমদানিও করছে তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকার এ রপ্তানির ফলে একদিকে যেমন দেশটির অবকাঠামোগত পুনর্বিন্যাস ঘটছে তেমনি বিশ্বের পেট্রোলিয়াম বাজারেও পরিবর্তন ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে দৈনিক ১ কোটি ব্যারেলেরও বেশি তেল উৎপাদন করছে, যা রাশিয়ার পর সর্বোচ্চ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব।
শেল সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন নতুন খনন। ১৯৭০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ছিল; কিন্তু শেল তেল উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় দেশটি রপ্তানির সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশ্বের ৩৭ দেশে দৈনিক ১১ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি হয়। দেশটির তেল বাজারের সবচেয়ে বড় গন্তব্য কানাডা। তবে এর চেয়েও বেশি তেল যায় এশিয়ায়। যে অঞ্চলটি দীর্ঘ সময় থেকেই অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) ও রাশিয়ার জন্য একটি বৃহৎ বাজার ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের তেলের দ্বিতীয় বৃহৎ বাজার চীন। ভারতও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল তেল আমদানি করছে। তবে রপ্তানি শুরু করলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিপুল তেল আমদানি করে। এক দশকে দেশটির তেল আমদানি ১ কোটি ব্যারেল থেকে কমে হয়েছে দৈনিক ৮০ লাখ ব্যারেল।
যুক্তরাষ্ট্রের তেল আমদানির কারণ হচ্ছে—তাদের তেল পরিশোধন ক্ষেত্রগুলো হালকা অশোধিত তেলের জন্য ডিজাইন করা হয়নি, যা শেল তেলের খনি থেকে আসে। ফলে কানাডা, মেক্সিকো বা ভেনিজুয়েলার মতো দেশগুলো থেকে এখনো ভারী অশোধিত তেল আমদানি করতে হয়। বিএনপি পরিবাসের অশোধিত তেল বিষয়ক সিনিয়র পরামর্শক হ্যারি চিলিঙ্গুইরিয়ান বলেন, শেল তেলের জন্য পরিশোধন ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা অনেক বেশি ব্যয়বহুল ও প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন। এর বিপরীতে সাধারণ অশোধিত তেল অনেক সস্তায় পাওয়া যায়, পরিশোধনও সুবিধাজনক। এ ছাড়া শেল তেলের জন্য একটি পরিশোধন ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠায় ৫ থেকে ৭ বছর লেগে যায়। ফলে চাইলেই সহজে এতে যাওয়া যায় না। মূলত এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এখনো বাইরের তেলের ওপর নির্ভর করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তেল রপ্তানি আরো ৪০ থেকে ৫০ লাখ ব্যারেল বাড়তে পারে, যা ইউরোপে রপ্তানি করা হবে। এএফপি।