ফ্রান্স সবাইকে জায়গা দিতে পারবে না: মাখোঁ

অভিবাসন নিয়ে কঠোর অবস্থানে থাকা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ‘ফ্রান্স সবাইকে জায়গা দিতে পারবে না।’ জাতিসংঘের অধিবেশনে এক ভাষণে মাখোঁ বলেছেন, ‘ফ্রান্স সবার প্রতি আতিথেয়তা দেখাতে চায়। কাজেই, ভালোভাবে আতিথেয়তা করতে চাইলে সবাইকে জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে না।’
নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আজ বুধবার এ কথা জানান এমানুয়েল মাখোঁ। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাখোঁ তাঁর ইশতেহারের দ্বিতীয়ার্ধে অভিবাসন বিষয়ে এক কঠোর বাক্যের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সরকারকে অবশ্যই ভোটারদের কট্টর ডানপন্থার দিকে ধাবিত করা বন্ধ করতে হবে।
মাখোঁ উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেছেন, এ সমস্যা সমাধানে আরও কঠোর ইউরোপীয় সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘ইউরোপে পর্যাপ্ত সহযোগিতা নেই। আমাদের এই অভিবাসী সমস্যা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।’
অভিবাসন নীতি নিয়ে আগামী সপ্তাহে বড় পরিসরে বিতর্কের আয়োজন করছে ফরাসি পার্লামেন্ট। সোমবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এবং বুধবার সিনেটে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। এ আলোচনার আগেই নিজের মতামত জানিয়ে দিলেন এমানুয়েল মাখোঁ।
২০২২ সালে প্রথম মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া ফরাসি প্রেসিডেন্ট তাঁর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যাপারে বেশ সচেতন। মেরিন লা পেন এবং তাঁর কট্টর ডানপন্থী ন্যাশনাল র‍্যালি পার্টি অভিবাসন বিরোধী অবস্থান নিয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দূরে রাখতে এবার মাখোঁ বলেছেন, ‘সবাইকে যথাযথভাবে স্বাগত জানানোর মতো আকর্ষণীয় কোনো দেশ হওয়া আমাদের উচিত হবে না।’

অভিবাসীদের জন্য রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা দেখতে চান উল্লেখ করে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের সহায়তা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া ‘অসম্ভব’ হবে।
ফ্রান্স বরাবরই অভিবাসনের দেশ ছিল উল্লেখ করে মাখোঁ বলেন, ‘অভিবাসনের প্রশ্নটিকে নিষিদ্ধ বা সংকট সামনে চলে এলে উপস্থাপন করার মতো কিছু বললে ভুল হবে।’
২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট প্রচারণার সময় মাখোঁ এক কোটি শরণার্থী গ্রহণ করার ক্ষেত্রে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের উন্মুক্ত দ্বার নীতিকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। মাখোঁ বলেছিলেন, ‘এটি আমাদের সম্মিলিত মর্যাদা রক্ষা করেছে।’
তিনি বলেন, ফ্রান্সে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে এখন দুটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। একটি হলো, যত দ্রুত সম্ভব ফ্রান্সে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে এমন ব্যক্তিদের জায়গা দেওয়া। অপরটি, ফরাসি ভাষা শিখিয়ে কর্মসংস্থান নীতির মাধ্যমে আরও কার্যকরভাবে তাদের সংহত করা।
তবে মাখোঁ বলেছেন, যারা অবৈধভাবে ফ্রান্সে প্রবেশ করেছেন তাদের ‘আরও দক্ষতার সঙ্গে’ সরিয়ে নেওয়া দরকার। বর্তমান প্রক্রিয়াগুলো যেন খুব দীর্ঘস্থায়ী হয় তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন তিনি।
ফ্রান্স গত বছর এক লাখ ২২ হাজার ৭৪৩ জন শরণার্থীর আবেদন গ্রহণ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ২০১৭ সালের তুলনায় এ আবেদন সংখ্যা প্রায় ২২ শতাংশ বেশি।