প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে নতুন কিছু পদ্ধতি আসছে এইচএসসিতে
পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আগামী ২ এপ্রিল শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা।
লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে আগামী ১৩ মে।
আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের কোন সেটে পরীক্ষা হবে, তা নির্ধারণ করা হবে পরীক্ষার কেন্দ্রে। ছাপা হওয়া প্রশ্নপত্রের সব সেটের প্যাকেট পরীক্ষা শুরুর আগ মুহূর্তে কড়া নিরাপত্তায় কেন্দ্রে পাঠানো হবে। আধা ঘণ্টা আগে নির্ধারিত প্রশ্নপত্রের সেট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে। তখন খোলা হবে প্রশ্নপত্রের মোড়ক।
পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে এ ধরনের আরও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ফাহিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে সেট নির্ধারণ একটা ভালো উদ্যোগ হতে পারে। কিন্তু শুধু কেন্দ্রের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। অতীতে বিভিন্ন সময় কিছু কিছু কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র বাইরে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য তিনি কেন্দ্র নির্ধারণে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।
সদ্য শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণাসহ এক ডজন সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পারেনি সরকার। ১৭ দিন লিখিত পরীক্ষা ছিল। এর মধ্যে ১২ দিনে আবশ্যিকসহ ১২টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, যা প্রশ্নপত্র ফাঁসের রেকর্ড।
এ রকম অবস্থায় আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় যাতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো ঘটনা না ঘটে, সে জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আগামী ২ এপ্রিল শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে আগামী ১৩ মে।
বর্তমানে সরকারি মুদ্রণালয়ে (বিজি প্রেস) দুই সেট প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে পরীক্ষা শুরুর কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে ট্রেজারিতে পাঠানো হয়। এরপর পরীক্ষার তিন দিন আগে সেসব প্রশ্নপত্র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে উপজেলায় পাঠানো হয়। সাধারণত থানায় প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক রাখা হয়। প্রশ্নপত্রের কোন সেটে পরীক্ষা হবে, তা (কোড) পরীক্ষার দিন সকালে ইউএনওকে জানানো হয়। সে অনুযায়ী ইউএনও বা তাঁর প্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট অন্যদের উপস্থিতিতে প্রশ্নপত্রের যে সেটে পরীক্ষা হবে, শুধু সেগুলোর প্যাকেট কেন্দ্রে পাঠান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সদ্য শেষ হওয়া এসএসসিসহ আগের কয়েকটি পাবলিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতায় তাঁরা জেনেছেন, কিছু কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। অসাধু কিছু শিক্ষক মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি করে থাকতে পারেন। কিন্তু তখন আর সেট পরিবর্তন করার সুযোগও থাকে না। এ জন্যই এবার প্রশ্নপত্রের সব সেট কেন্দ্রে পাঠিয়ে তারপর পরীক্ষার সেট নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁরা বলছেন, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আধা ঘণ্টা আগে সব পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে প্রবেশের পর দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রশ্নপত্রের কোন সেটে পরীক্ষা হবে, তা জানবেন। এই অবস্থার মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে বিকল্প সেটে পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ থাকবে। সদ্য শেষ হওয়া এসএসসির শেষের দু-একটি বিষয়ে সৃজনশীল অংশের প্রশ্নপত্রের সেট এভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আগের নিয়মানুযায়ী বিজি প্রেসে এখন প্রতি বিষয়ে দুই সেট প্রশ্নপত্র ছাপার কাজ চলছে। কোনো কোনো শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নপত্র ছাপার কাজ শেষও হয়েছে। এ অবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। তবে শুধু প্রশ্নপত্রের বহু নির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) অংশের আরও একাধিক সেট ছাপানো যায় কি না, সেটা নিয়ে তাঁরা চিন্তা করছেন।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন তাঁর কার্যালয়ে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন। কমপক্ষে আরও এক সেট প্রশ্নপত্র ছাপা যায় কি না, সে বিষয়ে তাঁরা চেষ্টা করছেন।
পুরো বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মন্তব্য করেন, পড়াশোনার জায়গাটা অন্তঃসারশূন্য হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষাপদ্ধতি ও প্রশ্নফাঁস নিয়ে এত