উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ গেছে এই তিনজনেরই।

উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ গেছে এই তিনজনেরই।
একই সঙ্গে মেয়ে, জামাই ও নাতির মৃত্যু। এত বড় শোক সংবাদ কোন বাবা সইতে পারেন! তাই অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা সাবেরুল হককে খবরটা প্রথমে জানানো হয়নি। কিন্তু বাবার মন তো! আঁচ করতে পেরেছিলেন—অঘটন কিছু ঘটবে। কয়েক দিন ধরেই মনটা বড় ছটফট করছিল। শোকের খবরটা পেলেন আজ মঙ্গলবার সকালে।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে মারা গেলেন তাঁদের মেয়ে সানজিদা হক, মেয়েজামাই মো. রফিক জামান ও ছোট্ট অনিরুদ্ধ জামান। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ গেছে তিনজনেরই।

সাবেরুল হক থাকেন যশোর সদর উপজেলার নতুন উপশহরে। তিনি সানজিদা হকের বাবা। ছোট্ট অনিরুদ্ধের নানা।

সানজিদার মা সাবেরুল হকের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা মারা গেছেন দুই বছর আগে। সানজিদার দুই ভাইও ঢাকায় থাকেন। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যশোরের ওই বাড়িতে থাকেন সাবেরুল। আজ মঙ্গলবার সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, একটি ঘরে সাবেরুল হক বসে আছেন। ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন। প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সান্ত্বনার ভাষা কোথায়?

সাবেরুল হক বলেন, ‘আমার আর কিছুই রইল না। রাতেই আমার মন বলছিল—কিছু একটা হয়েছে। মনের মধ্যে অস্থিরতা ছিল। কিন্তু কেউ আমাকে কিছু জানায়নি।’ তিন দিন আগে মোবাইলে মেয়ে ও নাতির সঙ্গে কথা হয়েছে জানালেন। নানাকে নাতি জানিয়েছিল, নেপালে যাচ্ছে। সে কী খুশি তার! ১৬ মার্চ দেশে ফেরার কথা। ফিরে এসে অনিরুদ্ধ নানাবাড়িতে যাবে বলেছিল। সাবেরুল হক বলেন, ‘সেই আসা আর হলো না। শেষ দেখাও হলো না।’

ছয় দিন ধরে ঘুমাতে পারছিলেন না সাবিরুল। শরীরে না মনে অস্থিরতা, বুঝতে পারছিলেন না। মনে হচ্ছিল, কোথাও কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে।

সানজিদার চাচাতো ভাই মুস্তাক আহমেদ বলেন, ‘চাচা অসুস্থ। মেয়েজামাই ও নাতির মৃত্যুর খবর সইতে পারবেন না। এই ভয় থেকেই রাতে তাঁকে দুঃসংবাদটা জানানো হয়নি। লাশ শনাক্ত করতে নেপালে তাঁদের পরিবারের একজন গেছেন। লাশ ঢাকায় আনা হবে বলে জানালেন।

সানজিদা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজনের) প্রোগ্রাম অফিসার ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। তাঁর স্বামী রফিকুজ্জামান ঢাকায় ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একমাত্র ছেলে অনিরুদ্ধকে নিয়ে রাজধানীর শুক্রাবাদ এলাকায় থাকতেন তাঁরা।

অনিরুদ্ধকে নিয়ে গতকাল সোমবার ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজে করে নেপালে বেড়াতে যাচ্ছিলেন মা-বাবা। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের ঠিক আগমুহূর্তে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। শেষ পর্যন্ত পাইলট আবিদ সুলতানসহ ৫০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি।