মা আর নেই। আড়াই বছরের ইনায়া ইমাম হিয়ার তা বোঝার মতো অবস্থা এখনো হয়নি।

 মায়ের সঙ্গে ইনায়া। ছবি: নাবিলার ফেসবুক থেকে নেওয়া
মা আর নেই। আড়াই বছরের ইনায়া ইমাম হিয়ার তা বোঝার মতো অবস্থা এখনো হয়নি। তাই বলে সন্তানের মাকে মনে পড়বে না, তা কি হয়? কিছুক্ষণ পর পরই মায়ের কথা মনে পড়ে ইনায়ার। এক ঘর থেকে আরেক ঘরে খুঁজে ফেরে মা। ক্ষণে-ক্ষণে মায়ের জন্য কাঁদে ছোট্ট শিশুটি। আবার ভুলে গিয়ে বাসার এর ওর কোলে চড়ে, কখনো খেলায় মেতে ভুলে থাকে মাকে।
নেপালে ইউএস-বাংলা উড়োজাহাজ (বিএস-২১১) বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ইনায়ার মা কেবিন ক্রু শারমিন আক্তার (ফেসবুকে নাবিলা ফারহিন নামে পরিচিত) নিহত হয়েছেন।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পর পারিবারিক ভুল বোঝাবুঝির কারণে কিছু সময়ের জন্য পুলিশের কাছেও থাকতে হয়েছে হিয়াকে। পরে গত মঙ্গলবার পুলিশ ইনায়াকে তার দাদির কাছে দেয়। তারপর থেকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়ায় দাদির বাসাতেই সে আছে।

উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার খবরের পরপরই ইনায়ার দাদি উত্তরায় শারমিনের বাসায় গিয়ে তালাবদ্ধ দেখতে পান। কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না। তখন রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় জিডি করা হয়। পরে পুলিশ ইনায়াকে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে উদ্ধার করে দাদির কাছে দেয়।

কেবিন ক্রুর দায়িত্ব পালনের সময় বাসায় কাজের মেয়ের কাছে থাকত ইনায়া। আবার ইনায়াকে নানি বা দাদির বাসায়ও রেখে যেত শারমিন। দুর্ঘটনার দিন বাসায় কাজের মেয়ের কাছেই ছিল সে। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর এক আত্মীয় বাসা থেকে ইনায়াকে নিজের বাসায় নিয়ে যান।

ওই দিন ইনায়ার স্বামী ভারতে ছিলেন বলে পরিবার থেকে জানানো হচ্ছে।
ইনায়ার চাচি ফাতেমা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আড়াই বছরের বাচ্চা, তেমন কিছু তো বোঝে না। হঠাৎ হঠাৎ মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য কাঁদতে থাকে। আবার ভুলে যায়।’ ফাতেমা জানান, বাসায় ইনায়াই সবার ছোট। একেকজনের কোলে চড়ে, খেলে সময় কাটায়।

গত সোমবার দুপুরে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। এতে চারজন ক্রুসহ ৭১ যাত্রী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৫১ জন নিহত হয়েছেন। যাত্রীদের মধ্যে ৩২ জন বাংলাদেশি। এঁদের মধ্যে ১০ জন আহত অবস্থায় নেপালের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই ফ্লাইটের চার ক্রুর সবাই মৃত বলে নিশ্চিত করেছেন ইউএস বাংলার ঢাকা কার্যালয়।

ইনায়ার চাচি ফাতেমা বলেন, শারমিনের স্বামী ইমাম হোসেন ও স্বামীর ভাই বেলাল হোসেন এখন নেপালে আছেন। শারমিনের মৃতদেহ এখনো চিহ্নিত করা যায়নি বলেও জানান তিনি।

এদিকে আজ সকালে ইউএস বাংলা একজন কর্মকর্তা নাখালপাড়ায় শারমিনের শ্বশুর বাড়ি যান। সেখানে এসে ওই কর্মকর্তা শারমিনের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের চান। কিন্তু শারমিন ওই বাসায় থাকতেন না। তিনি উত্তরায় আলাদা বাসায় থাকতেন। এ কারণে শারমিনের ব্যবহৃত কোনো কিছু ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া সম্ভব হয়নি।

ফাতেমা বলেন, শারমিন আলাদা বাসায় থাকায় তাঁদের কাছে কিছু নেই। ফাতেমাদের জানানো হয়, মৃতদেহ শনাক্তের জন্য শারমিনের মা বা মেয়ে ইনায়ার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হতে পারে।

দুর্ঘটনার পর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে আহত-নিহতদের কয়েকটি তালিকা দেওয়া দেয়। প্রথম দিকে দেওয়া এসব তালিকার আহত বা নিহত কোনো তালিকায়ই শারমিনের নাম ছিল না। পরে ইউএস বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাঁদের চারজন ক্রুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।