দলবদলের বিশ্ব রেকর্ড আপাতত নেইমারের দখলে। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের নাম নেইমার। ২২২ মিলিয়ন ইউরো বা ১৯৮ মিলিয়ন পাউন্ড খসিয়ে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে দলে টেনেছে পিএসজি। অর্থমূল্যে তাঁর ধারেকাছে আছেন শুধু একজন, সতীর্থ কিলিয়ান এমবাপ্পে। এ মৌসুম শেষেই এমবাপ্পের জন্য ১৮০ মিলিয়ন দেবে পিএসজি। কিন্তু খেলোয়াড় বেচাকেনার অঙ্কে এ দুজন বিশ্ব রেকর্ডের ধারেকাছেও নেই!
না, মজা করা হচ্ছে না। স্পেন কিংবা ফ্রান্স—দুই দেশেই মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয় ইউরো। ফলে নেইমারের জন্য খরচ করা অর্থকে টাকায় (দুই হাজার কোটির বেশি) কিংবা জিম্বাবুইয়ান ডলারে (প্রায় দশ হাজার কোটি) রূপান্তর করা যাচ্ছে না। খেলোয়াড়কে সে দেশে প্রচলিত অর্থেই কেনাবেচার রেকর্ড হিসাব করা হচ্ছে। আর সে হিসাবে নেইমার একদম তলানিতে পড়ে থাকবেন।
৮০ বিলিয়ন লিরায় ইন্টার মিলানে গিয়েছিলেন ভিয়েরি। ফাইল ছবি
৮০ বিলিয়ন লিরায় ইন্টার মিলানে গিয়েছিলেন ভিয়েরি। ফাইল ছবি
নেইমারের দলবদলের অঙ্ক লিখতে একক, দশক করে ৯ ঘর পর্যন্ত যেতে হয়। অথচ দাতসাকোর্ন থংলাওকে দেখুন, থাইল্যান্ডের এই মিডফিল্ডারকে বিক্রি করে ভিয়েতনামের ক্লাব হোয়াং আনহ পেয়েছিল ৩ বিলিয়ন ৭০০ মিলিয়ন ভিয়েতনামিজ ডলার (২ লাখ ইউএস ডলার)। তরুণ বয়সে বুন্দেসলিগায় খেলা সুযোগ পেয়েও দেশে ফেরা এই মিডফিল্ডার এখন হয়তো সে সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুশোচনা করেন। থংলাওর রেকর্ড অবশ্য পরের বছরই ভেঙেছেন ভিয়েতনামের ফুওক তু। তাঁর দলবদলের অঙ্ক লিখতে ১১ ঘর পর্যন্ত যেতে হচ্ছে। থানহ হোয়া থেকে তাঁকে কিনতে ১২ বিলিয়ন (১২০০ কোটি) ভিয়েতনামিজ ডলার দিয়েছিল জুয়ান থানহ ক্লাব!
অবশ্য এ দুজনের রেকর্ড দুই বছর পরেই ভেঙে দিয়েছেন আন্দ্রানিক তেইমৌরিয়ান। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা এই ইরানিয়ান মিডফিল্ডারকে ২০১৩ সালে কাতারের ক্লাব আল-খারাইতিয়াত দলে টেনেছিল এক বছরের জন্য। এ জন্য ইরানি ক্লাব এস্তেঘলাল এফসি পেয়েছিল ৩২ বিলিয়ন ৯০০ মিলিয়ন রিয়াল (১.৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার)।
সিরি ‘আ’ এসব রেকর্ড ভাঙা গড়ার খেলায় নেমেছে এরও এক যুগ আগেই। ইতালির হয়ে কখনো মাঠে নামা হয়নি নিকোলা ভেনতোলার। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতে এতটাই প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছিলেন যে তাঁকে বারি থেকে ৪০ বিলিয়ন ৬০০ মিলিয়ন লিরায় দলে টেনেছিল ইন্টার মিলান। পরের বছরই অবশ্য বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ক্রিশ্চিয়ান ভিয়েরিকে দলে টেনেছে ইন্টার। সারা বিশ্ব অঙ্কটা জানে ৪৯ মিলিয়ন ইউরো হিসেবে। তবে ইতালিয়ানদের চোখে অঙ্কটা ৮০ বিলিয়ন (৮ হাজার কোটি!) লিরা।
রোনালদোর আগে ফুটবলে দলবদলের বিশ্ব রেকর্ড মানেই জিদান। ফাইল ছবি
রোনালদোর আগে ফুটবলে দলবদলের বিশ্ব রেকর্ড মানেই জিদান। ফাইল ছবি
এ পর্যায়ে এসে হার্নান ক্রেসপো ঝামেলা বাধিয়ে দিচ্ছেন। পারমা থেকে লাৎসিও তাঁকে ৩৫ বিলিয়ন লিরা দিয়ে কিনেছিল। কিন্তু সেই সঙ্গে ম্যাথিয়াস আলমেইদা ও সার্জিও কনসেইকাওকে দিয়েছে তারা। এতে নাকি ক্রেসপোর আসল মূল্যটা দাঁড়িয়েছিল ১১০ বিলিয়ন লিরা! এ নিয়ে তর্ক করে সময় নষ্ট করতে না চাইলে জিয়েনলুইজি বুফনের দিকে নজর দেওয়া যাক। জুভেন্টাস যে তাঁকে ঠিক ১০০ বিলিয়ন লিরায় (১০ হাজার কোটি) ডেকে এনেছিল। অবশ্য সে অর্থটা ক্লাব পেয়েছিল জিনেদিন জিদানের সুবাদে। রিয়াল মাদ্রিদের কাছে জিদানকে বিক্রি করে ১৫০ বিলিয়ন লিরা জুটিয়েছে ‘তুরিনের বুড়ি’রা।
শেষ পর্যন্ত রেকর্ডটা তাহলে জিদানের কপালেই যাচ্ছে? উঁহু, সত্যি হলো ২০০০ সালে জিদান যখন বিশ্ব রেকর্ড করে রিয়ালে গেলেন, সে বছরই আরেকটি অদ্ভুত রেকর্ড গড়েছেন আরেকজন। ক্লাব ফুটবলে গোল মেশিন ডাকনাম পেয়ে গিয়েছিলেন মারিও জার্দেল। এফসি পোর্তো তাঁর জন্য ২৮ মিলিয়ন ডলার রিলিজ ক্লজ ধরেই নিশ্চিত ছিল। তুর্কি ক্লাব গ্যালাতাসারাই সে অর্থ পরিশোধ করে নিয়ে গেছেন জার্দেলকে। গ্যালাতাসারাইয়ের চোখে জার্দেলের মূল্য অবশ্য ছিল ১৭.৫ ট্রিলিয়ন তুর্কি লিরা (১ ডলার= ৬ লাখ ২৫ হাজার লিরা)!
এক বছর পরই অবশ্য সেটা উশুল করে নিয়েছে গ্যালাতাসারাই। পর্তুগালের আরেক ক্লাব স্পোর্টিং সিপির কাছে ৪২ ট্রিলিয়ন লিরায় বিক্রি করেছে তুর্কি ক্লাব। ডলারে অঙ্কটা মাত্র ২ মিলিয়ন বাড়লেও এক বছরেই ডলারের বিপক্ষে লিরার অবমূল্যায়নে (১ ডলার= ১৪ লাখ লিরা!) এমন অবিশ্বাস্য এক অঙ্ক দাঁড়িয়েছিল। জার্দেলকে বিক্রি করে গ্যালাতাসারাই যে চেক পেয়েছিল, সেটা লিরায় লিখতে গেলে ১৪ ঘর যেতে হতো স্পোর্টিংকে।