আগুনের গোলা হয়ে নেমে আসছে চীনা স্পেস ল্যাব
ঘণ্টায় ২৬ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি গতিবেগে সাঁই সাঁই করে ছুটে আসছে পৃথিবীর দিকে। আছড়ে পড়বে বলে।
যেহেতু তার উপর পৃথিবীর কোনো প্রান্তের কোনো গ্রাউন্ড স্টেশনেরই আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই ৮ টন ওজনের বেলাগাম চীনা মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (স্পেস ল্যাব) ‘তিয়াংগন-১’ কখন ঢুকে পড়বে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে, নিশ্চিতভাবে তা কারো পক্ষেই বলা সম্ভব হচ্ছে না।
এর আগে বার দু’য়েক সেই দিনক্ষণ বদলাতে বাধ্য হয়েছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ বা ‘এসা’)। এজেন্সির পক্ষ থেকে শেষ জানানো হয়েছিল, ওই অকেজো স্পেস ল্যাবটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকবে ৩১ মার্চ। কিন্তু সেই সময় পেরিয়ে গিয়েছে। রোববার ‘এসা’ জানিয়েছে, সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ২৫ মিনিট থেকে বিকালের মধ্যে যেকোনো সময় তা ঢুকে পড়বে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। একই কথা জানিয়েছে চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ম্যান্ড স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর অফিসও।
তবে আমাদের খুব একটা ভয় নেই বলে ‘এসা’র তরফে আশ্বস্ত করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, ঢুকে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওই প্রচণ্ড গতিবেগে ছুটে আসা স্পেস ল্যাবটির সঙ্গে সংঘর্ষ হবে বায়ুমণ্ডলের। তাতে সেটি পুরোপুরি ভষ্মীভূত হয়ে যাবে। তা দেখতে লাগবে অনেকটা উল্কাবৃষ্টির মতো।
তবে ওই জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাওয়া স্পেস ল্যাবের বিভিন্ন অংশ ছিটকে এসে পড়বে ৪৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৪৩ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে। মানে, নিউজিল্যান্ড থেকে মধ্য-পশ্চিম আমেরিকা (নর্থ ডাকোটা, কানসাস থেকে মিসৌরি, মিশিগান, ওহায়োর মতো ১০টি স্টেট) মধ্যে যেকোনো জায়গায়।
কক্ষপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছে চীনের পাঠানো মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র বা স্পেস ল্যাব ‘তিয়াংগন-১’। ওই চীনা স্পেস ল্যাবের সঙ্গে গ্রাউন্ড স্টেশনের সব যোগাযোগই ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ৪০ ফুট লম্বা ‘তিয়াংগন-১’ এখন আক্ষরিক অর্থেই, বেলাগাম। বিশৃঙ্খলও!
এর আগে চীনের ম্যান্ড স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অফিস জানিয়েছিল, স্পেস ল্যাবটি পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে ৪ তারিখের মধ্যে।
চীনা স্পেস ল্যাবটির আরেকটি নাম- ‘হেভেনলি প্যালেস’। চীন যে নিজেদের একটি মহাকাশ স্টেশন বানাতে চলেছে ২০২২ সালের মধ্যে, তার ‘প্রোটোটাইপ’ হিসাবে এই স্পেস ল্যাবটি উৎক্ষেপণ করেছিল ২০১১-য়। তবে ২০১৬-র মার্চ থেকেই ওই স্পেস ল্যাবের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে চীনের তরফে গত বছর জাতিসঙ্ঘকে জানানো হয়েছিল।
এর আগে ১৯৭৯ সালে নাসার স্পেস স্টেশন ‘স্কাইল্যাব’ ভেঙে পড়েছিল। আর ২০০১ সালে ভেঙে পড়েছিল রাশিয়ার ১৩৫ টন ওজনের ‘মির স্টেশন’।