মধ্যপ্রাচ্য
বিক্ষোভে উত্তাল গাজা, ইসরাইলি সেনাদের গুলি
নিজেদের বসতভিটায় ফিরে যাওয়ার অধিকার দাবিতে গাজা উপত্যকায় শুক্রবার চতুর্থ দফায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। এতে দখলদার ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে চার বিক্ষোভকারী নিহত ও সাত শতাধিক আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন, ১৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইব্রাহীম আইয়ুব, ২৪ বছরের আহমেদ রাশাদ, তার চেয়ে এক বছরের বড় আহমেদ আবু আখিল ও ২৯ বছর বয়সী আব্দুল মাজিদ আবদুল আল আবু তাহা।
১৯৪৮ সালে সসস্ত্র ইহুদি গোষ্ঠীর হামলায় সাত লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ বাঁচাতে বসতবাড়ি থেকে পালিয়ে বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হয়েছেন।
এসব শরণার্থীদের তাদের ভিটেমাটিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার দাবিতে ৩০ মার্চ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত প্রতি শুক্রবার সীমান্তে বিক্ষোভের ডাক দেয় ফিলিস্তিনিরা।
নিরস্ত্র মানুষদের এই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে ইসরাইলি স্নাইপারদের হামলায় এ পর্যন্ত ৩৯ জন নিহত ও চার হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
প্রাণঘাতি অস্ত্রের ব্যবহারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার পরেও নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর তাজা গুলি ছুড়ে যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছে ইসরাইল।
৭০ বছর আগে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ইসরাইল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিনিরা ওই দিনটিকে নাকবা বা বিপর্যয়ের দিন হিসেবে পালন করেন।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক ইতিহাসের সহযোগি অধ্যাপক মাহজুব জাওরি বলেন, ইসরাইল স্বাধীন প্রতিবাদ আন্দোলনকে ভয় পায়।
তিনি বলেন, এটা একেবারে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ। এসব মানুষ ফিলিস্তিনি নেতাদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। আর সেখানেই ইসরাইলের সবচেয়ে বেশি ভয়।
অধ্যাপক মাহজুব আরও বলেন, মিসরকে দিয়ে ইসরাইল একটা মধ্যস্থতা করতে চাচ্ছে। কিন্তু এটা একেবারে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের আন্দোলন। সেখানে কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই।
গ্রেট মার্চ অফ রিটার্নের মুখপাত্র আসাদ আবু শারিয়াক বলেন, এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইসরাইলের নৃশংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন হাসিল করা যাবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, আমরা দুনিয়ার মানুষকে জানাতে চাই, ফিলিস্তিনিদের অধিকার আছে। তারা নিজেদের বসতভিটায় ফিরে যেতে চায়।
আবু শারিয়াক বলেন, আমরা চাই বিশ্ব ইসরাইলের ওপর সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পাশাপাশি দেশটিকে বর্জন ও পরিত্যাগ করবে।
১৫ মে এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর কথা। সাম্প্রতিক ঘটনায় ইসরাইলের সেনাবাহিনী কোনো বক্তব্য দেয়নি। নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা করায় আন্তর্জাতিক মহল ইসরাইলের সমালোচনা করছে। কিন্তু ইসরাইল বলছে, তারা তাদের সীমান্ত রক্ষা করছে এবং বিক্ষোভকারীরা খুব কাছে চলে এলে তারা গুলি চালায়।
এ বছর ভূমি দিবস উপলক্ষে টানা ৬ সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। গত সপ্তাহে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভের থিম নির্ধারণ করা হয়েছিল ইসরাইলের পতাকা পোড়ানো। আর শুক্রবারের বিক্ষোভটি আগের বিক্ষোভে নিহতদের স্মরণে উৎসর্গ করা হয়। এদিন প্রায় ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি তাঁবু খাটিয়ে গাজা সীমান্তে অবস্থান নিয়েছেন। এ বিক্ষোভের আয়োজকরা বলছেন, ১৫ মের আগে এ বিক্ষোভ থামবে না।