প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি : জনপ্রশাসন সচিব

প্রশাসন
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি : জনপ্রশাসন সচিব
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছি। সরকার প্রধানের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়াটা এখন খুবই জরুরি। কবে নাগাদ প্রজ্ঞাপন জারি হবে সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে যথাসময়েই প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। এখনোই কোনো নিয়োগ হচ্ছে না, ফলে রাষ্ট্রেরও কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

কোটা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। সেই প্রজ্ঞাপনে কী থাকবে, প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিষয়টি কীভাবে থাকবে সেটি জানা যাবে এ সংক্রান্ত কমিটি গঠিত হওয়ার পর তারা যেভাবে বলবেন তার ওপর। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে তার বক্তব্যে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে বলেছেন, এটি কীভাবে কার্যকর হবে জানতে চাইলে সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, আমরা পুরো বিষয়েই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। তিনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই প্রজ্ঞাপন হবে। আমাদের পরবর্তী কাজ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়া। অনেকেই এ বিষয়ে নানা ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এটি অত সহজ বিষয় নয়। কিছুটা জটিলও। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর সবকিছুই কেটে যাবে। সব চাকরিতেই প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা কার্যকর হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সচিব বলেন, সেটি আমরা যখন প্রজ্ঞাপন জারি করব তখন হয়তো আরও বিশ্লেষণ করে পরিষ্কার করব। সেটি সরকারপ্রধান থেকে সুস্পষ্ট পরামর্শ ও নির্দেশনা পাওয়ার পরই আমরা ব্যবস্থা নেব।

এরআগে কোটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, আমরা সব সময় পরীক্ষার কাজ করি। সরকারি দফতর থেকে একটা কিছু বের হলে সেটা নিয়ে কেউ কথা বললে আরেকবার দেখি- কী কাজটা হলো, কেন কথাটা উঠেছে। সেটা চলছে, এখনও আমরা দেখছি। তিনি বলেন, আন্দোলন যেভাবে হয়েছিল, তাতে ৭ মে পর্যন্ত আল্টিমেটাম ছিল, তারপর আবার নতুন করে আন্দোলন হয়েছে। ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন ঘোষণাটা দেয়া জরুরি, তাই দিয়েছেন। আমি মনে করি পরবর্তী কাজ হলো, এখন আমাদের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করা। সেটা হলেই আমরা করে ফেলব। শুধু বিসিএসের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা বাতিল হলো কিনা- এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের এই সিনিয়র সচিব বলেন, এখানে টেকনিক্যাল অনেক ব্যাপার আছে। আপনাদের এগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বক্তব্য বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, উনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদধারী কর্মকর্তা। ওনার নির্দেশনা মাথায় রাখুন।

প্রসঙ্গত, কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। গত রোববার কোটা সংস্কারের দাবিতে তারা শাহবাগের সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয়। রোববার রাতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভেতর তছনছ এবং ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর গত সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে বসেন। বৈঠকে কোটা ব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পদক্ষেপ নেয়া হবে- এ আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেননি আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা মঙ্গল ও বুধবারও আন্দোলন চালিয়ে যান।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। এ অবস্থায় বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার ইস্যুতে প্রথমবারের মতো সরাসরি কথা বলেন। সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বলেন, ‘কোটা পদ্ধতিই বাতিল।