টরোন্টোর ভিড়ে গাড়ি চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা
কানাডার টরোন্টোতে দুপুরের ব্যস্ত রাস্তায় পথচারীদের ওপরে ভ্যান চালিয়ে দিয়ে দশজনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার দুপুরে এই হামলার ঘটনায় আরও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এ ঘটনাকে মর্মান্তিক এক কাণ্ডজ্ঞানহীন হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, হামলার ঘটনার পর কয়েক স্ট্রিট দূরে অ্যালেক মিনাসিয়ান নামের ২৫ বছর বয়সী এক সন্দেহভাজন তরুণকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
টরোন্টোর পুলিশ বিভাগের প্রধান মার্ক সন্ডার্স এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘটনার ধরন দেখে তারা নিশ্চিত, পথচারীদের ওপর ভ্যান তুলে দেওয়া হয়েছিল ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’। তবে হামলার কারণ তারা জানতে পারেননি।
কানাডার সবচেয়ে বড় শহর টরোন্টোর উত্তরাংশে যখন এই হামলার ঘটনা ঘটে, ঘড়িতে তখন বেলা প্রায় দেড়টা; অর্থাৎ দুপুরের খাবার সময়।
ফিঞ্চ এভিনিউ ও ইয়ঞ্জ স্ট্রিটের প্রায় দুই কিলোমিটার ফুটপাতে মানুষের মধ্যে দিয়ে সাদা রঙের ওই ভাড়া করা ভ্যান চালিয়ে নিয়ে যায় হামলাকারী।
ঘ্টনাস্থল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে শহরের কেন্দ্রে তখন উন্নত সাত দেশের জোট জি সেভেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক চলছিল।
ওই ভ্যানের পেছনে থাকা এক গাড়ির চালক স্থানীয় সিটি নিউজকে বলেন, সামনে যা পড়ছিল, সবকিছুকে দলে পিষে যাচ্ছিল ওই ভ্যান। মানুষ, পানির কল, ডাক বাক্স- কোনো কিছুরই পরোয়া করছিল না ওই ভ্যান চালক।
ওই পরিস্থিতিতে পেছন থেকে হর্ন বাড়িয়ে পথচারীদের সতর্ক করার চেষ্টা করেন পেছনের গাড়ির ওই চালক। তিনি জানান, ভ্যানের ধাক্কায় ছয় থেকে সাতজনকে উড়ে গিয়ে রাস্তায় পড়তে দেখেন তিনি।
ইয়ঞ্জ স্ট্রিটের ধারে একটি ভিডিও শপের মালিক রেজা হাশেমি বিবিসিকে বলেন, রাস্তার উল্টো দিক থেকে তিনি হঠাৎ মানুষের চিৎকার শুনতে পান। পরে সাদা রঙের ভ্যানটিকে ফুটপাতে পথচারীদের চাপা দিয়ে ছুটতে দেখেন।
বিবিসি লিখেছে, হামলার পর দীর্ঘ ওই পথ হলুদ ফিতা দিয়ে ঘিরে ফেলে পুলিশ। সশস্ত্র পুলিশ ও উদ্ধারকর্মীদের রাস্তার ওপরে আহতদের জরুরি চিকিৎসা দিতে দেখা যায়। কমলা রঙের বডি ব্যাগে করে লাশ তুলতে দেখা যায় অ্যাম্বুলেন্সে।
একটি মোড়ের কাছে জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। এক পাটি জুতা ফুটপাতে পড়ে থাকতে দেখা যায় হতাহতের চিহ্ন হয়ে।
সিবিসি টেলিভিশনে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি রাস্তা দূরে এক তরুণকে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। ওই তরুণ তখন পুলিশের দিকে কোনো একটি বস্তু তাক করে চিৎকার করে বলছিল- ‘কিল মি’।
পরে ওই তরুণকে পুলিশের জিম্মায় হতকড়া হাতে পড়ে থাকতে দেখা যায় ভিডিওতে। তাকে গ্রেপ্তার সময় গোলাগুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানানো হয় বিবিসির প্রতিবেদনে।
যে ভ্যানটি নিয়ে ওই হামলা হয়, সেটি রাইডার সিসটেম ইনকরপোরেশনের একটি ভাড়া গাড়ি। ওই প্রতিষ্ঠানও বিষয়টি নিশ্চিত করে কর্তৃপক্ষকে সব ধরনের সহযোগিতা করার কথা বলেছে।
গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ভিড়ের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে হামলার বেকশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে অক্টোবরে নিউ ইয়র্কে বাইসাইকেলের রাস্তায় ভ্যান চালিয়ে আটজনকে হত্যার ঘটনা ঘটে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেসব হামলার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি দল আইএস।