পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদীশাসনে বিপত্তি

পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদীশাসনে বিপত্তি
সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প পদ্মা সেতু। পদ্মার নদীশাসন কাজ নিয়ে বিপাকে পড়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। পর্যাপ্ত জমি অধিগ্রহণ না করার কারণে নদীশাসন কাজ আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন দিতে সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ ব্যাপারে লিখিতভাবে জানানো হয়েছেÑ যথাযথভাবে নদীশাসন করতে না পারলে মূল সেতু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। আর নদীশাসন অসম্পূর্ণ থাকলে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট প্রকল্প কাজ চালিয়ে নিতে অপারগতা প্রকাশ করতে পারে। তা ছাড়া সেতু নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে আপত্তি তুলবে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। তারা কোনো ধরনের বীমা করতে রাজি নাও হতে পারে। অন্যদিকে ঠিকারদারকে যথাসময়ে জমি হস্তান্তর করা সম্ভব না হলে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে। সেই সঙ্গে সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারও সেতুর স্থায়িত্বের গ্যারান্টি দিতে অপারগতা প্রকাশ করবে।

জানা গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের অধীনে নদীশাসনের জন্য অতিরিক্ত ১ হাজার ১৬২.৬৭ হেক্টর জমির জন্য আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা দরকার। অন্যথায় প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না বলে পরিকল্পনা কমিশনকে জানিয়েছে সেতু বিভাগ।
সরকারের এ মেগা প্রকল্পের মূল সেতুর নির্মাণকাজে ৫৯ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আর নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৩৬.৫০ শতাংশ। নদীশাসন কাজের জন্য নদী তীর বরাবর ২৮ মিটার গভীরতায় ড্রেজিং করে জিওব্যাগ, সিসি ব্লক ও রক ডাম্পিং করতে হয়। ড্রেজিং করার ফলে প্রায় ৬ কোটি ঘনমিটার বা ২১২ কোটি ঘনফুট ড্রেজিং স্পয়েল ফেলতে হবে। এটি পরিবেশসম্মতভাবে ফেলার উপযুক্ত স্থান নদীর চর। সেতুর ডিজাইন চলাকালে নদীর চরকে সম্ভাব্য স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়। কিন্তু পদ্মা সেতুর ডিপিপি প্রণয়নকালে নদীর চর, ডুবোচর ও খাস জমি বিবেচনায় ওই জমির পরিমাণ ও ব্যয় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পরে ওই চরগুলো পলি পড়ে উঁচু হওয়ায় সেগুলোকে ব্যক্তি মালিকানাধীন হিসেবে জেলা প্রশাসন স্বীকৃতি দেয়। ফলে ব্যক্তিমালিকানাধীন এসব জমি নতুন করে অধিগ্রহণ করতে হবে। যথাসময়ে অর্থ পরিশোধ না করলে অধিগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় মাওয়া প্রান্তে ভাঙন দেখা দেয় এবং জাজিরা প্রান্তে চর সৃষ্টি হয়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে এই অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ করতে বাড়তি টাকা দরকার। তা ছাড়া নদীশাসন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই অতিরিক্ত অর্থ অনুমোদন দিতে পরিকল্পনা মন্ত্রীকে আধা-সরকারি পত্র লিখেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
প্রকল্পকর্তারা বলছেন, এর আগে পরিকল্পনা কমিশনকে বিষয়টি জানানো হলে তারা একেকরকম ব্যাখ্যা চাইছেন তার জবাবও দেওয়া হয়েছে। তবু অতিরিক্ত বরাদ্দ অনুমোদন দিতে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। তাই মন্ত্রী ডিও দিয়েছেন। এ প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপিতে জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ১ হাজার ৫৩০.৫৪ হেক্টর। কিন্তু দেরিতে কাজ শুরুর কারণে নদীর গতি-প্রকৃতি পাল্টে যায়। ফলে দেখা দেয় অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণের প্রযোজনীয়তা। পরে ওই প্রস্তাবের ব্যাখ্যা জানতে পরিকল্পনা কমিশন থেকে চিঠি দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে সরকারের বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) একটি প্রতিনিধি দল। তবে তাদের সুপারিশে অতিরিক্ত ৯৩৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। অবশ্য আইএমইডির সাম্প্রতিক এ সুপারিশের সঙ্গে একমত না হয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রস্তাবিত জমির পরিমাণ কমানোর সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, ডিপিপি সংশোধন সময়সাপেক্ষ হওয়ায় জমির অধিগ্রহণজনিত ব্যয় বৃদ্ধির আগাম অনুমতি দিতে বলা হয়েছে।
এ নিয়ে প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামের বক্তব্য চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।