৩০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানে আসছে নতুন কর্মপরিকল্পনা

৩০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানে আসছে নতুন কর্মপরিকল্পনা

এই সরকারের শেষ বাজেট, তাই নতুন চমক রেখে চলছে সব কর্মকৌশল। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বেকার সমস্যাকে। নতুন করে আরও ৩০ লাখ মানুষকে কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে একটি কর্মপরিকল্পনাও তৈরি করা হচ্ছে। আসছে বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বিষয়ে একটি রূপরেখাও দিতে পারেন।
তবে বেকার সমস্যাকে সম্পদে পরিণত করতে কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছে উন্নয়ন-সহযোগীরা। সেটি বাস্তবায়নের জন্য একটি মানবসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট বা মন্ত্রণালয় গঠনেরও পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আএমএফ, ডিএফআইডি, জাইকাসহ উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থাগুলো। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (বিডিএফ) কয়েকটি সেশনে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়Ñ যার রূপরেখা আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তুলে ধরা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এদিকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। যদিও এর চূড়ান্ত স্বীকৃতির জন্য আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের আদলে কীভাবে মানবসম্পদের উন্নয়ন করা যায়, এমনকি দক্ষ মানবসম্পদ কীভাবে রপ্তানি করা যায়, সে বিষয়েও বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছে উন্নয়ন-সহযোগীরা। তা বাস্তবায়ন করতে পারলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন করে আরও বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এতে উচ্চ উৎপাদনশীল দক্ষ জনশক্তির সহায়তায় বাংলাদেশ উচ্চতর প্রবৃদ্ধির সোপানে আরোহণ করতে পারবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরাও।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, কয়েক বছর ধরে দেশে ২৬ লাখ বেকার থাকলেও তা কিছুটা বেড়ে ২৭ লাখে দাঁড়িয়েছে। তাদের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে দেশে ১৪ লাখ পুরুষ এবং ১৩ লাখ নারী বেকার। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মানদ- ব্যবহার করেই বেকারত্বের এই হিসাব করে বিবিএস। ওই মানদ- অনুযায়ী সক্ষম জনগোষ্ঠী যারা সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টাও কাজ করেন না, তাদের বেকার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যদিও দেশের বেকারসংখ্যা কোটিরও বেশি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বিপুলসংখ্যক এ জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে চায় সরকার। এ জন্য কর্মমুখী শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে বিশেষ কিছু কর্মসূচিও নেওয়া হবে আগামী বাজেটে। দক্ষ ও কর্মঠ জনশক্তি রপ্তানির জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট করারও পরিকল্পনা রয়েছে। এতে বেকার ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে পাঠানো সহজ হবে। কারণ দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করতে না পারায় অনেক শ্রমিককেই দেশে ফিরে আসতে হয়।
বিবিএসের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ৫ কোটি ৮৭ লাখ শ্রমশক্তি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত রয়েছেন ৭০ লাখের মতো বাংলাদেশি। তবে শ্রমিকের আয় বাড়াতে দক্ষতা উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দক্ষতা না থাকায় প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ কর্মক্ষম ব্যক্তি শ্রমবাজারে কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ জন্য মানবসম্পদ উন্নয়কে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে আগামী বাজেটে।
জানা গেছে, রূপকল্প-২১ এবং এসডিজি বাস্তবায়নসহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নে মানবসম্পদের দক্ষতা, জ্ঞান ও উদ্ভাবনী শক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে গত অর্থবছরের বাজেটেই জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা ইনস্টিটিউট (এনএসডিএ) গঠনের প্রস্তাবও করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষ পরিচালনার জন্য জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল (এনএইচআরডিএফ) গঠন করে তাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দেরও প্রস্তাব দেন; কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেনÑ সম্প্রতি যে জরিপ প্রকাশ হয়েছে, তাতে বেকারত্বের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। তাই কর্মসংস্থান তৈরির জন্য ন্যাশনাল স্কিমের পাশাপাশি কিছু উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এ ছাড়া ২০১১ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এ বিষয়ে একটি কৌশলপত্র তৈরি করেছিল। সেই কার্যক্রম বাস্তবায়নে কী সমস্যা রয়েছে, তার প্রতিকার করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রচুর শ্রমিক থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন কাজের জন্য বিদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক আনতে হয়। তবে দেশের বেকার জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে গড়ে তুললে আর সেটা করতে হবে না; উল্টো বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। তবে এটা শুধু সরকারিভাবে সম্ভব নয়, এ ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগেরও দরকার আছে। আবার কর্মসংস্থার তৈরি ক্ষেত্রে চাহিদার বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে হবে। উৎপাদনশীল খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগের পরিবেশ। আর বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থানও বাড়বে।