এই শিরোপাটা জিততে পারবেন মাশরাফি?
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মাশরাফি শেষবার শিরোপা জিতেছিলেন ২০১০-১১ মৌসুমে
সর্বশেষ বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাঁর রংপুর রাইডার্স
২০১৫তে বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে
কাল লিজেন্ড অব রূপগঞ্জকে হারালেই ঢাকা লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে মাশরাফির আবাহনী
গত কয়েক বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে যে দলে খেলেন, সে দলই চ্যাম্পিয়ন হয়! এটার রহস্য কী? প্রশ্নটা শুনে মাশরাফি বিন মুর্তজা লাজুক হাসেন। ২০১৫ বিপিএলে সাদামাটা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তাঁর সফল নেতৃত্বে। গত বিপিএলে শুরুতে খুঁড়িয়ে চলা রংপুর রাইডার্সকে শেষ পর্যন্ত শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসিয়েছেন। এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শিরোপার খুব কাছে দাঁড়িয়ে মাশরাফির আবাহনী। কাল কি পারবেন আবাহনীকে চ্যাম্পিয়ন করতে?
বিপিএলে তিন বছরের ব্যবধানে দুবার শিরোপা জিতলেও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগটা মাশরাফির জেতা হচ্ছে না অনেক দিন। কবে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, সেটি নিজেও মনে করতে পারলেন না। মাশরাফি সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা জিতেছেন ২০১০-১১ মৌসুমে। সেবার অবশ্য চোটে পড়ায় মাত্র দুটি ম্যাচই খেলার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। তবে মাশরাফির কাছে সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে আছে ২০০৮-০৯ মৌসুমটা। সেই প্রিমিয়ার লিগে ১৮ ম্যাচে নিয়েছিলেন ৩২ উইকেট। এবারও বোলিংয়ে সেই দুর্দান্ত মাশরাফিকেই দেখা যাচ্ছে।
পরশু খেলাঘরের বিপক্ষে জয়ের পর আবাহনীর এক সমর্থক মিনতির সুরেই মাশরাফিকে অনুরোধ করছিলেন, এবারও যেন শিরোপাটা জিতিয়ে দেন। মাশরাফির প্রতি তাঁদের এতটাই আস্থা, যেন সবকিছুই একটা মানুষের ওপর নির্ভর করছে! উত্তরে বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক সমর্থককে শুধু বললেন, ‘আমাদের জন্য শুধু দোয়া আর সমর্থন করবেন।’
লিগ এতটাই জমজমাট, কে হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন, সেটি জানতে অপেক্ষা করতে হবে কাল পর্যন্ত। লিগের শেষ রাউন্ডের আগে অবশ্য আবাহনী সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে। ঢাকাই ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল দলটি ১৫ ম্যাচে পেয়েছে ২২ পয়েন্ট। এখনো শিরোপার দৌড়ে থাকা অন্য দুই দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ও লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের চেয়ে ২ পয়েন্ট এগিয়ে তারা।
কাল বিকেএসপিতে রূপগঞ্জকে হারালেই শিরোপা পুনরুদ্ধার করবে আবাহনী। ম্যাচটি টাই কিংবা পরিত্যক্ত হলেও ক্ষতি নেই। তখনো নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে অন্তত ১ পয়েন্টে এগিয়ে থাকবে মাশরাফিদের দল। আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হতে পারে রূপগঞ্জের কাছে শেষ ম্যাচে হেরে গিয়েও। সে ক্ষেত্রে অবশ্য তাদের প্রার্থনা থাকবে অন্য ম্যাচে শেখ জামালের হারের। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে খুব বড় ব্যবধানে হার এড়ানো। আবাহনী যদি রূপগঞ্জের কাছে হেরে যায় এবং মিরপুরে শেখ জামাল খেলাঘরকে হারায়, তবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে শেখ জামাল। সে ক্ষেত্রে আবাহনী, রূপগঞ্জ ও জামাল তিন দলেরই পয়েন্ট হবে সমান ২২। তিন দলেরই জয়ের সংখ্যা যেহেতু সমান থাকবে, তাই এরপর আসবে এই তিন দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের হিসাব। এই হিসাবে এগিয়ে আছে রূপগঞ্জকে দুবার ও আবাহনীকে একবার হারানো শেখ জামাল। রূপগঞ্জের হিসাবটা অনেক জটিল। শেষ রাউন্ডে শেখ জামাল খেলাঘরকে হারালেই ক্ষীণ সম্ভাবনাটুকুও শেষ হবে রূপগঞ্জের। তবে খেলাঘর যদি শেষ চমকটা দেখিয়ে শেখ জামালকে হারিয়ে দেয়, একটু সম্ভাবনা তৈরি হবে রূপগঞ্জের। শিরোপা জিততে হলে তারপরও আবাহনীকে বেশ বড় ব্যবধানে হারাতে হবে দলটিকে।
আবাহনীর প্রতিনিধি হয়ে আজ সংবাদমাধ্যমের সামনে আসা মেহেদী হাসান মিরাজ অবশ্য শিরোপা জিততে আশাবাদী, ‘বাঁচা-মরার ম্যাচ। আশাবাদী অবশ্যই। সবাই শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করবে। আমাদের যেসব খেলোয়াড় আছে নিজেদের সেরাটা দিলে ভালো কিছুই হবে।’ জিততে পারলে যে তাঁর নিজেরও অন্যরকম অভিজ্ঞতা হবে, সেটিও বললেন মিরাজ, ‘এর আগে যে দলে খেলেছি ঢাকা লিগে কখনো চ্যাম্পিয়ন হইনি। অবশ্যই লক্ষ্য থাকবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার।’
শুরুতে যে মাশরাফির চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা বলা হচ্ছিল, দুদিন আগে খেলাঘরের বিপক্ষে প্রসঙ্গটা উঠতেই একটা আফসোসের কথা বললেন। আফসোসটা তাঁর ঘরোয়া ক্রিকেটের কোনো দল নয়, বাংলাদেশ দলকে নিয়ে, ‘আমি ভাগ্যে অনেক বিশ্বাসী। চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে। সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম ত্রিদেশীয় সিরিজে (জানুয়ারিতে) চ্যাম্পিয়ন হলে। একটার পর একটা সিরিজ আসবে। চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে। তবুও কিছু পেলে তো ভালোই লাগে। সেটা হলে ভালো লাগে, না হলেও পরের দিনে আবার উঠে একই কাজ করতে হয়।’
কালও হয়তো এই নিয়ম অনুসরণ করবেন মাশরাফি, আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হলে তাঁর ভালো লাগবে, না হলে ব্যর্থতা ভুলে তাকাতে হবে সামনে।
More Link
More Link