ভারতকে সংযত করতে চীনা অত্যাধুনিক অপটিক্যাল মিসাইল ট্র্যাকিং সিস্টেমে আরো শক্তিশালী পাকিস্তান
পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারকে আরো শক্তিশালী করতে উঠেপড়ে লেগেছে চীন। এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ, পাকিস্তানকে অত্যাধুনিক অপটিক্যাল মিসাইল ট্র্যাকিং সিস্টেম বিক্রি। সেকথা সগর্বে স্বীকারও করে নিয়েছেন চীনের কর্তারা। ফলে যে মাল্টি-ওয়ারহেড নিউক্লিয়ার মিসাইল তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছিল পাকিস্তান, তাতে তারা এক ধাপ এগিয়ে গেল। প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় বেইজিং।
ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জন্য অপটিক্যাল সিস্টেম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সিস্টেম থেকে প্রযুক্তিবিদরা মিসাইলের বিভিন্ন পর্যায়ে অতি জরুরি হাই-রেজল্যুশনের ইমেজ পাবেন। যা ক্ষেপণাস্ত্রের ডিজাইন উন্নত করার কাজে ব্যবহার করা যাবে। এই প্রথম চীন এমন স্পর্শকাতর কোনো প্রযুক্তি অন্য দেশের কাছে বিক্রি করল। গত জানুয়ারিতে ভারত দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল অগ্নি ৫-এর সফল উৎক্ষেপণ করে। ৫ হাজার কিলোমিটার পাল্লার অগ্নি ৫ চীনের যেকোনো স্থান এবং ইউরোপ ও আফ্রিকার কিছু অংশে আঘাত হানতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়। এরপরই এই মিসাইল ট্র্যাকিং সিস্টেম বিক্রির খবর প্রকাশ্যে আসে।
অপটিক্যাল সিস্টেম হল, হাই-স্পিড ক্যামেরা, ইনফ্রারেড ডিটেক্টর, লেজার রেঞ্জার ও একটি ট্র্যাকিং সিস্টেম সহ বিশেষ টেলিস্কোপ, যা লক্ষ্যবস্তুকে অনুসরণ করতে পারে। এই সিস্টেম ব্যবহার করে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিবিদরা মিসাইলের প্রতিটি পর্যায়-উৎক্ষেপণ, সেপারেশন, রি-এন্ট্রি ও ওয়ারহেড ছোড়ার উচ্চ-রেজল্যুশনের ছবি দেখতে পারবেন।
পাকিস্তানকে দেয়া চীনের সিস্টেমটিতে অনন্য চারটি টেলিস্কোপ ইউনিট রয়েছে। এগুলো চারটি ভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন কোণে অত্যন্ত নিখুঁত ও স্পষ্ট ছবি তুলতে করতে পারে। মাল্টিপল ওয়াহেডের ক্ষেত্রে আরেকটি বাড়তি টেলিস্কোপ দিয়ে সবগুলি ওয়ারহেড এক সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা যায়।
বেজিং ইনস্টিটউট অব টেকনোলজির স্কুল অব এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কর্তা রং জিলি বলেন যে, এমআইআরভি উন্নয়নের জন্য হাই কোয়ালিটি অপটিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাডার ও অন্যান্য ট্র্যাকিং সিস্টেম থেকে দূর থেকে নিখুঁত ছবি পাওয়া গেলেও অপটিক্যাল সিস্টেমে সরাসরি ছবি দেখা যায়। জানা গেছে, অপটিক্যাল সিস্টেম স্থাপন ও প্রশিক্ষণ দিতে একটি চীনা প্রতিনিধি দল তিন মাস পাকিস্তানে রয়েছে।
ভারত ইতিমধ্যে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানার মতো ক্ষেপণাস্ত্র হাতের মুঠোর মধ্যে এনে ফেলেছে। দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা চলছে বহু দিন। ১৯৯৮ সালে ভারত ও পাকিস্তান এক দিনের ব্যবধানে পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। তখন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন পারমাণবিক প্রযুক্তি হাসিলের প্রচেষ্টায় একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। কিন্তু ভারত সিঙ্গেল নিউক্লিয়ার ওয়াহেড মিসাইল তৈরির চেষ্টা করলেও পাকিস্তান চেষ্টা করছে মাল্টিপল ইন্ডিপেনডেন্টলি টার্গেটেবল রি-এন্টি ভেহিকেল (এমআইআরভি) তৈরি করতে। এই ক্ষেপণাস্ত্র একই সঙ্গে একাধিক ওয়ারহেড বহন ও বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র অনেক বেশি ভার বহন ও অনেক দূরে গিয়ে আঘাত হানতে সক্ষম হলেও, পাকিস্তানের এমআইআরভি ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে স্বল্পসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে একই সঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে। ভারত এখনও মাল্টিপল ওয়াহেড ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে পারেনি। তাই পাকিস্তানের এমআইআরভি প্রযুক্তি ভারতের সঙ্গে শক্তির ভারসাম্য বদলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মার্কিন কংগ্রেসে আমেরিকার ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির পরিচালক রবার্ট অ্যাশলে নিশ্চিত করেছেন যে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তান প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম আবাবিল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে। এটা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এমআইআরভি পেলোড। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এমআইআরভি প্রযুক্তি এখনো নিখুঁত হয়নি। কিন্তু চীনের কাছ থেকে সর্বশেষ সহায়তা পাওয়ার ফলে এ ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হবে।
চীন দীর্ঘ দিন থেকে পাকিস্তানের বন্ধু। স্নায়ুযুদ্ধের সময় তারা গোপানে পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের কাজে সাহায্য করে। সম্প্রতি বেশ কিছু পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণে সহায়তা করছে। এছাড়া ফাইটার, সাবমেরিন, স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন বিক্রি করছে। যাতে প্রতিবেশী নয়াদিল্লিকে চাপে রাখা যায়।