টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা ভালই লাগে। কিন্তু এঁরাই যদি হল’এ গিয়ে ছবি দেখেন, আরও ভাল লাগবে

টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা ভালই লাগে। কিন্তু এঁরাই যদি হল’এ গিয়ে ছবি দেখেন, আরও ভাল লাগবে

দু’জনেই ছোট পরদা দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। একজন ছোট পরদার মায়া ছেড়ে এখন মনোযোগ দিয়েছেন ফিল্মে। অন্যজন জনপ্রিয় মেগার ফাঁকে ফাঁকে দিব্যি বাছাই করা ছবিতে কাজ করে যাচ্ছেন। এই প্রথম একসঙ্গে তাঁদের দেখা যাবে ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ ছবিতে। অর্জুন চক্রবর্তী এবং ঈশা সাহার সঙ্গে আড্ডা দিল ‘ওবেলা’।

ওবেলা: অর্জুন, মেগা সিরিয়ালের চাপে ছবি করা তো খুবই মুশকিল। কী দেখে ছবিটা বাছলেন?
অর্জুন: বাঙালির ইতিহাস বা সাহিত্য নিয়ে এত বুদ্ধিদীপ্ত একটা চিত্রনাট্য আমি আগে খুব একটা শুনিনি। তার উপর গল্পটা মৌলিক। আমার চরিত্রের নাম আবির। তার একটা কমিক শেড রয়েছে। কমিক চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পাচ্ছি বলে আরও বেশি উৎসাহ পেয়েছিলাম।
ঈশা: আমার রাজি হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল এখানে আমার চরিত্র ঝিনুক, ‘প্রজাপতি বিস্কুট’এর শাওনের চেয়ে একদম অন্য রকম। এখানে আমার চরিত্রটা অনেকটা আমারই মতো। বয়স, অ্যাটিটিউড, লুক— সব দিক দিয়েই। তার উপর গল্পটা তো ভালই।


ওবেলা: ছবিতে আপনাদের রসায়নটা ঠিক কী রকম?
অর্জুন: দু’জনে ছোটবেলার বন্ধু। আবিরের তরফ থেকে ঝিনুকের প্রতি একটা হালকা ভাললাগা আছে। তবে এই রোমান্টিক আঙ্গিকটা খুব একটা হাইলাইট করা হয়নি।
ঈশা: সোনাদা-আবির-ঝিনুক— এই ত্রিমূর্তির অ্যাডভেঞ্চারটাই আসল।


ওবেলা: অর্জুন, মেগা সিরিয়ালের পাশাপাশি ছবি করতে অসুবিধে হচ্ছে না?
অর্জুন: খুবই। তবে ওখান থেকেও আমায় একটা লম্বা ছুটি দিয়েছিল। কিন্তু মাঝে মাঝে আবার কথাও শোনাত, ‘তোমায় ছাড়া খুব অসুবিধে হচ্ছে’। তবে আমার কিছু করার ছিল না। ভাল ছবির প্রস্তাব পেলে আমি যে সেটা করব, এরকম কথা আগে থেকেই বলা ছিল। তবে আমাকেও অ্যাডজাস্ট করতে হয়েছে। বোলপুরে অনেকদিনের শ্যুট ছিল এই ছবিটার জন্য। তাই ব্যাঙ্কিং করে যেতে হয়েছিল। টানা অনেকদিন কাজ করেছি। এদিকে আমার অনুপস্থিতিতে ‘জামাই রাজা’র ইউনিট কিন্তু দিব্যি ছুটি কাটিয়েছে! তাই চাপটা আমারই বেশি ছিল। তবে ভাল চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে তো একটু বাড়তি পরিশ্রম করতেই হবে।


ওবেলা: সদ্য বাবা হয়েছেন। তার মধ্যে এত ব্যস্ততা। বাড়িতে কতটা সময় দিতে পারছেন?
অর্জুন: একদমই নয়। তাই খুবই বিরক্ত লাগে। কখনও কখনও মনে হয়, বাহানা বানিয়ে শ্যুটিংয়ে ডুব মেরে দিই। কিন্তু পেশাদার হয়ে সেটা আর করি কী করে বলুন! ইউনিট খুবই চেষ্টা করে আমায় আগে ছাড়ার। শিডিউলে আমার দৃশ্যগুলো যদি আগে শেষ করা যায়, তাহলে ভাল হয়। কিন্তু লাভ কী বলুন? ‘জামাই রাজা’র জামাইটাই তো আমি! ৯০ শতাংশ দৃশ্যে আমি আছি।


ওবেলা: তবে আপনার চরিত্রটা কিন্তু বিপুলভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে...।
অর্জুন: ফিডব্যাক খুব ভাল।
ঈশা: আমার বাড়িতে রোজ ওর সিরিয়াল চলে।
অর্জুন: ছোট পরদায় ফেরার সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম অনেকগুলো কারণে। প্রথমত, দর্শকের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ তৈরি হবে। তার উপর এখানে ভাল ছবির সংখ্যা খুব কম। তাই অনেকদিন চুপচাপ বসে থাকাটা একটু ডিপ্রেসিং হয়ে যায়। মেগা’তে অভিনয়ের মধ্যে থাকা যায়। রোজ অভিনয় করছি।
ঈশা: আমারও মনে হয়, নিয়মিত অভিনয়ের মধ্যে থাকাটা খুব জরুরি। তবে একটা সময়ের পর কিন্তু মাথা খারাপও লাগে একটু।
অর্জুন: সব কাজেরই ভাল-খারাপ দিক থাকে। একটা ভাল জিনিস হল, মেগায় কাজ করলে সব রকম ইমোশন এক্সপ্লোর করা যায়।
ঈশা: আর রোজ সেটা নতুনভাবে করার একটা সুযোগও থাকে। একদিন একভাবে কাঁদলে, অন্যদিন একটু অন্যভাবেও ট্রাই করা যেতে পারে!


ওবেলা: ভাল চরিত্র পেলে আপনিও কি ছোট পরদায় ফিরতে চাইবেন, ঈশা?
ঈশা: (একটু ভেবে...) হ্যাঁ। কারণ আমার শুরুটা ওখান থেকেই। যেটুকু ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাস এখন পেয়েছি, সবটাই মেগার জন্য। এখনই হয়তো করব না। তবে ভবিষ্যতে করতেও পারি। খারাপ ছবি করার চেয়ে বোধহয় মেগা করাটা অনেক ভাল।




খাওয়ার মুডে ঈশা, অর্জুন।

ওবেলা: সাধারণ দর্শক কিন্তু ছোট পরদার মুখদেরই বেশি চেনেন।
অর্জুন: সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আর এই জনপ্রিয়তাটা খুব কম সময়ের মধ্যেই অর্জন করা যায়।
ঈশা: সেটা আমরা এই ছবির আউটডোরে গিয়ে বুঝেছিলাম। বোলপুরে লোকজন অর্জুনকে দেখেই ‘ঈশান যাচ্ছে, ঈশান যাচ্ছে’ করে দৌড়ে আসছিলেন। আবিরদা আরও ইচ্ছে করে সকলকে দেখিয়ে দিচ্ছিল, ‘এই যে আপনাদের জামাই রাজা’! আমরা দু’জনে পালাতাম। আর অর্জুন ফেঁসে যেত (হাসি...)

অর্জুন: আসলে টেলিভিশনের বিস্তারটা অনেক বেশি। অনেক গ্রামে হয়তো সিনেমা হল নেই। তাঁরা ছবি দেখতে যান না। কিন্তু ঘরে ঘরে টেলিভিশন রয়েছে। তাই জনপ্রিয়তাটা মারাত্মক। কিন্তু খারাপ দিকও রয়েছে। একটা সময়ের পর খুব একঘেয়ে হয়ে যায়। মিথ্য কথা বলব না, আমারও সেটা হয়েছে। আসলে টাইটেল চরিত্র হলে চাপটাও তো খুব বেশি হয়।
ঈশা: আমার এটা খুব হতো। দিনে হয়তো ১৯টা দৃশ্য করছি!
অর্জুন: কত কিছু বদলে যায় তার মধ্যে। টিআরপি অনুযায়ী সিরিয়ালের গল্প বদলে যায়। অনেক সময় মনে হয়, মেশিনের মতো ক্যামেরার সামনে গিয়ে শুধু সংলাপ বলে যাচ্ছি। গল্পে কী যে হচ্ছে, অত ফলোও করছি না!


ওবেলা: আর বোলপুরে গিয়ে এত মানুষের উন্মাদনা?
অর্জুন: সেগুলো তো ভাল লাগবেই। তবে এই মানুষগুলোই যদি হল’এ গিয়ে ছবি দেখেন, তাহলে আরও ভাল লাগবে।
ঈশা: একদম!