এবার অস্ট্রেলিয়ার সাম্রাজ্য দখলে নিতে চায় চীন

বিবিধ
এবার অস্ট্রেলিয়ার সাম্রাজ্য দখলে নিতে চায় চীন
ভানুতুয়ার এসপিরিতু স্যান্টো আইল্যান্ডে নতুন একটি জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। সাউথ প্যাসিফিকে এটি অন্যতম বড় জেটি। চীনা ঠিকাদারদের নির্মিত এ প্রকল্পটি হয়েছে চীনা ঋণে। একই সাথে দু’টি কার্গো শিপ বা দু’টি ক্রুইজ লাইনারের স্থান সঙ্কুলান হবে এতে। তবে এর সামর্থ্যরে কারণে এটি কাছাকাছি থাকা অস্ট্রেলিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এমন নয়, বরং সেখানে চীনা নৌবাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে আলোচনাতেই ভড়কে গেছে অস্ট্রেলিয়া। ভানুতুয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রালফ রেগেনভানু খবর অস্বীকার করেছেন। তবে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল যে মন্তব্য করেছেন, তাতে তাদের উদ্বেগই তাতে ফুটে উঠেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে চীনের বিপুল উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। চীনা বিনিয়োগের বেশির ভাগ যাচ্ছে বন্দর, জেটি ইত্যাদির মতো প্রকল্পে। অবশ্য উন্নয়ন পরিকল্পনায় নানা বৈচিত্র্যও এনেছে চীন। পাপুয়া নিউগিনিতে দুই বিলিয়ন ডলারের রামু নিকেল মাইন ও ফিজির বক্সাইট মাইনও চীনা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তারা এতে ভয় পেয়ে গেছেন। গত বছর দেশটির গোয়েন্দাপ্রধান নিক ওয়ার্নার চীনা টেলিকম প্রতিষ্ঠান হুওয়ায়ের একটি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাবসি ইন্টারনেট ক্যাবল স্থাপনে উদ্বুদ্ধু করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়া সরকার এতে অর্থায়ন করেছিল। জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী কনসেট্টা ফিরাভানতি-ওয়েলস ‘অপ্রয়োজনীয় নির্মাণের’ মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলোকে ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলার জন্য চীনকে অভিযুক্ত করেছিলেন। চীন এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ‘সম্পূর্ণ অজ্ঞতা ও পূর্ব-ধারণা’ থেকে এসব মন্তব্য করা হচ্ছে।

সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, এ অঞ্চলজুড়েই বৈদেশিক ঋণ স্তূপ হচ্ছে। ভানুতুয়ার জিডিপির এক-তৃতীয়াংশই বৈদেশিক ঋণ, এর অর্ধেক আবার চীন থেকে। সামোয়ার জিডিপির প্রায় ৫০ শতাংশ ঋণ, এর প্রায় ৪০ শতাংশ চীনা। টোঙ্গার ঋণের দুই-তৃতীয়াংশ এবং এর প্রায় অর্ধেকই চীনা ঋণ। ২০১৩ সালে টোঙ্গা দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু চীন কোনো ঋণ মওকুফ করেনি, তবে পাঁচ বছরের জন্য পরিশোধ স্থগিত করেছিল।

তবে নৌঘাঁটি নিয়ে সরকারগুলোর ভীত হওয়ার তেমন কিছু এখন পর্যন্ত ঘটেনি। চীনা নৌবাহিনীর জাহাজ খুব কমই ওই দূরের দেশগুলোতে যায়। কালেভদ্রে গেলেও তা হয় সাধারণত বন্ধুত্বপূর্ণ মিশনে। যেমন, ফিজিতে গিয়েছিল হাসপাতাল স্টাফদের প্রশিক্ষণ দিতে। বিদেশে এখন পর্যন্ত চীনের একটি মাত্র ঘাঁটি আছে। সেটি আছে আফ্রিকার জিবুতিতে। এর কাছাকাছিই রয়েছে এশিয়া ও ইউরোপের প্রধান শিপিং লেন। সে তুলনায় ভানুতুয়ার তেমন কোনো কৌশলগত গুরুত্ব নেই।

আর চীন যদি ঘাঁটি নির্মাণ করতেই চায়, তবে ভানুতুয়া হবে অদ্ভুত বিকল্প। ১৯৮০ সাল থেকে এ দেশে সরকার পরিবর্তন হয়েছে ২৪ বার। এর রাজনৈতিক রেষারেষিতে অনেক সময় তার নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিতর্ক প্রকাশ পায়। ২০০৬ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার সাথে বৈরী অবস্থানে থাকা ফিজি হতে পারে চীনের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য গন্তব্য। আরো আকর্ষণীয় হতে পারে ঋণে জর্জরিত টোঙ্গা। তবে চীন ও তাইওয়ানের কাছ থেকে প্রতিযোগিতামূলক সহায়তা গ্রহণ করতে প্রায়ই দর কষাকষি চলে। তবে সময় হলো অস্ট্রেলিয়ারই নিজেই বেশ কয়েকটি সুন্দর, দীর্ঘ পোতাশ্রয় বানানো।