নারাইন-নাইট

নারাইন-নাইট
গৌতম গম্ভীর ঘরানার নাইটদের ক্রিকেট-দর্শন সম্পর্কে যাঁরা গত বছর পর্যন্ত ভীষণভাবে পরিচিত ছিলেন, রবিবার দেখা গেল সেই ভাবনায় এসেছে অনেক পরিবর্তন।

রবিবার ক্রিকেটের নন্দনকানন কী দেখল?

দর্শকে ঠাসা ইডেনে প্রিয় কলকাতা নাইট রাইডার্সের হলুদ-বেগুনি পতাকার ভিড়ে অসংখ্য লাল টুপি পরা মাথা। ওঁরা আপদমস্তক বিরাট-অনুগামী।

আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডিভিলিয়ার্সের ২৩ বলে ৪৪ বলের ঝোড়ো ইনিংসের পাল্টা জবাব ব্রায়ান লারার ত্রিনিদাদ এবং টোব্যাগোর সুনীল নারাইনের ১৯ বলে ৫০ রানের ক্যালিপসো-শো। গত বছর গৌতম গম্ভীরের সেরা চমক ছিল নারাইনকে রাতারাতি ইনিংসের শুরুতে তুলে আনা। রবিবার সেই ফর্মুলাই প্রয়োগ করলেন কার্তিক। চারটি বাউন্ডারি এবং পাঁচটি বিশাল ছয়। স্ট্রাইক রেট ২৬৩.১৫। নারাইনই পাল্টে দিয়ে গেলেন ইডেনের মেজাজ। আরসিবি অধিনায়ক বিরাট কোহলির ‘নির্বিষ’ ৩৩ বলে ৩১ রানের জবাবে নীতিশ রানার ২৫ বলে ৩৪ রানের ইনিংস। যিনি আবার বল হাতে তুলে নিয়েছেন আরসিবি পরিবারের দুই মহাতারকা কোহলি এবং এবিকে!

আর যে ছবি দেখার জন্য কেকেআর ভক্তরা প্রতীক্ষা করে গিয়েছেন এই রাতের জন্য, তা উসুল করে দিলেন দীনেশ কার্তিকের হাতে তুলে দেওয়া নতুন ঘরানার নাইট-যোদ্ধারা। সুপার স্পেশ্যালিটি বক্সে ম্যাচের শুরু থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা ‘কিং’ শাহরুখ খানের মুখে তৃপ্তির হাসি। গ্যালারিতে উচ্ছ্বসিত জনতার দিকে ছুড়ে দিচ্ছেন চুম্বন। কুর্নিশ করছেন কলকাতার জনতাকে। ইডেনে আরও একবার আরসিবি-বধ করেই আইপিএল অভিযান শুরু হয়ে গেল কেকেআর-এর।

গৌতম গম্ভীর ঘরানার নাইটদের ক্রিকেট-দর্শন সম্পর্কে যাঁরা গত বছর পর্যন্ত ভীষণভাবে পরিচিত ছিলেন, রবিবার দেখা গেল সেই ভাবনায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। যেখানে নতুন নাইট অধিনায়ক অনায়াসে ব্যবহার করে ফেলছেন সাতজন বোলারকে। নীতিশ রানার মতো আনকোরা, অপরিচিত অফস্পিনারকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন আগ্রাসী মেজাজে থাকা ডিভিলিয়ার্সের সামনে। এবং মাথা ঠান্ড রেখে দিল্লির ২৪ বছরের ছেলে রাতারাতি ম্যাচের রংও পাল্টে দিচ্ছেন! তার পরেও আরসিবি ১৭৬ রান তুলল, তার জন্য ম্যাকালাম-এবি’র সঙ্গে কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন আর এক প্রাক্তন নাইট ক্রিকেটার মনদীপ সিংহ। তাঁর ১৮ বলে ৩৭ রান লড়াইয়ের মঞ্চকে মজবুতই করে দেয়।

কিন্তু বিরাট-স্বপ্নের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেন আর এক ক্যারিবিয়ান নায়ক আন্দ্রে রাসেল। ডোপিং-বিতর্কে জামাইকার ২৯ বছরের অলরউন্ডার ছিলেন আইপিএল-সীমানার বাইরে। প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ হিসাবে তিনি বেছে নিলেন রবিবারের ইডেনকে। ১১ বলে খেলে গেলেন ১৫ রানের ইনিংস। সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের নায়ক, কেকেআর অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক। ২৯ বলে অপরাজিত ৩৫ রানে। ইনিংসে বাউন্ডারি? মাত্র দু’টি! একটা সময়ের জন্যও যাঁর চোখোমুখে ধরা পড়ল না উৎকণ্ঠার ছাপ। যিনি ইডেন জনতার মন জিতেও নির্লিপ্ত। বলছেন, ‘‘আমরা ভাল ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করেছি। হয়তো এখনও ততটা প্রত্যাশাপূরণ করতে পারিনি। তবে সবে তো লড়াই শুরু হল। আশা করছি ধীরে ধীরে ডানা মেলবে আমাদের দল।’’

রবিবার রাতে ফের একবার আরসিবি-বধের সাক্ষী থাকা ইডেন-ফেরত জনতা কিন্তু সমস্বরে স্লোগান দিতে শুরু করেছে, ‘কেকেআর, হ্যায় তৈয়ার’।