রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: জাতিসংঘের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: জাতিসংঘের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন।

শুক্রবার রাতে এই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে করা চুক্তি বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সহযোগিতা চেয়েছেন বলে তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তাদের মধ্যে প্রায় ১২ মিনিট কথা হয়।

“এ সময় শেখ প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সহযোগিতা চান।”

প্রেস সচিব বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। আর প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের অবস্থা নিজে চোখে দেখতে মহাসচিবকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা চার লাখের মত রোহিঙ্গা গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। গতবছর ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে আরও প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা।

জাতিসংঘ ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে আসছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এশিয়ার এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত বছরের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের সঙ্গে যে সম্মতিপত্র সই হয়েছিল, সেখানে দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু করার লক্ষ্য ঠিক করেছিল দুই দেশ।

ওই সম্মতিপত্রের ভিত্তিতে দুই দেশ গত ১৯ ডিসেম্বর যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে এবং ১৬ জানুয়ারি ওই গ্রুপের প্রথম বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিভিন্ন বিষয় ঠিক করে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ স্বাক্ষরিত হয়।

রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাইয়ের জন্য একটি ফরমও চূড়ান্ত করা হয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে। ঠিক হয়, পরিচয় যাচাই ও প্রত্যাবাসনের কাজটি করা হবে প্রতিটি পরিবারকে একটি ইউনিট ধরে।



চুক্তিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য সীমান্তে পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্প খুলবে বাংলাদেশ। সেখান থেকে তাদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে রাখা হবে মিয়ানমারের দুটি ক্যাম্পে। পরে সাময়িকভাবে তাদের থাকার ব্যবস্থা হবে হ্লা পো কুংয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে। পাশাপাশি ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ভিটামাটিতে দ্রুততার সঙ্গে বাড়িঘর পুননির্মাণের ব্যবস্থা নেবে মিয়ানমার।
প্রথম দফায় প্রত্যাবাসনের জন্য আট হাজার ৩২ জনের একটি তালিকাও দেওয়া হয় মিয়ানমারকে। ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে ৩৭৪ জনকে রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছে, যে কোনো সময় তাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত তারা। কিন্তু প্রত্যাবাসনের সব প্রস্তুতি শেষ না হওয়ায় নির্ধারিত দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাকাসন আর শুরু করা যায়নি।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রাথমিক চুক্তিতে জাতিসংঘকে না রাখায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সমালোচনা করা হয়। 

জাতিসংঘ মহাসিচব গুতেরেসও সে সময় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয় সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে সঙ্গে রাখা জরুরি ছিল বলে তিনি মনে করেন।

গত ২ এপ্রিল মস্কোয় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআরকে সম্পৃক্ত করতে রাজি হয়েছে। মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াট আয়ে আগামী ১১ এপ্রিল কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে আসছেন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কর্মকাণ্ডে সহায়তার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যে আগামী ১৩ এপ্রিল জেনেভায় একটি চুক্তি হবে বলে ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমে খবরও এসেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

এদিকে বাংলাদেশ যেভাবে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা করছে তার প্রশংসা করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আনওয়ার বিন মোহাম্মদ গারগাশ।

আজারবাইজানের বাকুতে ন্যাম মন্ত্রিপর্যায়ের সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কাছে তার দেশের পক্ষ থেকে সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা ব্যক্ত করেন তিনি।