প্রশাসন
শতভাগ পেনশন সমর্পণ সুবিধা ফেরত পেতে চান সরকারি চাকরিজীবীরা
শতভাগ পেনশন সমর্পণ সুবিধা ফেরত পেতে চান সরকারি চাকরিজীবীরা। এই সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে কর্মকর্তাদের সংখ্যাই বেশি। সরকারের বেশ কয়েকজন সচিব এরই মধ্যে অবসরের পর শতভাগ পেনশন সমর্পণের সুযোগ পুনর্বহাল করার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। তারা বলেছেন, আগের নিয়মে কোনো সরকারি চাকরিজীবী অবসর নেয়ার পর ইচ্ছা করলে তার পেনশনের শতভাগ বিক্রি বা সমর্পণ করতে পারতেন। নতুবা অর্ধেকটা সমর্পণ করে বাকি অর্ধেকটা পেনশন হিসেবে গ্রহণ করতে পারতেন।
কিন্তু গত বছর এই সুবিধা বাতিল করে দিয়ে পেনশনের ৫০ শতাংশ সমর্পণ এবং বাকি ৫০ শতাংশ পেনশন হিসেবে নেয়ার নিয়ম চালু করা হয়। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে শতভাগ পেনশন সমর্পণ বা অর্ধেক সমর্পণ বাকি অর্ধেকটা পেনশন সুবিধা চালু করার আগের নিয়ম বহাল করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সাথে এক প্রাক-বাজেট আলোচনা তারা এই সুবিধা চান বলে উল্লেখ করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত বছরের ৯ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে ১০০ শতাংশ পেনশন সমর্পণ সুবিধা বাতিল করে দেয়া হয়। এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয় ‘সরকারি কর্মচারীদের (বেসামরিক/ সামরিক) গ্রস পেনশনের ১০০ শতাংশ সমর্পণের সুবিধা বাতিল করা হলো। এর পরিবর্তে ৫০ শতাংশ বাধ্যতামূলক সমর্পণ এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশের জন্য নির্ধারিত হারে মাসিক পেনশনের বিধান প্রবর্তন করা হলো। এই বিধান ১ জুলাই ২০১৭ সাল থেকে কার্যকর হবে। ’
পুরনো বিধানে অবসরে যাওয়া যেকোনো সরকারি চাকরিজীবী তার পেনশনের শতকরা শতভাগ সরকারের কাছে সমর্পণ বা বিক্রি করে দিতে পারতেন। এর ফলে তিনি একবারে অনেকগুলো টাকা পেতেন। কিন্তু নতুন নিয়মে পেনশনের ৫০ শতাংশের বেশি সমর্পণ করা যাবে না। পেনশনের শতকরা শতভাগ সমর্পণ বিধান বাতিলের পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত রয়েছে। এর পক্ষে মত হচ্ছে- পেনশনের শতভাগ সমর্পণ করতে দিলে সরকারি চাকরিজীবীরা অনেক সময় ভবিষ্যতে ঝুঁকির মুখে পড়ে যান। কারণ পেনশনের শতভাগ সমর্পণের ফলে একজন অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীর হাতে এককালীন অনেকগুলো টাকা চলে আসে। এই টাকা দিয়ে তারা বা তাদের পোষ্যরা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ করে থাকেন। এতে করে তারা অনেক সময় সব অর্থ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। বিশেষ করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে বিগত দিনে অনেক পেনশনভোগী নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তাই তাদের মত হচ্ছে- শতকরা শতভাগ পেনশন সমর্পণ করার বিধান বাতিল করা খুব ভালো সিদ্ধান্ত।
অন্য দিকে এর বিপক্ষে মত হচ্ছে- শতকরা শতভাগ পেনশন সমর্পণ করার ফলে একজন অবসরভোগীর হাতে অনেকগুলো টাকা একসাথে চলে আসে। এই অর্থ দিয়ে তারা আবাসনখাতে বিনিয়োগসহ বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে ব্যয় করতে পারেন। বিশেষ করে যারা অপেক্ষাকৃত কম বেতন পান তাদের জন্য এই বিধান বাতিল করা কোনোভাবে কাম্য নয়।
চলতি মাসের শুরুতে আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে দুই দফায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সাথে অর্থমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ের সাথে পেনশন নিয়েও কথা হয়। এই সময় বেশ কয়েকজন সচিব ১০০ ভাগ পেনশন সুবিধা সমর্পণ সুবিধা পুনর্বহাল করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে- অনেকে আছেন যাদের স্বামী-স্ত্রী দু’জনই সরকারি চাকরি করেন। পেনশনের আগের সুবিধা বহাল থাকলে স্বামী-স্ত্রী যেকোনো একজন তার পুরো পেনশন সমর্পণ করতে পারতেন। অন্যজন ৫০ শতাংশ সমর্পণ আর বাকি ৫০ শতাংশের জন্য পেনশন সুবিধা গ্রহণ করতে পারতেন। শুধু এদের ক্ষেত্রেই নয়, অনেক সরকারি চাকরিজীবী অবিবাহিত রয়েছেন। কারো আবার সন্তান-সন্তুতি নেই। তাদের জন্য বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা সুবিধাজনক নয়। তাই পেনশনের আগের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হোক বলে তারা অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। তবে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো মতামত পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
এর আগে পেনশনের শতভাগ সমর্পণের সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্যপরিষদের নেতৃবৃন্দ। তারা অবিলম্বে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য গত বছর অর্থসচিব মাহবুব আহমেদের কাছে পাঠানো এক স্মারকলিপিতে দাবি করেছিলেন। ঐক্যপরিষদ নেতৃবৃন্দ গত বছরের ১৫ জানুয়ারি এক সভার আয়োজন করে। এই সভায় পেনশনের শতভাগ সমর্পণের সিদ্ধান্তে বাতিলের দাবি জানানো হয়।