গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ইউরোপ

ইউরোপ
গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ইউরোপ
ইউরোপে ‘গৃহযুদ্ধ’ পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে এবং মহাদেশটি অনুদারের প্রতি মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুুয়েল ম্যাক্রোঁ ‘অনন্য মডেল’ হিসেবে ইইউকে একত্রে ধারণ ও রক্ষা করার জন্য সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

স্টরেসবার্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অধিবেশনে ইইউর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিজের স্বপ্নের কথা তুলে ধরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ইউরোপের ভেতরে বিভক্তি ও সন্দেহের অনেক প্রেক্ষিত বিদ্যমান রয়েছে।’ ম্যাক্রোঁ এমইপি সদস্যদের বলেন, ইউরোপব্যাপী সার্বভৌমত্ব শক্তিশালী করতে ফ্রান্স আনন্দের সাথে ইইউ বাজেটে নিজের বরাদ্দ বাড়াবে, তবে সদস্য দেশগুলোর চাঁদা দান কমানো বন্ধ করতে হবে এবং ইইউ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন তহবিলের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট অব্যাহত থাকবে। এ নিয়ে এখনো আলোচনা ও কাজ চলছে। আমি এ ব্যাপারে মাইকেল বারনিয়ারের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাই।

ম্যাক্রোঁ বলেন, তবে অনেক ইউরোপীয় দেশের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। আমরা মাসের পর মাস ধরে নানা মত ও উত্তেজনাকর অবস্থার উত্থান দেখতে পাচ্ছি যাকে অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক বলা যায়। মনে হচ্ছে, এটি এক ধরনের ইউরোপীয় গৃহযুদ্ধ : আমাদের যা ঐক্যবদ্ধ করেছিল তার স্থলে এখন জাতীয় স্বার্থপরতা ও অহংবোধ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। অনুদারের মধ্যে এক ধরনের মোহাচ্ছন্নতা আছে, যা সব সময়ই বাড়ছে। তাই ইউরোপের ওপর দায়িত্ব এসে পড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউরোপীয় সামাজিক মডেল ও মহাদেশটির ঐক্যকে পরিহার করা হবে সম্ভাব্য সব চেয়ে বড় ভুল। তিনি জাতীয়তাবাদকে ‘ভয়ঙ্কর মানসিকতা’ বলে অভিহিত করে বলেন, এটি মহাদেশকে গভীর অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে।

ম্যাক্রোঁ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্বে একটি অনন্য মডেল ও ধনভাণ্ডার, যা আমরা ৭০ বছর ধরে টিকিয়ে রেখেছি। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্য শক্তিগুলোর সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে তাদের অনেকেরই ইউরোপের প্রতি মুগ্ধতা রয়েছে। বিশ্বের আর কোথায় এমন অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক, সংখ্যালঘুদের প্রতি শ্রদ্ধা, নারীদের সম-অধিকার ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি শ্রদ্ধার সম্মিলন ঘটেছে? 
ইউরোপীয় দেশগুলো একতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হয়তো দেশগুলোর মধ্যে কিছু মতবিরোধ রয়েছে; কিন্তু এসব মতবিরোধের ঊর্ধ্বে উঠে এই গণতান্ত্রিক মডেল আমাদের একত্র করেছে, যা বিশ্বে অনন্য।’


প্রমাণ নষ্টের আশঙ্কার মধ্যে সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলাস্থলে বিশেষজ্ঞেরা
বিবিসি

সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক রাসায়নিক অস্ত্র পরিদর্শকদের রাসায়নিক হামলাস্থল পরিদর্শনের অনুমতি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। সিরিয়ায় দোমায় রাসায়নিক গ্যাস হামলার প্রমাণ মস্কো নষ্ট করে ফেলেছে বলে ওয়াশিংটনের আশঙ্কার মধ্যে রাশিয়া অঞ্চলটিতে রাসায়নিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। গতকাল সেখানে গেছেন পরিদর্শকেরা।

হেগে রাসায়নিক অস্ত্র প্রতিরোধ সংস্থার (ওপিসিডব্লিউ) জরুরি বৈঠকে সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকারী তিন দেশ ও রাশিয়া পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় বিশেষজ্ঞদের জন্য এই তদন্ত কাজের প্রস্ততি গ্রহণ বেশ কঠিন ও বিপজ্জনক হতে পারে।

আন্তর্জাতিক রাসায়নিক অস্ত্র পরিদর্শকদের একটি দল শনিবার থেকে সিরিয়ায় অবস্থান করলেও এর আগে তাদের দোমা পরিদর্শনের অনুমতি দেয়া হয়নি। তখনো পর্যন্ত বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দোমায় ৭ এপ্রিল রাসায়নিক গ্যাস হামলা চালানো হয়। সিরিয়ার উদ্ধার ও ত্রাণ সংস্থা হোয়াইট হেলমেট এবং অনেক মেডিক্যাল ত্রাণ সংস্থা এই হামলার কথা জানায়। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলার শিকার শিশুদের মর্মান্তিক অবস্থা প্রকাশ পায়।

তবে সিরিয়া ও তার প্রধান মদদদাতা রাশিয়া কোনো রাসায়নিক হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করেছে। রাসায়নিক হামলার ঘটনাকে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে দাবি করেছে মস্কো। এ হামলার জন্য সিরিয়া সরকারকে দায়ী করে দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।

অর্গানাইজেশন অব দ্য প্রহিবিশন অব কেমিক্যাল উইপন্সের (ওপিসিডব্লিউ) তদন্তকারীরা রাজধানী দামেস্কে অবস্থান করে তদন্ত শুরু করার অপেক্ষায় আছেন। দোমা শহরটি এখন সিরিয়া সরকার ও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। রাশিয়ার কথা অনুযায়ী হামলার ১১ দিন পর গতকাল তদন্তকারীরা সেখানে যান। দোমা পরিদর্শনে গিয়ে মাটি ও অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করবে তারা, যেগুলো হামলায় কোনো রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়ে থাকলে তা সনাক্তে সহায়তা করবে তাদের।

ওপিসিডব্লিউতে থাকা মার্কিন দূত আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, রাশিয়া স্থানটি পরিদর্শন করেছে আর তারা সম্ভবত তদন্তে বাধা দিতে প্রমাণ নষ্ট করে দিয়েছে। তবে এক সাক্ষাৎকারে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, রাশিয়া ঘটনাস্থলে কোনো পরিবর্তন করবে না। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের কথিত প্রমাণগুলো শুধু সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমভিত্তিক।

হামলার পক্ষে মে’র সাফাই
বিবিসি জানায়, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, সিরিয়ায় যৌথ হামলা নৈতিক ও বৈধ। আমাদের দেশ এই হামলায় যোগ দিয়ে ঠিক কাজই করেছে। কারণ সিরিয়ার দোমায় প্রেসিডেন্ট বাশারের বাহিনীই যে রাসায়নিক হামলা চালিয়েছে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে। থেরেসা মে পার্লামেন্টে বলেন, এই হামলা আমরা নৈতিক দিক থেকে করেছি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আহ্বানে নয়। এখানে আমাদের দেশের স্বার্থও রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা সব কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগও করেছি। এর আগে দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিন সিরিয়ায় যৌথ হামলায় ব্রিটিশ সরকারের অংশ নিয়ে বৈধতা ও নৈতিকতার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। জেরেমি করবিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে আমেরিকার কাছে নয় বরং ব্রি০টিশ সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। করবিন জোর দিয়ে বলেন, সিরিয়ায় হামলা অবৈধ ছিল এবং জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সনদেরও লঙ্ঘন।