তুরস্ক
তুরস্কের প্রথম পরমাণু স্থাপনা নির্মাণ করবে রাশিয়া
তুরস্কের প্রথম পরমাণু স্থাপনা ‘আকুইয়ু’ নির্মাণ করে দেবে রাশিয়া এবং এ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার জমকালো উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আঙ্কারা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি হয় ভূমধ্যসাগর উপকূলীয় শহর মারসিনে।
আকুইয়ু পরমাণু স্থাপনাটি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি সংস্থা রোজাটম নির্মাণ করবে। তুর্কি এ স্থাপনায় চারটি ইউনিট থাকবে এবং প্রতিটি ইউনিট ১,২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হবে।
পরমাণু স্থাপনাটি নির্মাণ করতে মোট ব্যয় হবে দুই হাজার কোটি ডলার এবং প্রতিষ্ঠানটি বছরে আট হাজার ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। পরমাণু স্থাপনাটি নির্মাণের বিষয়ে ২০১০ সালে রাশিয়ার সাথে তুরস্কের চুক্তি হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে দু’টি ইউনিটের কাজ শেষ করা হবে, যা থেকে ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। পরে বাকি দু’টি ইউনিটের কাজ শেষ করা হবে। স্থাপনাটি পুরোপুরি চালু হলে সেখান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, যা তুরস্কের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার শতকরা ১০ ভাগ। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে শুধু ইস্তাম্বুল শহরেই।
সিরিয়া ইস্যুতে রাশিয়া তুরস্ক ইরান বৈঠক আজ
সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের উপায় খুঁজতে চলতি সপ্তাহে বৈঠকে বসছে সেখানে যুদ্ধরত প্রধান তিন দেশ তুরস্ক, রাশিয়া ও ইরান। আজ বুধবার তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গত বছরের নভেম্বরে মস্কোতে প্রথম দফা বৈঠক করে দেশ তিনটি। চলতি সপ্তাহের বৈঠকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারলে ২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পরিণতি পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যেই সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। বাস্তুহারা হয়েছেন এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ। সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতির উপায় খুঁজতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দেশ তিনটি শান্তি আলোচনায় বসেছিল। তবে তা কার্যকর হয়নি। গত নভেম্বরে মস্কোতে প্রথমবার বৈঠক করেন দেশ তিনটির প্রেসিডেন্ট। ওই বৈঠকের পরই সিরিয়ার আফরিনে কুর্দি অবস্থানে হামলা জোরালো করে তুরস্ক। কুর্দি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণ করতে তুরস্ক এখনো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। বাশার আল আসাদকে সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া ও ইরান।
তুরস্ক ও ইরানের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকে যোগ দিতে মঙ্গলবার তুরস্কে গেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিরি পুতিন। আজ বুধবার তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ও ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সাথে বৈঠক করবেন।
সিরিয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী তিনপক্ষের আলাদা এজেন্ডা রয়েছে। ইরান ও রাশিয়া সিরিয়ায় শিয়া শাসকদের শাসন সংহত করতে চায়। তবে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা কোনো সমঝোতায় পৌঁছায়নি। সিরিয়ায় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তিনটি পক্ষ হলো তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহীরা, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরিয়ার কুর্দি বাহিনী ও প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের সমর্থক ইরান ও রাশিয়া। তুরস্ক চায় কুর্দিদের পরাজিত করতে। বাশার সরকার তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহীদের দমন করে যুক্তরাষ্ট্র্রকে বাইরে রাখতে চায়। আর যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে পরাজিত করে ওই অঞ্চলে তাদের কর্তৃত্ব খর্ব করতে চায়। রাশিয়াকেও নিরাপদ দূরত্বে রাখতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া, ইরান আর তুরস্ক আঙ্কারায় এক ক্যামেরার সামনে হাসতে পারে, তবে তাদের এখনো সিরিয়ার ভাঙা কাচের ওপর হাঁটতে হবে।
পরমাণু স্থাপনাটি চালু করার জন্য প্রাথমিক সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সাল এবং পূর্ণ মাত্রায় চালু হবে ২০২৫ সালে। স্থাপনাটি নির্মাণের জন্য পুরোপুরি কাজ শুরু হলে ১০ হাজার লোক নিয়োগ পাবে আর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে সেখানে সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তি চাকরির সুযোগ পাবে।