‘মাইক হর্ন আমাকে বদলে দিয়েছেন, শিখিয়েছেন স্বপ্ন দেখতে আর মাঠে নেমে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে’
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে তিনি হতে পারেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের তুরুপের তাস। শুধুমাত্র তাঁর ঘূর্ণির ধাঁধা সমাধান করতে নেটে স্থানীয় চায়নাম্যান স্পিনারদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন আরসিবি’র ব্যাটিং গুরু গ্যারি কার্স্টেন।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে তিনি হতে পারেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের তুরুপের তাস। শুধুমাত্র তাঁর ঘূর্ণির ধাঁধা সমাধান করতে নেটে স্থানীয় চায়নাম্যান স্পিনারদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন আরসিবি’র ব্যাটিং গুরু গ্যারি কার্স্টেন। তিনি, কুলদীপ যাদব অবশ্য রয়েছেন ফরফুরে মেজাজে। শনিবার দুপুরে বাইপাসের ধারে টিমহোটেলে বসে ‘এবেলা খেলা’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়ে দিলেন, ভিডিও বিশ্লেষণ করলেও তাঁকে খেলা সহজ হবে না।
বিরাটই কঠিনতম প্রতিপক্ষ
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ব্যাটিং টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা। বিরাট ভাই বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান। ওকে বল করাটা ভীষণ কঠিন। বিরাট ভাইকে জাতীয় দলের নেটে প্রচুর বল করেছি। আমার বোলিংয়ের ধরন খুব ভালভাবে জানে। তাই আমার কাজটা সহজ হবে না। বিরাট ভাইয়ের উইকেট তোলাটা আমার প্রধান লক্ষ্য। ওকে নিজের পছন্দের শটগুলো খেলতে দেব না। আক্রমণাত্মক লাইন-লেংথ বজায় রাখব। তবে এমন কোনও বল নেই যেটা ওকে বিপাকে ফেলতে পারে। তাই ঠিক করে নিয়েছি, প্রাথমিক ব্যাপারগুলোয় জোর দেব। সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। ওর বিরুদ্ধে বেশি বৈচিত্র দেখানোর চেষ্টা করব না। ভারতের হয়ে খেলা আমার কাছে সেরা প্রেরণা। আর বিরাট ভাই দৃষ্টান্ত। জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন যে রুটিন অনুসরণ করে, আমিও সেটাই করি। সে জন্য আগের চেয়ে ফিট দেখাচ্ছে। তবে রবিবার বিরাট ভাই-ই কঠিনতম প্রতিপক্ষ।
এবি-ব্রেন্ডন? পরোয়া নহি
এ বি ডিভিলিয়ার্স খুব আগ্রাসী ব্যাটিং করে। নিজের শট খেলে। ব্রেন্ডন ম্যাকালামও তাই। ব্যাটসম্যান আক্রমণাত্মক শট খেলল কি না, আমি পরোয়া করি না। আমি কোনওদিন রান আটকে রাখার বোলিং করি না। মার খাওয়ার ভয়ও পাই না। আইপিএলে আগে ওদের বল করেছি। তাই ওদের বিরুদ্ধে বাড়তি চাপ থাকবে না। আবার বলছি, বিরাট ভাই-ই রবিবার আমার প্রধান কাঁটা।
অন্যের সতর্কতা, আমার শক্তি
শুনলাম আরসিবি’র ব্যাটিং কোচ গ্যারি কার্স্টেন ওদের নেটে স্থানীয় চায়নাম্যান স্পিনারদের নিয়ে এসেছেন। ভাল লাগে যখন দেখি প্রতিপক্ষ শিবির আমায় নিয়ে ভাবছে। তবে ওদের পরিকল্পনা যাই হোক না কেন, ভাবছি না। আমি একটু অন্যরকম বোলার। আমার বোলিংয়ের বিরুদ্ধে আগাম পরিকল্পনা করা যায় না। নিজের শক্তি অনুযায়ী বল করব। জানি না, আরসিবি নেটে যে সমস্ত চায়নাম্যান বোলার বল করছে, তারা আমার মতোই বল করে কি না। আমাকে অনুকরণ করাটা কঠিন। তাই ওসব নিয়ে ভাবছি না। তবে হ্যাঁ, আমাকে সবসময় তৈরি থাকতে হবে। কারণ, প্রতিপক্ষ শিবির যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করে নামছে।
মাঠে কী করলে, সেটাই প্রধান
আরসিবি হয়তো আমার বোলিংয়ের ভিডিও বিশ্লেষণ করছে। কত বিশ্লেষণ করবে করুক। নিজের শক্তি ও দক্ষতা অনুযায়ী বোলিং করব। প্রচুর ভিডিও দেখলে ব্যাটসম্যানদের সুবিধা হবে না, সেটা বলছি না। তবে স্পিনারের হাত লক্ষ্য করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মাঠের বাইরে যতই ভিডিও দেখো না কেন, ক্রিজে গিয়ে কী করল, ব্যাটসম্যানদের কাছে সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে।
রহস্য নয়, রিলিজ
আমি কোনও রহস্য-স্পিনার নই। আমি চায়নাম্যান স্পিনার এবং সহজাত বোলিংটাই করি। কিছু বৈচিত্র রয়েছে। লেগস্পিনারও আমার মতোই বল করে। শুধু ওদের বলের রিলিজটা হয় ডান হাত থেকে। আমার ডেলিভারি বাঁহাত থেকে রিলিজ হয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বল করতে গেলে আত্মবিশ্বাস দেখাতে হবে। যখন তখন মার খেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাতে ঘাবড়ে গেলে চলবে না।
স্পিনে আমরাই সেরা
টুর্নামেন্টের সেরা স্পিন বোলিং আক্রমণ আমাদের। সুনীল ভাই বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার। পীযূষ ভাইয়ের প্রচুর অভিজ্ঞতা। আন্তর্জাতিক মঞ্চ হোক বা ঘরোয়া ক্রিকেট— অনেক সাফল্য পেয়েছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে চারশো উইকেট রয়েছে। যুজবেন্দ্র চাহাল নিঃসন্দেহে খুব ভাল স্পিনার। আমরা অনেকদিন একসঙ্গে খেলেছি। চাহালের সঙ্গে কাল অনেকক্ষণ কথা হল। বোলিং নিয়েই। কীভাবে বলে বৈচিত্র দেখাব, সেটা নিয়ে কথা হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আমরা একই দলে রয়েছি। আমাদের সম্পর্কটাই সেরকম। বন্ধুত্ব অটুট।
পিচ নিয়ে ভাবছি না
ইডেনের উইকেট খুব ভাল। তবে আমি কোনওদিন উইকেট দেখি না। নেভার। বল ব্যাটে ভালভাবে আসে ইডেনে। তাই স্পিনারদের ক্ষেত্রে কাজটা কঠিন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বেশি চিন্তাভাবনা করার সময় থাকে না মাঠে। হাতে থাকে মাত্র চার ওভার। তার মধ্যেই ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করতে হয়। আমাদের নতুন অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক। ডিকে ভাই দুর্দান্ত ক্রিকেটার। জাতীয় ও রাজ্য দলের হয়ে দারুণ রেকর্ড। আমাকে খুব ভালভাবে চেনে। স্পিনারদের ভরসা দেয়। আমি খুব খুশি। টুর্নামেন্টে আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য অনেক। সর্বোচ্চ উইকেট পেতে হবে— এরকম লক্ষ্য রাখছি না। ধারাবাহিকভাবে উইকেট তুলতে চাই। দলের হয়ে অবদান রাখতে চাই। আর আইপিএল ট্রফিটা জিততে চাই।
হমারে পাস মাইক হ্যায়
আমাকে পুরো বদলে দিয়েছেন মাইক হর্ন। ওঁর অবদান বলে বোঝানো সম্ভব নয়। গত ছয় বছর ধরে ওঁকে চিনি। যখন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে ছিলাম, তখন থেকে। উনি যে কারও জীবন বদলে দিতে পারেন। যেভাবে তরুণদের উৎসাহ দেন, দুর্দান্ত। দলে ওর মতো একজনকে দরকার হয়। যে কোনও লক্ষ্য সহজ মনে হয়। মাইক আমাদের কাছে বন্ধুর মতো। ওর মতো ভয়ডরহীন থাকতে চাই। আমি সৌভাগ্যবান যে, ওঁকে এবার এক সপ্তাহের জন্য পেলাম। যখনই ওকে কিছু জিজ্ঞেস করি, বলেন, ভয় পেয়ো না। এগিয়ে চলো। মনে মনে আওড়াতে বলেন যে, আমিই সেরা। এই টুর্নামেন্টটা আমার টুর্নামেন্ট হতে চলেছে। প্রচুর ভিডিও দেখিয়েছেন। ওঁর ছমাসের সফরে অ্যামাজন পেরনোর ভিডিও। গত বছর আন্টার্কটিকায় গিয়েছিলেন। সেই ভিডিও। মনে হয় উনি মানুষ নন। অতিমানব। আমাদের দলে সকলে ওর মতো ভাবে। স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন মাইক। ভয়ডরহীন হতেও।