ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক ৪ লেন প্রকল্প

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক ৪ লেন প্রকল্প
ব্যয় বাড়ছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা
প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে ঢাকা-খুলনা-মাওয়া-পাঁচ্চর-ভাঙ্গা মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পে। বিশেষ সংশোধিত ব্যয় থেকে তিন হাজার ৬৯০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে এটির মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ১০ হাজার ৫৪২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সোমবার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ। এই সভায় বিভিন্ন অংশের যৌক্তিকতা এবং অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে বলে ছয়টি বিষয়ে প্রশ্ন তোলে পরিকল্পনা কমিশন। পিইসি সভার কার্যপত্র ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অতিরিক্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার (ঢাকা জোন) মো. আবদুস সবুর মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, মূলত জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। এ ছাড়া নতুন কাজ অন্তর্ভুক্তি, কাজের পরিমাণ ও পরিধি বৃদ্ধির কারণেই এত ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পের কর্মপরিধি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ফাউন্ডেশন এবং মাটির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অর্থ বরাদ্দ, ইউটিলিটি প্রতিস্থাপন বরাদ্দের সংস্থান, কাজের পরিমাণ খনন কাজ, বালু ভরাট, ক্লাডিং লেয়ারের পরিমাণ, সাব-বেইজে কাজের পরিমাণ, বিটুমিনাস বাইন্ডার কোর্সে, বিটুমিনাস ওয়্যারিং, স্টিল বার, কংক্রিট ওয়ার্কসহ পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেইজ টাইপ-২ এ খোয়ার পরিবর্তে পাথর ব্যবহার, প্রকল্পে নতুন কাজ হিসেবে চারটি রেলওয়ে ওভারপাস, তেঘরিয়া-বাবুবাজার ফ্লাইওভার এবং কুমার সেতু নির্মাণসহ ইত্যাদি কারণে ব্যয় বাড়ছে।

পিইসি সভায় যেসব খাতের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- প্রকল্পের আওতায় রক্ষণাবেক্ষণ কাজের বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ উইং পুনঃপর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত সাত কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণের জন্য বাড়তি ৫৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত দুই লাখ ছয় হাজার ২৪১ মিটার ফাউন্ডেশন ওয়ার্কের জন্য বাড়তি এক হাজার ২৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ব্যয়ের প্রস্তাবটি যথাযথ পুনঃপর্যালোচনা করে এ খাতে ব্যয় যৌক্তিকভাবে হ্রাস করা যেতে পারে। মূল অনুমোদিত প্রকল্পে সাত হাজার ৫৬ জনমাস পরামর্শকের জন্য ১২১ কোটি ৯৮ লাখ টাকার সংস্থান রয়েছে। সংশোধিত প্রকল্পে অতিরিক্ত ছয় হাজার ৯৬৬ জনমাস পরামর্শকের জন্য বাড়তি ৫০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদকাল মাত্র তিন মাস বৃদ্ধি পেলেও এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) প্রদান করা যেতে পারে। সংশোধিত প্রকল্পে দুর্ঘটনা এবং নির্মাণকালীন রক্ষণাবেক্ষণ খাতে প্রস্তাবিত অর্থ পুনঃপর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে কমানো যেতে পারে। কার্যপত্রে আর বলা হয়েছে, প্রকল্পে টোল প্লাজার ডিজাইন পরিবর্তনসহ টোল প্লাজার সঙ্গে নতুন রেস্তোরাঁ, অফিস ও বাসস্থান, পাম্প হাউস, অগ্নিনির্বাপণ কেন্দ্র, বৈদ্যুতিক স্ব-স্টেশন, পানির ট্যাংক, পুলিশ পোস্ট ইত্যাদি অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি পর্যালোচনা করে শুধু প্রয়োজনীয় অঙ্গ রেখে এ খাতে ব্যয় কমানো যেতে পারে। এ ছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অনুমোদিত রেট সিডিউল অনুযায়ী প্রস্তাবিত ব্যয় প্রাক্কলন করা যেতে পারে এবং প্রাইস কন্টিনজেন্সি ও ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি খাতের প্রস্তাবিত অর্থ বাদ দেয়া যেতে পারে।

সূত্র জানায়, ‘ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ চার লেনে উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পটির মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের ৩ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয় প্রকল্পটি। এর মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের মে থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। এরই মধ্যে অনুমোদনের সাত মাসের মাথায় ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ৬০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ছয় হাজার ৮৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পটির বিশেষ সংশোধনী করা হয়। বর্তমানে আবার তিন হাজার ৬৯০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট ব্যয় প্রায় ১০ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা ধরে প্রথম সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।