কোটা সংস্কার: সরকারের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত
সরকারি চাকরির বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষার’ আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ ব্যানারে আন্দোলনরতদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক থেকে সোমবার এই সিদ্ধান্ত আসে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে সচিবালয়ে এই সমঝোতা বৈঠক হয়।
সোয়া দুই ঘণ্টা আলোচনার পর আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের পাশে নিয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার রিজিড অবস্থানে নেই। আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি। তাদের দাবির যৌক্তিকতা আমরা ইতিবাচক ভাবেই দেখব।”
মন্ত্রী বলেন, “মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে সরকার রিভিউ বা পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে। রেজাল্ট কী আসে আমরা সেটা জানিয়ে দেব।… তারা কথা দিয়েছেন, ওই পর্যন্ত তারা তাদের চলমান আন্দোলন স্থগিত রাখবেন।”
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন কোটা সংস্কারের বিষয়টি আমলে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, “আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করা হল। এখন পর্যন্ত আমার যে সকল ভাই বোনেরা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের সকলকে নিশর্তভাবে মুক্তি দেওয়া হবে এবং পাশাপাশি যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবে সরকার।”
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রোববার রাতে সংঘাত চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনে তাণ্ডবের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ‘শাস্তি পেতে হবে’ বলে সভা শেষে সাফ জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের।
তিনি বলেন, “আমি ব্রাইট অ্যান্ড ব্রিলিয়ান্ট তরুণদের কাছে জানতে চেয়েছি, কোটা সংস্কারের সঙ্গে ভিসি কীভাবে জড়িত? তিনি আর তার পরিবার কেন আক্রান্ত হবে?... তারা একমত। তারা বলেছে, এর মধ্যে অনুপ্রবেশকারী বহিরাগত সন্ত্রাসী থাকতে পারে। আমি পুলিশ কমিশনারকে বলেছি, নিরীহ কাউকে যেন ধরা না হয়।”
বর্তমানে দেশে পাঁচ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য। প্রতিবন্ধী এক শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ও জেলা কোটা ১০ শতাংশ করে। সব মিলিয়ে কোটার জন্য বরাদ্দ ৫৬ শতাংশ। ফলে এর কোনো শ্রেণিতে যারা পড়েন না, তাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বাকি ৪৪ শতাংশের জন্য।
এই পদ্ধতি সংস্কারের পাঁচ দফা দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
তাদের দাবিগুলো হল- সরকারি নিয়োগে কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, কোটার যোগ্য প্রার্থী না পেলে শূন্যপদে মেধায় নিয়োগ, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অভিন্ন বয়সসীমা, নিয়োগপরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহার না করা।
আন্দোলনরতরা রোববার শাহবাগ মোড় চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট-কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে সরিয়ে দেয়। কিন্তু এরপর বিক্ষোভ আর সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসে।
রাত দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভ্যাপক ভাঙচুর করা হয়। টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে রাতভর।