ছোট্ট ছুটিতে কলকাতায় ভুতু
আর্শিয়া মুখোপাধ্যায়কে ‘ভুতু’ বলেই চেনেন সকলে। জি টিভি’র হিন্দি ধারাবাহিকে এখন সে ডাব্ল রোলে! তারই প্রচারের ব্যস্ত ক্লাস থ্রি’র ছাত্রী আর্শিয়া।
ললিপপ পেয়ে খুশি ভুতু। ছবি: হিলটন ঘোষ
মুম্বইয়ের ব্যস্ত অভিনেত্রী সে। ছোট পরদার ছোট্ট নায়িকা। যার খ্যাতি বাংলা ছাড়িয়ে এখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আর্শিয়া মুখোপাধ্যায়কে ‘ভুতু’ বলেই চেনেন সকলে। জি টিভি’র হিন্দি ধারাবাহিকে এখন সে ডাব্ল রোলে! তারই প্রচারের ব্যস্ত ক্লাস থ্রি’র ছাত্রী আর্শিয়া। কলকাতায় ছোট্ট ছুটি কাটানোর এক ফাঁকে ‘ওবেলা’র সঙ্গে আলাপ সেরে গেল মিষ্টি ভুতু!
বাড়ি ফিরেই দেখে নিলাম সব ঠিকঠাক আছে কি না
গত পুজোয় বাড়ি আসা হয়নি। অনেকদিন পর কলকাতায় ফেরা। এয়ারপোর্ট থেকে বাড়িতে ঢুকেই তাই পুরো বাড়িটা একবার ভাল করে ঘুরে দেখে নিয়েছে আর্শিয়া। ‘‘দেখে নিলাম, যেখানে যা রেখে গিয়েছিলাম সব ঠিকঠাক রয়েছে কি না!’’ মাথা নেড়ে বলল ভুতু। তারপর সে কী কী করেছে এই ছুটিতে, বলে গেল একে একে, ‘‘দিদির জন্মদিন ছিল পয়লা বৈশাখের দিন। তার জন্য কেনাকাটা করতে বেরিয়েছিলাম। জন্মদিনের পার্টির জন্য ভাল করে গোটা বাড়ি সাজানো হয়েছিল। সবাই এসেছিল। তারপর তো ধুমধাম করে বার্থডে সেলিব্রেশন হল!’’ এর মধ্যে বাড়ির কাছের এক মেলাতেও ঘুরে এসেছে ভুতু। ‘‘মেলায় একটা গেম হচ্ছিল। তাতে প্রাইজও পেয়েছি দু’টো,’’ জানিয়ে দিল সে!
মুম্বই এখন সেকেন্ড হোম
মুম্বই ফিরে যাওয়ার আগে শেষ দিনটা মা-বাবার হাত ধরে বেরিয়েছে আর্শিয়া। এখন মুম্বই-ই তার সেকেন্ড হোম। কলকাতাকে কতটা মিস্ করে ভুতু? আর্শিয়া জানাল, বাংলা ধারাবাহিকের সেট’এর অনেককে মিস্ করে সে। বিশেষ করে তার মায়ের চরিত্রে যিনি ছিলেন, তাঁকে। ‘‘এর মধ্যে সময় পেলে ওকে একবার ঘুরিয়ে আনব ওর পুরনো স্টুডিও’য়,’’ পাশ থেকে আশ্বাস দিলেন আর্শিয়ার মা ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়। তাঁর মুখেই শোনা গেল প্রবাসে ভুতুর রোজনামচা। ভাস্বতী জানালেন, হিন্দি চ্যানেলের সেট’এ আর্শিয়ার কাজের চাপ এখানকার চেয়ে খানিকটা কম। কারণ কাজের সময়টা বাঁধাধরা, প্রত্যেকদিন ১২ ঘণ্টা। আর স্কুল? আর্শিয়া জানাল, সপ্তাহে একদিন করে স্কুলে যায় সে। আর স্কুল তাকে পুরোপুরিভাবে সাপোর্টও করে। কাজের জায়গাতেও তার আলাদা খাতির! চাওয়ার আগেই মুখের সামনে হাজির হয় পছন্দমতো খাবারদাবার, খেলনা। ভুতুর স্বাস্থ্যের দিকেও
কড়া নজর রাখা হয়েছে। শট’এর ফাঁকে ফাঁকে এসে যায় হরলিক্স, ডাবের জল।
বেস্ট ফ্রেন্ড বিরাজ
ধারাবাহিকের গল্পের মতোই বাস্তবেও ভুতুর বেস্ট ফ্রেন্ড বিরাজ। সিরিয়ালে যে বাল-গোপালের ভূমিকায়। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে আর্শিয়ার সব খুনসুটি, খেলাধুলো তার সঙ্গেই। সাজগোজ করতে খুব ভালবাসে ভুতু। ‘ওবেলা’র ক্যামেরা তার ঘুরতেই সে বলে উঠল, ‘‘মা, একটু পাফ করে দাও তো!’’ লিপস্টিকটা ঠিক আছে কি না, সেটাও দেখে নিল তাড়াতাড়ি। সেট’এ মেকআপ নিয়ে খেলতে ভালবাসে সে। সকাল ৯টার কলটাইম, ২৩ কিলোমিটার পেরিয়ে স্টুডিওয় যাওয়া, আর বাড়ি ফেরা রাত ৮টায়। এভাবেই মুম্বইয়ে দিনগুলো কেটে যাচ্ছে ভুতুর। বাবা কাজের সূত্রে কলকাতায়, মাঝে মাঝে মুম্বইয়ে যাতায়াত করেন। আর্শিয়া আর বড় মেয়ে অদ্রিজাকে একাহাতেই সামলাচ্ছেন ভাস্বতী। অবশ্য দাদু-দিদাও রয়েছেন দুই নাতনিকে দেখার জন্য। অদ্রিজা ধারাবাহিকে মুখ দেখিয়েছে আর্শিয়ারও আগে। এখন সে ক্লাস এইটে। ভাস্বতী জানালেন, বড় মেয়ে যদি ভাল কোনও প্রস্তাব পায়, তবেই আবার ক্যামেরার সামনে আসবে। আর ভুতু? ধারাবাহিক তো একদিন শেষ হবে। তারপর কী করবে সে? সেটা নিয়ে অবশ্য এখনই ভাবনাচিন্তা করছে না মুখোপাধ্যায় পরিবার। ‘‘টিআরপি নিয়ে অতশত ভাবি না। ওর কাজ সকলের ভাল লাগছে, এটাই আমাদের কাছে বড় পাওনা। এখন তো ধারাবাহিকের কাস্টে অরুণা ইরানিও যোগ দিয়েছেন। উনি খুবই স্নেহ করেন আমার মেয়েকে,’’ বললেন ভুতুর মা।
ছুটির দিন ঘুমিয়েই কেটে যায়
একটাই দিন ছুটি পায় আর্শিয়া। সেদিনটা বরাদ্দ থাকে একটা লম্বা ঘুমের জন্য। বিকেলে একটু খেলা কিংবা সাইকেল চালানো, সন্ধেবেলা কোনও শপিং মল বা মাল্টিপ্লেক্সে যাওয়া, এভাবেই কেটে যায় ভুতুর ‘অফ ডে’। ‘‘পরীক্ষা না থাকলে একটু খেলি ঠিকই, কিন্তু পরীক্ষা থাকলে পড়তে বসতে হয়,’’ জানিয়ে দিল ভুতু। সপ্তাহে একদিন স্কুলে যাওয়ায় সেখানে তেমন বন্ধুও হয়নি তার। কোনও কোনও দিন স্কুল থেকে ফিরে লাঞ্চ করে আবার শ্যুটে যায়। মুম্বইয়ের কোথায় কোথায় ঘুরলে? এই প্রশ্নের উত্তরে কিন্তু বেশ ফাঁপরে পড়ল ভুতু। কারণ এখনও শহরটা ঠিক করে ঘুরে দেখা হয়নি যে! ‘‘শুধু এসএল ওয়ার্ল্ড গিয়েছি। আর খুব শিগগিরই লোনাভলাও যাওয়ার কথা আছে,’’ উত্তেজিত হয়ে জানাল সে। তবে সপ্তাহে একদিন ছুটি পেলে যে বাড়িতে থাকতেই সবচেয়ে পছন্দ করে, সেটাও জানিয়ে দিল আর্শিয়া।
ভুতুর ভবিষ্যৎ
বাংলা ধারাবাহিক ‘ভুতু’র চেয়ে হিন্দি ধারাবাহিকের গল্প অনেকটাই আলাদা। অনেক ঘটনাবহুল, খানিকটা নাটকীয়ও। চরিত্রের বৈচিত্রও বেশি। এখন যেমন ভুতুর ডাব্ল রোল। দুই ভিন্ন স্বাদের চরিত্র করতে ভালই পারছে আর্শিয়া। আর এই চ্যালেঞ্জটা বেশ খুশি-মনেই নিয়েছে সে। ভবিষ্যতে কী করবে ভুতু জিগ্যেস করলেই রিনরিনে গলায় সটান জবাব আসে, ‘‘অভিনয়ই করব।’’ তাহলে কি আর কলকাতায় ফেরা হবে না? ভুতুর মা জানালেন, কলকাতায় ফিরতে পারলে ভালই হয়। তবে যেখানে তাঁর মেয়েদের জন্য ভাল প্রস্তাব পাবেন, ভবিষ্যতে সেখানেই সেট্ল করবেন তাঁরা। ভাস্বতীর কথায় ‘‘মুম্বইয়ে অসংখ্য চ্যানেল, প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি। কলকাতার চেয়ে সুযোগ-সুবিধাও বেশি। ওখানে বিভিন্ন কাস্টিং টিম নিয়মিত হোয়াট্সঅ্যাপে যোগাযোগ করে অডিশনের জন্য। ভবিষ্যতে কী হবে জানি না। যতদিন আমার মেয়েকে মানুষ ভালবাসছেন, ততদিন এভাবেই চলুক।’’ ভুতুর অবশ্য ভবিষ্যতের ভাবনা নেই। তার জন্য আইসক্রিম শেক এসে যাওয়ায় মন চলে গেল সে দিকেই। তবে ক্যামেরা তাক করতেই সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি হেসে পোজ দিল ভুতু!