হল মালিক আর এগজিবিটরদের সাপোর্ট না পেলে আমার কিছু করার থাকে না
আগামী ১৩ এপ্রিল মুক্তি পাচ্ছে তাঁর প্রযোজিত তৃতীয় ছবি ‘কবীর’। ছবি-মুক্তির আগে প্রযোজক-অভিনেতার মুখোমুখি ‘ওবেলা’।
খলচরিত্রে অভিনয় করতে দ্বিধা হয়নি?
এই ছবিতে আমি প্রথমে অভিনয় করতে চাইনি। তবে সেটা খলচরিত্র বলে নয়। প্রযোজক হিসেবে এটার পিছনে প্রচুর খাটতে হয়েছে। অনেক রকমের অনুমতি জোগাড় করার ব্যাপার ছিল। ‘ককপিট’এর সময়ই দেখেছিলাম অভিনেতা আর প্রযোজক দু’টো একসঙ্গে হয়ে খুব মুশকিল হচ্ছে। তাই এবার ভেবেছিলাম, অন্য কাউকে প্রস্তাবটা দেব। কিন্তু খলচরিত্র, তার উপর আবার জেহাদির— কেউ করতে রাজি হতো না। আর আমার এই ছবির জন্য একটা বড় মুখের প্রয়োজন ছিল। দেখলাম, আমি যদি চরিত্রটা করি তাহলে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে গল্পটা পৌঁছবে। অভিনেতা হিসেবে কোনও দ্বিধা ছিল কি না জিগ্যেস করলে বলব, একদমই ভাবিনি। ‘জুলফিকর’, ‘ধূমকেতু’— অনেক ছবিতেই তো এক্সপেরিমেন্ট করেছি, তাহলে আর এটা নিয়ে ভাবব কেন!
কারণ বিষয়টাও তো স্পর্শকাতর...।
সম্প্রতি রামনবমী নিয়ে যা ঘটল, তার জন্য কিন্তু বিষয়টা আরও বেশি স্পর্শকাতর মনে হচ্ছে। আর ঠিক এই জিনিসটাই আমরা মানুষকে বোঝাতে চাইছি। এখন পরিস্থিতি এমন হয়ে গিয়েছে যে, চাইলেই মানুষকে একে অপরের সঙ্গে লড়িয়ে দেওয়া যায়! আমাদের রাজ্যেই এরকম একটা কাণ্ড হল। কই, যে রাজ্যগুলো একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের অধীনে, সেখানে তো এরকম কিছু হল না! ২০১৮ সালে কিন্তু সকলেই জানে যে, এই গোষ্ঠীসংঘর্ষগুলো কারা বাধায় এবং কী কারণে বাধায়। এই ছবির মাধ্যমে আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনও রকম বার্তা দিতে চাই না। শুধু চাই, মানুষ সত্যিটা বুঝুক। রামনবমী নিয়ে যা হল, তারপর অনেকে আমায় ফোন করে জিগ্যেস করেছেন, ‘তুমি কি ভেবেছিলে এরকম একটা ঘটনা ঘটবে’? আমার উত্তর একটাই— এরকম কোনও ঘটনা যাতে না ঘটে, সেটা ভেবেই ছবিটা করা। এখন আমাদের দেশে এত কিছু ঘটছে। কিন্তু বাংলা সিনেমায় সেগুলো প্রতিফলন কখনওই দেখা যায় না। আমি সচেতনভাবেই চেয়েছিলাম এরকম একটা ছবি হোক।
তখন কি ভেবেছিলেন, সেন্সরবোর্ডে ঝামেলা হবে?
একদমই ভাবিনি। ট্রেলারে এত ভায়োলেন্স ছিল। তাতে ‘ইউ’ পেয়েছিলাম বলে আমি খুব খুশি ছিলাম। হঠাৎ ছবিটা দেখে ‘এ’ দিয়ে দিল। অথচ এই ছবির বিষয়টা এমন যে ‘ইউ/এ’ পাওয়া উচিত। বাচ্চাদের স্কুলে এই বিষয় নিয়ে ক্লাস নেওয়া উচিত। সে জায়গায় কোনও রকম কথা বলার সুযোগও দেওয়া হল না আমায়। সোজা ‘এ’ বসিয়ে দিল! আমি চাই, ছবিটা আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পাক। অনেক সংখ্যক দর্শক ছবিটা দেখুন। ফেস্টিভ্যালগুলোতেও পাঠানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু সবে প্রযোজনা শুরু করেছি তো, ঠিক জানি না কী করে এগুলোয় পাঠাতে হয়। অথচ আজকাল তো দেখছি সবাই নিজের ছবি দিব্যি সব ফেস্টিভ্যালে পাঠিয়ে দিচ্ছে! কী করে কে জানে!
‘কবীর’এ আপনার চরিত্রটা যথেষ্ট ইনটেন্স। ব্যক্তিগতভাবে সেটা আপনার উপর কোনও রকম প্রভাব ফেলেছিল?
নাহ্! যতটুকু দরকার ততটুকু করেছি। ওয়ার্কশপ করতে হয়েছিল কিছু। অনেক রিহার্স করেছিলাম। কিন্তু প্রযোজক হিসেবে এই ছবির জন্য এত কিছু মাথায় চলত সারাক্ষণ, যে ব্যক্তিগতভাবে চরিত্রটা আমার উপর কোনও প্রভাব ফেলেনি। সারাক্ষণই তো ট্রেন পাব কি না, রিটেক করার সময় পাব না— এসব মাথায় রাখতে হতো। সুবাসিনী মিস্ত্রিকে নিয়ে যে ছবিটা করব, সেটায় আমি অভিনয় করছি না। তখন শুধু প্রযোজনায় মনোযোগ
দিতে পারব। অবশ্য সে সময় আমি অন্য একটা বাণিজ্যিক ছবি হয়তো করব। পরিকল্পনা চলছে।
ওটাও কি আপনার প্রযোজনা সংস্থারই?
একদম!
অন্য প্রযোজকদের সঙ্গে আর কাজ করবেন না?
প্রস্তাব দিলেই করব। কেউ তো ডাকছেই না!
পরিচালকের সঙ্গে।
অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পর পর এতগুলো ছবি ঘোষণা করে দিলেন। উনি এসভিএফ’এর ক্যাম্পে কোনওদিন ছিলেন না বলেই কি?
ওর কাছে খুব ভাল ভাল গল্প আছে বলেই পর পর ছবির ঘোষণা করেছি। ‘কবীর’ বা সুবাসিনী মিস্ত্রির গল্পগুলো তো ওর কাছে কতদিন ধরে ছিল, কিন্তু কোনও প্রযোজক রাজি হচ্ছিল না। আমি শুনেই লুফে নিয়েছি। বাংলা সিনেমার এখন যা হাল, তাতে ওই গতে বাঁধা গল্প নিয়ে কাজ করলে কিছুতেই আর টিকে থাকা যাবে না। এই বিষয়টা নিয়ে অনেকেই আলোচনা করছেন। কিন্তু সেটা শুধু ফেসবুক-টুইটারেই। আমি সেটা করে দেখাচ্ছি বলে বাকিরা আমায় নিয়ে এত কথা বলছে। কিন্তু সত্যিটা হল, নিজেকে বদলাতে হবে, তবেই ইন্ডাস্ট্রির হাল ফিরবে।
প্রযোজক হিসেবে প্রত্যেকটা ছবিতেই বেশ ঝুঁকি নিচ্ছেন। পুজোর কমেডিটা কি তার মধ্যে একটু বিরতি?
কোথায়! ওটাতেও ঝুঁকি রয়েছে। কোনও বাংলা ছবি আগে উজবেকিস্তানে শ্যুট হয়নি। সেফ খেলতে চাইলে অন্যের প্রযোজনা সংস্থায় কাজ করতে পারতাম। অন্য রকম ছবি করব বলেই না প্রযোজনায় আসা। দেখুন, অভিনেতা হিসেবে আমি যে রকম কাজ করে ফেলেছি, তাতে আমি সন্তুষ্ট। আমার সমসাময়িকদের চেয়ে আমায় একটু বেশি নম্বর কিন্তু দিতেই হবে। সেটা বক্স অফিসের নিরিখেই হোক, কিংবা এক্সপেরিমেন্ট করার দিক থেকেই হোক। কিন্তু এবার প্রযোজক হিসেবেও আমি অন্যদের চেয়ে আলাদা কিছু করতে চাই।
এইটুকু সময়ের মধ্যে এতগুলো ছবি। অনেকেই কিন্তু বলছেন, দেব বড্ড তাড়াহুড়ো করছেন।
বছরে তিনটে ছবি করাটা যদি তাড়াহুড়ো হয়, হোক। সুরিন্দর তো বছরে ১২টা ছবি করে, শ্যাম সুন্দর এতগুলো ছবি করে, ওদের তো কেউ কিছু বলে না! আসল কথাটা হল, দেব ভাল কনটেন্ট নিয়ে ছবি করছে। তাই কথা বেশি হচ্ছে। আমি খুব তাড়াতাড়ি ভাল কিছু কনটেন্ট পেয়ে গিয়েছি, যেগুলো নিয়ে আগে কাজ হয়নি। তাই দ্রুত ছবিও করে ফেলতে পারছি। ‘কবীর’এর ঘোষণার পর অনেকেই আমায় জিগ্যেস করেছিলেন, অনিকেতকে (চট্টোপাধ্যায়, পরিচালক) কেন নিলাম। এখন সেই অনিকেতের কাছেই কতজনের ফোন আসছে। আসল ব্যাপারটা হল, লোকের মনে প্রশ্ন উঠছে একটা ছেলে এত কিছু একসঙ্গে কী
করে করছে!
টাকা কোথা থেকে পাচ্ছেন, তা নিয়েও তো প্রশ্ন উঠছে।
আমার ছবিগুলো ভাল ব্যবসা করছে, তাই টাকা পাচ্ছি! নতুন নতুন প্রচারের ভাবনা বার করছি। মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি বার করছি। কাস্টিংয়েও চমক রাখছি। তাই সকলের মনে এত প্রশ্ন উঠছে।
দু’টো ছবি ভাল ব্যবসা করেছে বলছেন। ‘কবীর’এর পিছনে এত খাটলেন। ছবিটা হঠাৎ না চললে সেই ব্যর্থতাটা নিতে পারবেন তো?
এমন নয় যে, আমি আগে ব্যর্থতা দেখিনি। অনেক দেখেছি। আমাদের পেশাটাই তো এ রকম। ইউ আর নোন বাই ইওর লাস্ট ফ্রাইডে। আর ব্যবসার ক্ষেত্রে তো আরওই ঝুঁকির কাজ। কারণ এখানে ৮০ শতাংশ আপনার পরিশ্রম আর বাকি ২০ শতাংশ পুরোটাই আপনার ভাগ্য।
পুজোয় সকলেই নতুন কোনও কনসেপ্ট নিয়ে ছবি আনতে চান। আপনি সেখানে বাণিজ্যিক কমেডি ছবির কথা ভাবলেন কেন?
এতদিন ধরে অভিনয় করছি তো, কোন সময়ে কী রকম ছবি বেশি চলবে একটা ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছে। পুজোর জন্য কমেডিটাই ঠিক আছে। বড়দিনে দর্শক এমন গল্প দেখতে পছন্দ করেন, যেগুলো তাঁদের অনুপ্রাণিত করবেন। আসলে ওই সময়টা অনেক প্রবাসী বাঙালি আসেন। অনেক অবাঙালিও ছবি দেখেন। তাই সুবাসিনী মিস্ত্রির ছবিটা বড়দিনের জন্য রেখেছি। তবে এই ছবিতেও কিন্তু নাচ-গান-বিনোদন থাকবে। ‘প্যাডম্যান’এ যেমন আমরা দেখেছি।
সম্প্রতি কোন বাংলা ছবি দেখে আপনার ভাল লাগল?
‘আমাজন অভিযান’।
দেব সকলের প্রিয়পাত্র ছিলেন। হঠাৎ কেউ আপনাকে প্রিমিয়ারে ডাকছেন না, ছবির প্রস্তাবও দিচ্ছেন না। কেন বলুন তো?
(মিচকে হাসি) আসলে প্রস্তাব পেয়েছি কয়েকটা। কিন্তু গল্প পছন্দ হচ্ছে না। আমি কিন্তু সকলের সঙ্গেই কাজ করতে চাই। কিন্তু এখন একটু একগুঁয়ে হয়ে গিয়েছি। চিত্রনাট্য মনের মতো না হলে একদমই কাজ করব না ঠিক করেছি।
প্রযোজক হিসেবে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে কঠিন কোন দিকটা লাগছে?
ছবি বানানো একটা কাজ, ছবির প্রচার আরেকটা। এই দু’টো নিয়ে আমার কোনও সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু ছবির ডিস্ট্রিবিউশনের গল্পটা পুরো অন্য। হল মালিক আর এগজিবিটরদের সাপোর্ট না পেলে আমার কিছু করার থাকে না। সেটা আমার মনে হচ্ছে, আমি একটু কম পাচ্ছি। ওটা পেয়ে গেলেই আমার অনেকটা মুশকিল কম হয়ে যাবে।