ইরান অনড়, কোণঠাসা যুক্তরাষ্ট্র

মধ্যপ্রাচ্য
ইরান অনড়, কোণঠাসা যুক্তরাষ্ট্র
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ছয় জাতিগোষ্ঠীর সাথে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি নিয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা করবে না তার দেশ। সেই সাথে তিনি চুক্তির শর্তে কোনো রকম পরিবর্তন করার বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তির ‘ভয়ঙ্কর ত্রুটিগুলো পুনর্বিবেচনা করতে’ সম্প্রতি ইউরোপীয় শক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ইউটিউবে প্রকাশিত জাভেদ জারিফের এক ভিডিও বার্তায় বলা হয়েছে, সম্পাদিত চুক্তিতে থাকা পূর্ববর্তী শর্তগুলোর কোনো পরিবর্তন ইরান মেনে নেবে না।

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সের কাছে ইউরোরেনিয়াম প্রকল্প সীমিত করার প্রতিশ্র“তি দিয়ে চুক্তি স্বার করে ইরান। চুক্তির মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত। তবে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজ চায় ইউরোপীয় স্বারকারীরা ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়ে স্থায়ী অবরোধ আরোপ করুক। যদিও চুক্তি স্বারকারী অন্য দেশগুলো কোনোভাবেই এতে রাজি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের একা এই চুক্তি বাতিলের এখতিয়ার নেই বলেও দাবি করছে তারা।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী প্রতি ৯০ দিন পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিশ্চিত করতে হয় যে, ইরান এ সমঝোতা মেনে চলছে। যদি তিনি বলেন, তেহরান সমঝোতা মানছে না তাহলে মার্কিন কংগ্রেস এ সমঝোতা বাতিল করতে বাধ্য। স্বাক্ষরের বছরই জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন-জেসিপিওএ’র আওতায় ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। আগামী ১২ মে ট্রাম্প চুক্তিটি নতুন করে নবায়ন না করলে নিষেধাজ্ঞাগুলো আবার কার্যকর হবে। ইউরোপিয়ান শক্তিগুলোকে ওই চুক্তির ‘ভয়ঙ্কর ত্রুটিগুলো পুনর্বিবেচনা করতে’ ওই তারিখ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন তিনি। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, ‘অতীতে যা নিয়ে আমরা একমত হয়েছিলাম, এখনো সেখানে অটল আছি। কেউ সেটা পরিবর্তন করতে চাইলে মেনে নেয়া হবে না।’

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চুক্তি ‘ঠিক’ করতে ট্রাম্পের সময়সীমা বেঁধে দেয়ার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ‘আমরা সরল বিশ্বাসে যেই চুক্তি করেছি সেখান থেকে সরে আসব না এবং আমাদের দেশের নিরাপত্তা ব্যাহত হয় এমন কিছু করবো না।’ যুক্তরাষ্ট্র বারবার এই চুক্তি ভঙ্গ করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির এক সিনিয়র পরামর্শকও বলেছেন, এই চুক্তি নিয়ে পুনরায় আলোচনা করার কিছু নেই। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো এমনটা চাইলে আমরা চুক্তি থেকে সরেও আসতে পারি। বৃহস্পতিবার ট্রাম্পকে আন্তর্জাতিক এই চুক্তি থেকে সরে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্থনিও গুয়েতেরেস। তিনি বলেন, ইরানের সাথে এই চুক্তি একটি কূটনৈতিক বিজয়। এটি ধরে রাখা প্রয়োজন। ভালো কোনো বিকল্প না থাকলে এটা বাতিলের কথা চিন্তা না করার পরামর্শ তার।

পর্নো তারকাকে অর্থ দেয়ার কথা স্বীকার করলেন ট্রাম্প
বিবিসি

পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য আইনজীবী কোহেনের অর্থ দেয়া এবং পরে তা পরিশোধের বিষয়টি অবশেষে স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ড্যানিয়েলসকে দেয়া অর্থ ‘ট্রাম্প নিজের আইনজীবী কোহেনকে ব্যক্তিগতভাবে পরিশোধ করেছিলেন’ বলে সাবেক নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র রুডি গিউলিয়ানি জানানোর পর এবার ট্রাম্পও বললেন, ওই অর্থ তিনি শোধ করেছেন এবং তা বৈধভাবেই দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ওই অর্থ প্রেসিডেন্টের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের তহবিল থেকে দেয়া হয়নি’। ফলে প্রচারণার তহবিল যে তসরুপ হয়নি সেটিই মূলত বলতে চেয়েছেন ট্রাম্প। ড্যানিয়েলসকে অর্থ দেয়া নিয়ে ট্রাম্প এই প্রথম সরাসরি কথা বললেন। যদিও ওই তারকার সাথে কোনো সম্পর্ক থাকার কথা এখনো জোর গলায়ই অস্বীকার করছেন তিনি।

স্টর্মি ড্যানিয়েলসের দাবি, ২০০৬ সালে তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ড্যানিয়েলস যাতে বিষয়টি নিয়ে মুখ না খোলেন সেজন্যই ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাসখানেক আগে ট্রাম্প তার আইনজীবী মাইকেল কোহেনের মাধ্যমে ডেনিয়েলসকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন। কোহেন এরই মধ্যে ড্যানিয়েলসকে ওই অর্থ দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। আর ট্রাম্প এ অর্থই পরে কোহেনকে পরিশোধ করেছেন বলে ফক্স নিউজকে এক সাাৎকারে জানান তার আইনি টিমের নতুন সদস্য গিউলিয়ানি।

ট্রাম্প এর আগে এ ধরনের কোনো অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না বলে দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার ট্রাম্প তিনটি টুইটে ড্যানিয়েলসকে দেয়া অর্থ পরিশোধ এবং তার সাথে গোপনীয়তা চুক্তি করার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তবে এ গোপনীয়তা চুক্তি ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং সেলিব্রিটিদের মধ্যকার সাধারণ চুক্তি বলেই দাবি করেছেন ট্রাম্প। যে চুক্তির বদৌলতে মিথ্যা কোনো অভিযোগ উঠবে না। আর এ চুক্তির জন্য দেয়া অর্থ প্রচারণা তহবিলের নয় বলেও ট্রাম্প পরিষ্কার করে জানিয়েছেন। অথচ এক মাস আগেই সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে ড্যানিয়েলসকে অর্থ দেয়ার বিষয়টি জানতেন কি না প্রশ্ন করলে তিনি ‘না’ উত্তর দিয়েছিলেন।