দুই বাংলার নায়িকার লড়াই

দুই বাংলার নায়িকার লড়াই
সবাই চান চরিত্রপ্রধান ছবিতে কাজ করতে। কিন্তু চাইলেও সেটা পারছেন না অনেকেই। তাই বাধ্য হয়েই অভিনয় করছেন তথাকথিত বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে। আর বাণিজ্যিক ছবি মানেই নায়কপ্রধান। ফলে টিকে থাকতে হলে লড়াই করতে হয় নায়িকাদের। নায়িকাদের এ লড়াই নিয়ে আমাদের এই আয়োজন। 
‘মাশাআল্লাহ তোর জেল্লা আমায় ঘায়েল করেছে’- অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিমের জেল্লায় শুধু জিতই নয়, ঘায়েল হচ্ছেন অন্তর্জাল দুনিয়ার সব দর্শক-শ্রোতা। গানটি ছিল যৌথ প্রযোজনার মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘সুলতান : দ্য সেভিয়র’ ছবির। এর আগে যৌথ প্রযোজনার ‘ব্ল্যাক’ ছবিতে দেখা গেছে মিমকে। এতে তার বিপরীতে ছিলেন সোহম। ছবিটি কলকাতায় তেমন ব্যবসা করতে পারেনি। বাংলাদেশেও মুখ থুবড়ে পড়ে। নিজেকে টিকিয়ে রাখতে এবার মিম ‘সুলতান’-এর হাত ধরে আসছেন।
নুসরাত ফারিয়ার যাত্রা শুরু হয় যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘আশিকী’র মাধ্যমে। তার বিপরীতে অভিনয় করেন কলকাতার অঙ্কুশ। ছবিতে নায়িকার গ্ল্যামারাস উপস্থিতি দর্শক পছন্দ করেন। এর পর সৈকত নাসির পরিচালিত যৌথ প্রযোজিত ‘হিরো ৪২০’ ছবিটি ব্যর্থ হয়। এ ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন কলকাতার ওম ও রিয়া সেন। তিনি কাজ করেছেন ‘বাদশা দ্য ডন’ ছবিতেও। কিন্তু কোনো ছবিতেই নায়িকা হিসেবে দর্শকের মনে স্থান হয়নি তার। সম্প্রতি চেষ্টা করেছিলেন নায়িকা থেকে গায়িকা হতে। কিন্তু এবার গায়িকা নয়, হলেন নায়িকা!
মাহিয়া মাহি বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়িকা। জাজের ছবিতে কাজ করে তিনি ছিলেন আলোচনায়। অভিনয় করেছেন যৌথ প্রযোজনার ‘অগ্নি-২’, ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’ ছবিতে। দুটি ছবিই নাম লিখিয়েছে ফ্লপের খাতায়। টিকে থাকতে মাহি এখন কাজ করছেন দেশের ছবির তার থেকে কম জনপ্রিয় সব নায়কের বিপরীতে।
শিশুশিল্পী হিসেবে ‘ভালোবাসার রং’, ‘তবুও ভালোবাসি’, ‘অগ্নি’সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন পূজা চেরি। সম্প্রতি নায়িকা হিসেবে সামনে এসেছেন যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘নূর জাহান’ দিয়ে। কিন্তু দর্শকের মনে খুব একটা দাগ কাটতে পারেনি তার অভিনয়। টিকে থাকতে এবার তিনি হাতে নিয়েছেন ‘পোড়ামন’-এর সিকুয়্যাল ‘পোড়ামন ২’। আসছে ৮ মে ফ্রান্সের কান শহরে শুরু হচ্ছে বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জমজমাট ও মর্যাদাপূর্ণ ৭১তম কান চলচ্চিত্র উৎসব। আর সেখানে প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে ছবিটি। এতে পূজার বিপরীতে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ।
মডেল রুহি কলকাতার ‘গ্ল্যামার’ ছবিতে অভিনয় করেছেন। মহুয়া চক্রবর্তীর পরিচালনায় এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ছবিটি খুব বেশি আলোচনায় আসেনি। পরে তিনিও কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
নায়িকা নিপুণ কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা প্রসেনজিতের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ‘পরিচয়’ নামের একটি ছবিতে। রূপালী চ্যাটার্জীর পরিচালনায় এর শুটিং শেষ হয়ে গেলেও প্রযোজনাবিষয়ক ঝামেলার কারণে ছবিটি এখনো মুক্তি পায়নি।
নায়িকা হিসেবে সর্বশেষ সংযোজন আজমেরি হক বাঁধন। সম্প্রতি রায়হান রাফি পরিচালিত ‘দহন’ ছবির মাধ্যমে বড়পর্দায় নাম লিখিয়েছেন ছোটপর্দার এ অভিনেত্রী।
এদিকে হাতে ছবি নেই কলকাতার বাণিজ্যিক ছবির নায়িকাদের! এসকে মুভিজ বাণিজ্যিক ছবিতে টাকা লগ্নি করলেও শ্রী ভেঙ্কটেশের মতো প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে ভিন্ন মেজাজের ছবিতে। স্বাভাবিকভাবে সেখানকার নায়িকাদের বেকারত্ব বাড়ছে। কালকাতার এসব নায়িকাদের নজর বাংলাদেশে। বাংলাদেশের ছবিতে সরাসরি অভিনয় না করলেও শ্রাবন্তী, শুভশ্রীরা লড়াইয়ে টিকে থাকতে হাতে নিয়েছেন যৌথ প্রযোজনার ছবি।
নিজেদের টিকিয়ে রাখতে তুরুপের তাস হিসেবে তারা পেয়েছেন ঢালিউড কিং শাকিব খানকে। এরই মধ্যে শ্রাবন্তী ও শুভশ্রী প্রমাণ পেয়েছেন শাকিবের নায়িকা হয়ে বাংলাদেশের বাজারে তারা সফল হতে পারবেন। আর প্রমাণের অপেক্ষায় রয়েছে সায়ন্তিকা ও নুসরাত জাহান। তবে এসব নায়িকারা টিকে থাকতে হলে লড়াই করতে হবে বাংলাদেশের নায়িকাদের সঙ্গেও। ২০১৬ সালে এসকে মুভিজ ও বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়ার হাত ধরে জুটি বাঁধেন শাকিব খান ও শ্রাবন্তী। ছবির নাম ‘শিকারী’। মুক্তির পর বাংলাদেশে ভালো ব্যবসা করে ছবিটি। পরের বছর একই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে জুটি বাঁধেন শাকিব খান ও শুভশ্রী। তাদের ছবিটির নাম ছিল ‘নবাব’। গেল বছরের কোরবানি ঈদে মুক্তি পাওয়া ছবিটি নবাবী করেছে সিনেমা হলে।
তবে গেল বছর মুক্তি পাওয়া ‘সত্তা’ নামের ছবিটিতে কলকাতার পাওলি দামের সঙ্গে জুটি বেঁধে সুবিধা করতে পারেননি শাকিব। কিন্তু নিজের ব্যতিক্রমী অভিনয়ের স্বাক্ষর তিনি রেখেছেন। এবার অপেক্ষা রয়েছে শাকিবকে নিয়ে সায়ন্তিকা ও নুসরাত জাহানের ছবি ‘মাস্ক’ মুক্তির। কলকাতার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের ব্যানারে একক প্রযোজনাতেই ছবিটি নির্মিত হচ্ছে। সাফটা চুক্তিতে এটি মুক্তি পাবে বাংলাদেশেও। এ ছবিটি নিয়ে আশাবাদী কলকাতার দুই নায়িকা। তারাও স্বপ্ন দেখছেন শ্রাবন্তী ও শুভশ্রীর মতোই সফল হবেন বাংলাদেশেÑ এই আশায়।
বলে রাখা ভালো কলকাতার নায়িকা হিসেবে শাকিবের বিপরীতে সর্বপ্রথম কাজ করেন স্বস্তিকা মুখার্জি। এফ আই মানিক পরিচালিত ছবিটি বাংলাদেশে মুক্তি পায় ‘সবার উপরে তুমি’ নামে।
এদিকে দীর্ঘদিন পর চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন স্বনামধন্য অভিনেতা ও পরিচালক আলমগীর। ছবির নাম ‘একটি সিনেমার গল্প’। এ ছবির নায়িকা হিসেবে তিনি নিয়েছেন কলকাতার নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে। কিন্তু এ সময়ে এসে দর্শকদের মনে একদমই আবেদন তুলতে পারেননি ঋতু! আর আলমগীরের ছবিটিও মুখ থুবড়ে পড়ে বক্স অফিসে। ফলে অনেক নির্মাতাই এমন নামিদামি নায়িকা নিয়ে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
চলচ্চিত্রপাড়ার আলোচনা শাকিব খানের পাশাপাশি নিজেদের টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে কলকাতার নায়িকাদের টার্গেটে রয়েছে বাংলাদেশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। এ প্রতিষ্ঠানটির হাত ধরেই বাংলাদেশে যাত্রা করেছেন শ্রাবন্তী ও শুভশ্রী। নায়িকাদের পাশাপাশি জিৎ, ওম, অঙ্কুশের মতো নায়করাও এ প্রতিষ্ঠানের প্রযোজনায় বাংলাদেশের সিনেমা হলে হাজির হয়েছেন। এদিকে এসকে মুভিজের হাত ধরে কলকাতার বাজারে প্রবেশ করা শাকিব হুট করেই ভেঙ্কটেশের ছবিতে নায়ক হওয়ায় তার ওপর বিশ্বাস হারিয়েছে এসকে মুভিজ। তাই তাকে নিয়ে আর নতুন ছবির ঘোষণা দেয়নি এসকে মুভিজ। নীরব রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশি পার্টনার জাজ মাল্টিমিডিয়া। ফলে অনেকে বলছেন, নায়িকাদের টিকিয়ে রাখার এ লড়াইয়ের কারণে সম্পর্কে ফাটল ধরেছে শাকিব ও জাজের।