নেইমার ছাড়াও বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য ব্রাজিল

ফুটবল
নেইমার ছাড়াও বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য ব্রাজিল
(ডান দিক থেকে) গাব্রিয়েল জেসুস, নেইমার ও ফিলিপ কুতিনহো 
ফুটবল বিশ্বকাপে ব্রাজিল সবসময়ই ফেভারিট৷ কিন্তু গতবার নিজ দেশে অমন শোচনীয় হারের লজ্জা কাটাতে এবার বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া থাকবে সেলেকাওরা৷ বর্তমান ব্রাজিল দলের সেই সামর্থ্যও আছে৷ তারাই এবার প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছে৷ যদিও বাছাইপর্বের শুরুটা ভালো ছিল না৷ ফলে ছয় ম্যাচ পর কোচ পরিবর্তন করতে হয়েছিল ব্রাজিলকে৷ ডুঙ্গার জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছিল আদেনোর লিওনার্দো বাকিকে, যাকে তিতে নামেই সারা বিশ্ব চেনে৷ তিনি ব্রাজিলের দায়িত্ব নেয়ার পর সেলেকাওরা প্রায় একরকম অপরাজেয় হয়ে উঠে৷

কোচ হিসেবে তিতে বায়ার্ন মিউনিখ ও রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক কোচ কার্লো আনসেলত্তির অনুসারী৷ আনসেলত্তির ‘ব্যালেন্সড' দল গড়ার বিষয়টি তিতের পছন্দ৷ আর বর্তমান ব্রাজিল দলে তারকা খেলোয়াড়ের অভাব না থাকায় সব পজিশনেই ভালমানের ফুটবলার নির্বাচন করতে পারছেন তিনি৷

এবার পজিশন অনুযায়ী ব্রাজিল দলের অবস্থা দেখে নিন :

গোলরক্ষক

তিতে কোচের দায়িত্ব নেয়ার পর সেলেকাওদের গোল সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেইসময়কার অপরিচিত গোলরক্ষক আলিসন বেকারকে৷ এখন ২৫ বছর বয়সী বেকারের অন্যতম গুনমুগ্ধ সমর্থকদের মধ্যে একজন হলেন ইটালি ও ইয়ুভেন্তুসের বিখ্যাত গোলরক্ষক বুফন৷ হাত ও পায়ে সমান দক্ষতার কারণে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে খেলা এডারসন এখন দ্বিতীয় গোলরক্ষক হয়ে গেছেন৷

রক্ষণভাগ
ল্যাটিন অ্যামেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষ ১২টি ম্যাচে কোচ ছিলেন তিতে৷ এই সময় তার দল গোল খেয়েছে মাত্র তিনটি৷ এর বড় কারণ শক্তিশালী রক্ষণভাগ৷ এখন পর্যন্ত পিএসজির দানি আলভেস ও মার্কিনিয়ো এবং ইন্টার মিলানের মিরান্ডা ও রেয়াল মাদ্রিদের মার্সেলোকে নিয়ে ডিফেন্স গড়তে পছন্দ করেছেন তিতে৷ এর বাইরে বেঞ্চে যারা বসে থাকবেন তারাও খ্যাতিতে কম যান না৷ পিএসজির থিয়াগো সিলভা, ইয়ুভেন্তুসের আলেক্স সান্দ্রো, ম্যান সিটির দানিলো- ফুটবল সমর্থক মাত্রই এদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন৷

মধ্যমাঠ
চীনের একটি ক্লাবের হয়ে খেলা রেনাতো আউগুস্তর জায়গায় প্লেমেকার হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন বার্সেলোনার ফিলিপ কুতিনহো৷ আরো আছেন চেলসির উইলিয়ান, ম্যান সিটির ফার্নান্দিনিয়ো, বার্সার পাউলিনিয়ো ও রেয়াল মাদ্রিদের কাসেমিরো৷

ফরোয়ার্ড
বর্তমান ব্রাজিল দলের সবচেয়ে বড় তারকা নিশ্চয় নেইমার৷ কিন্তু গত মার্চ মাসে আহত হওয়ার পর থেকে খেলার বাইরে আছেন তিনি৷ শুক্রবার তিনি তার ক্লাব পিএসজিতে ফিরেছেন৷ সেখানকার চিকিৎসকরা আবার তাকে পরীক্ষা করে দেখবেন৷ তবে বিশ্বকাপ শুরুর আগে হয়ত নেইমারের আর প্রতিযোগিতামূলক খেলা হবে না৷ সেক্ষেত্রে একেবারে বিশ্বকাপেই মাঠে নামতে হবে তাকে৷ সেইসময় কোচ তিতে যদি মনে করেন নেইমার পুরো ফিট নন তাতেও সমস্যা হবে না৷ কারণ তিতের কাছে অপশন হিসেবে আছে ম্যান সিটির গাব্রিয়েল জেসুস, যিনি বাছাইপর্বে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন৷ এছাড়া আছেন চেলসির উইলিয়ান, লিভারপুলের ফির্মিনো ও ইয়ুভেন্তুসের কস্টা৷

বিশ্বকাপে ব্রাজিল পড়েছে গ্রুপ ই গ্রুপে৷ তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে আছে সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা ও সার্বিয়া৷



অমীমাংসিত সমাপ্তি হাইভোল্টেজ ক্লাসিকোর

কেউ জেতেনি মওসুমের দ্বিতীয় এল ক্লাসিকোয়। কাতালুনিয়ার ক্যাম্প-ন্যুতে অনুুষ্ঠিত স্পেনের দুই চির-প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যকার লড়াই অমীমাংসিতভাবেই শেষ হয়েছে। উত্তেজনায় ঠাসা নব্বই মিনিটের ফুটবলে দুই দফায় লিড নিয়েও জয়োৎসবে ব্যর্থ স্বাগতিক বার্সেলোনা। দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময় এক ফুটবলার কম নিয়ে খেলেছে লা লিগার চ্যাম্পিয়নরা। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে সার্জিও রবার্তোর সরাসরি লালকার্ড হজম দশজনের দলে পরিণত করেছে বার্সেলোনাকে। তবে একজন কম নিয়ে খেলেও বিরতির পর মাঠে ফেরা স্বাগতিকেরা দ্বিতীয়বারের মতো লিড নেয় লা লিগার চলতি মওসুমের দ্বিতীয় এল ক্লাসিকোয়। ৫২ মিনিটে আর্জেন্টাইন সেনসেশন লায়নেল মেসি দশজনের বার্সেলোনার লিড পুনরুদ্ধার করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত রেখে রিয়াল মাদ্রিদ ১ পয়েন্ট অর্জনেই ফিরেছে মাদ্রিদে। রোববার শিরোপা উত্তাপবিহীন লা লিগার ২০১৭-১৮ আসরের দ্বিতীয় এল ক্লাসিকোয় তারা ২-২ গোলে রুখে দেয় স্বাগতিক বার্সেলোনাকে।

কাতালুনিয়া সফরের ক্লাসিকো ড্রতেই স্পেনের ঘরোয়া ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসরের দ্বিতীয় স্থান অর্জনের হটসিটে রিয়াল মাদ্রিদ। তাদের সাথে নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের পয়েন্টের ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছে ৩ পয়েন্টে। মূলত এসপানিওল সফরে অ্যাথলেটিকোর অবাক করা হার রিয়াল মাদ্রিদকে বসিয়ে দিয়েছে দ্বিতীয় স্থান অর্জনের ফেবারিটের আসনে। কাতালুনিয়ার আরেক দল এসপানিওল ২-০ গোলে হারিয়ে দেয় অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদকে। ২৬ খেলায় ৭৫ পয়েন্ট সংগ্রহে লা লিগার দুইয়ে রয়েছে দলটি। তাদের চেয়ে ১ ম্যাচ কম খেলেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ৩৫ খেলায় ৭২ পয়েন্ট অর্জনে তিনে রয়েছে বর্তমান ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নরা।

ক্যাম্প-ন্যু সফরের ক্লাসিকোয় রিয়াল মাদ্রিদের মূল্যবান এক পয়েন্ট অর্জনে মূল্যবান ভূমিকা রাখেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও ওয়েলস অ্যাটাকার গ্যারেথ বেল। প্রয়োজনের মুহূর্তে তাদের দুইজনের গোল হার থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে সফরকারীদের। দ্বিতীয়ার্ধের সূচনাতে দ্বিতীয়বারের মতো পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদকে ৭২ মিনিটে সমতায় ফেরান বেল। দারুণ ফিনিশিংয়ে বল জড়িয়ে দেন বার্সেলোনার জালে আসেনসিয়োর পাস থেকে। ম্যাচের দশম মিনিটে সুয়ারেজের গোলে বার্সেলোনা ১-০ ব্যবধানের লিডও বেশিক্ষণ অক্ষুণœ থাকেনি। পর্তুগালের সেনসেশন রোনালদো সমতায় ফেরান সফরকারীদের। বেনজেমার বাড়ানো বল দারুণ দক্ষতায় ঠেলে দেন স্বাগতিকদের জালে। ক্যাম্প-ন্যুর এই গোলে এল ক্লাসিকো ইতিহাসের রিয়াল মাদ্রিদের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা অ্যালফ্রেডো ডি স্টেফানোর ১৮ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন রিয়াল মাদ্রিদের সুপারস্টার রোনালদো।

একজন কম নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধের সূচনায় করা বার্সেলোনাকে দ্বিতীয়বারের মতো এগিয়ে দিয়ে লায়নেল মেসি দখলে নেন ক্যাম্প-ন্যুতে লা লিগার ক্লাসিকো ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত গোলের রেকর্ড। ৭-এ উন্নীত হয়েছে তার গোলসংখ্যা। শেষ পর্যন্ত তার গোলটি ক্লাসিকোয় বার্সেলোনাকে জেতাতে না পারলেও একটানা সর্বোচ্চ খেলায় অপরাজিত থাকায় গৌরব বৃদ্ধিতে রেখেছে এক্স ফ্যাক্টর ভূমিকা। গত বছরের এপ্রিলের পর থেকে লা লিগায় অপরাজিত কাতালুনিয়ার জায়ান্টরা। একটানা ৪২ ম্যাচের একটিতেও তারা হারেনি।