মধ্যপ্রাচ্য
সামরিক বাজেট : রাশিয়াকেও ছাড়িয়ে গেল সৌদি আরব
সামরিক খাতে ব্যয়ের দিক দিয়ে রাশিয়াকে ছাড়িয়ে গেল সৌদি আরব। সামরিক বাজেট বরাদ্দর দিক দিয়ে রিয়াদ বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশে পরিণত হয়েছে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা এসআইপিআরআই বুধবার এক নয়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে এ তথ্য জানিয়েছে। এটি বলেছে, সৌদি আরব ২০১৭ সালে সামরিক খাতে ৬৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে যা তার আগের বছরের তুলনায় ৯.২ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া, এই ব্যয় দেশটির মোট জিডিপি’র শতকরা ১০ ভাগ।
সৌদি আরব যখন সামরিক খাতে ৬৯ বিলিয়ন ডলার অর্থ খরচ করেছে তখন একই বছর রাশিয়ার সামরিক খাতে ব্যয় ছিল ৬৬ বিলিয়ন ডলার। একই খাতে ফ্রান্স খরচে করেছে ৫৭ বিলিয়ন ডলার, ভারতের ব্যয় ছিল ৬৩ বিলিয়ন ডলার এবং ব্রিটেন খরচ করেছে মাত্র ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তবে যথারীতি সামরিক বাজেটের দিক দিয়ে আমেরিকা ৬০৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করে নিজের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। অন্যদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ হিসেবে ২০১৭ সালে চীনের সামরিক বাজেট ছিল ২২৮ বিলিয়ন ডলার।
এসআরপিআরআই’র বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সৌদি আরবের মতো দেশের সামরিক ব্যয় মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়।
ইনস্টিটিউটের অন্যতম গবেষক পিটার ওয়েজম্যান বলেছেন, তেলের দাম কমে যাওয়া সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সংঘাত ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বেড়ে যাচ্ছে যা মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে।
চীন-রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার মোকাবেলায় সামরিক বাজেট বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১
চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়াকে মোকাবেলা করার জন্য সামরিক বাজেট বাড়াতে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগন। এই তিনটি দেশের পক্ষ থেকে সামরিক হুমকি বেড়ে যাওয়ার কারণে পেন্টাগন বিশাল এ বাজেট চেয়েছে বলে দাবি করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
২০১৯ সালে সামরিক খাতে ব্যয় করার জন্য পেন্টাগন সোমবার ৬৮ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বাজেট বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। আমেরিকার ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় সামরিক বাজেট হতে যাচ্ছে। বিশাল এ বাজেট বরাদ্দ হলে মার্কিন পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিও জোরদার করা হবে। পরমাণু অস্ত্র খাতে বাড়তি বাজেট চাওয়া হয়েছে তিন হাজার কোটি ডলার।
২০১৭ সালে আমেরিকা সামরিক খাতে যে বাজেট বরাদ্দ দিয়েছিল তার চেয়ে এবার ৮ হাজার কোটি ডলার বেশি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। মার্কিন উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডেভিড এল. নরকুইস্ট সাংবাদিকদের জানান, চীন ও রাশিয়ার পক্ষ থেকে হুমকি মোকাবেলার জন্য এ বাজেট বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, বিশ্বব্যাপী চীন ও রাশিয়া তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে।
পাকিস্তানের সামরিক বাজেট ট্রিলিয়ন রুপি ছাড়ালো : কিন্তু কেন?
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ২৯ এপ্রিল ২০১৮
প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে পাকিস্তানের সামরিক বাজেট। এ বাজেট বৃদ্ধির ঘটনা ঘটলো যখন আমেরিকা থেকে সামরিক সরঞ্জামাদি ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে দেশটি। আর এ বৃদ্ধি নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) বর্তমান শাসনামলের মধ্যে সর্বোচ্চ। খবর দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।
আবার পিএমএল-এন সরকার ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যকার অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে এ বৃদ্ধিকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত জুলাইয়ে নওয়াজ শরিফকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণার পর থেকে এ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে।
নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করার পর দলীয় প্রধানের পদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। বহুল আলোচিত পানামা পেপার কেলেঙ্কারিতে তার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় আদালতের এ আদেশ আসে। সবশেষ গত ২৬ এপ্রিল নওয়াজ শরিফের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ মহিউদ্দিনকে এমপি পদে অযোগ্য ঘোষণা করেছেন পাকিস্তানের ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। তার নামে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওয়ার্ক পারমিট (যা ইকামা নামে পরিচিত) থাকায় সংবিধানের ৬২ অনুচ্ছেদের একটি ধারার আওতায় এ রায় দেয়া হয়।
পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পিএমএল-এনের হাই প্রোফাইল রাজনীতিক হিসেবে মনে করা হয় তাকে। এমনকি নওয়াজ পদচ্যুত হওয়ার পর তার বিকল্প হিসেবে যে কয়েকজনের নাম উঠে এসেছিল সেই তালিকায়ও ছিলেন খাজা আসিফ।
সামরিক বাহিনীর সাথে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জন্য ১.১ ট্রিলিয়ন রুপির সামরিক বাজেট ঘোষণা করলো পিএমএল-এন সরকার। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৯.৬ শতাংশ বেশি। টাকার অঙ্কে বৃদ্ধি হয়েছে ১৮০ বিলিয়ন রুপি। আর এর মাধ্যমেই পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সামরিক বাজেট এক ট্রিলিয়ন ছাড়ালো।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে সামরিক খাতে পাকিস্তানের বরাদ্দ ছিল ৬০০ বিলিয়ন ডলার। সে তুলনায় গত পাঁচ বছর পর এবার শতকরা ৮৪ ভাগ বরাদ্দ বেড়েছে। মোট বরাদ্দের মধ্যে পাক সেনাবাহিনী পাচ্ছে শতকরা ৪৭ ভাগ, বিমান বাহিনীর জন্য বরাদ্দ ২০ ভাগ এবং নৌবাহিনীর জন্য শতকরা ১০ ভাগ থাকবে। বাকি অর্থ প্রতিরক্ষা বিভাগের কোন খাতে ব্যয় হবে তা পরিষ্কার নয়। পাকিস্তানের সামরিক বাজেট বাড়লেও এ নিয়ে সংসদে উন্মুক্ত কোনো আলোচনা হয় না বরং অনেকটাই গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়।
বিভিন্ন উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পাকিস্তানের সামরিক বাজেটের একটা বড় অংশ ব্যয় হয় প্রতিবেশী দেশ ভারতকে মোকাবিলায়। পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উত্তেজনা বেড়েছে। বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরে দু’দেশের সীমান্ত রেখা বরাবর প্রায়ই ছোটখাট যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে দেশ দু’টি।
এ বছরেরই শুরুতে ভারতও তাদের সামরিক বাজেট আট শতাংশ বাড়িয়েছে। ভারতের সামরিক বাজেট পাকিস্তানের সামরিক ব্যয়ের প্রায় ছয় গুণ।