গ্রামে মসজিদ বানালো হিন্দু ও শিখ ধর্মাবলম্বীরা

গ্রামে মসজিদ বানালো হিন্দু ও শিখ ধর্মাবলম্বীরা
ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের মুম নামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে অনন্য নজির সৃষ্টি হয়েছে। ওই গ্রামে মসজিদ বানিয়ে দিয়েছে হিন্দু ও শিখ ধর্মাবলম্বীরা! 

ঘটনার সূত্রপাত করেন নাজিম রাজা খান নামে এক মুসলিম রাজমিস্ত্রি। তিনি ওই গ্রামে একটি মন্দির নির্মাণে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। মন্দির থাকলেও গ্রামে কাছাকাছি কোনো মসজিদ ছিল না।  যদিও ওই গ্রামে মুসলিম রয়েছেন প্রায় ৪০০ পরিবার। আর্থিক অনটনের কারণে চাঁদা তুলেও মসজিদ বানানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই যে মন্দিরে কাজ করছিলেন নাজিম, সেই মন্দির কমিটির কাছে অনুরোধ করেছিলেন মসজিদ বানাতে সাহায্য করার জন্য। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই মন্দির কর্তৃপক্ষ মসজিদের জন্য জমিদান করে। আর্থিক সাহায্যে এগিয়ে আসেন শিখরা। 

৪০ বছর বয়সী নাজিম বলেন, আমাদের গ্রামে চারশ মুসলিম পরিবারের বসবাস। কিন্তু অর্থের অভাবে মসজিদ বানানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আমরা বেশিরভাগই দিনমজুর। অন্যদিকে ওই গ্রামে চার হাজার শিখ ও হিন্দুদের বসবাস। তাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো।

মন্দিরের কাজ শেষ হয়ে আসছে এরকম সময়ে একদিন নাজিম হঠাৎ করে মন্দিরের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে বললেন, ‘আপনারা হিন্দুরা শিগগিরই একটা নতুন মন্দির পাবেন। পুরনো একটা মন্দিরও আপনাদের আছে। কিন্তু আমাদের মুসলিমদের জন্য ইবাদতের কোনো জায়গা নেই। একটা মসজিদ বানানোর টাকা বা জমি কিছুই আমাদের নেই। কিছু জমি কি আমাদের দেবেন?’

সপ্তাহখানেক পর এই প্রশ্নের জবাব পেলেন নাজিম রাজা খান। মন্দির কর্তৃপক্ষ মসজিদের জন্য নয়শ স্কয়ার ফিট জমি দিয়ে দিলেন।

নাজিম রাজা বলছেন, ‘আমি আনন্দে আত্মহারা বোধ করছিলাম। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।’

দুই মাস ধরে নাজিম রাজা ও অন্য শ্রমিকরা মিলে বানালেন মসজিদ। হিন্দু ও শিখরাও তাতে যোগ দিলেন। অর্থ দিয়ে সহায়তায় এগিয়ে এলেন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজন। মসজিদ বানাতে হিন্দুদের জমি আর শিখদের টাকা দেয়া নিয়ে কোনো ধর্মের কারও ক্ষোভ নেই ওই গ্রামে।

নাজিমের বন্ধু ভরত শর্মা বলেন, 'আমাদের এখানে কোনো রাজনীতিবিদ নেই যে আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করবে।' খবর: বিবিসি