ট্রেনে ঈদযাত্রার চতুর্থ দিন: ঘরমুখী মানুষের ঢল, দেরিতে ছেড়েছে ১২ ট্রেন
সকাল থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘরমুখী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। ছাদেও উঠেছেন অনেকে। কমলাপুর রেলস্টেশন, ঢাকা, ১৩ জুন। ছবি: আহমেদ দীপ্ত
ট্রেনে ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে আজ বুধবার সকাল থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘরমুখী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ১২টি ট্রেন দেরিতে স্টেশন ছেড়েছে। যাত্রীদের মধ্যে এ নিয়ে দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
গত দুই দিনের তুলনায় আজ ভোর থেকেই স্টেশনে মানুষের ভিড় বেশি ছিল। সড়কপথে যানজটের ঝক্কি এড়াতে অনেকে বিকল্প হিসেবে রেলপথে ভ্রমণ করছেন। গত তিন দিন বেশির ভাগ ট্রেন নির্ধারিত সময়ে প্ল্যাটফর্ম ছেড়েছিল। তবে আজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কয়েকটি ট্রেন দেরিতে যাওয়ায় যাত্রীরা কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ভোর থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ৩০টি ট্রেন কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। আজ ঈদ স্পেশাল ট্রেনসহ সারা দিনে মোট ৫৯টি ট্রেন ছাড়বে কমলাপুর থেকে। রাজশাহী, দেওয়ানগঞ্জ, পার্বতীপুর, লালমনিরহাট ও খুলনার উদ্দেশে পাঁচটি বিশেষ ট্রেন ছেড়ে যায় স্টেশন।
বেলা আড়াইটার দিকে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শনে আসেন। তিনি রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেসের যাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘শুধু একটি ট্রেন যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে দেরিতে ছেড়েছে। সেটি হচ্ছে সুন্দরবন এক্সপ্রেস। মাত্র ৫৫ মিনিট দেরি করেছে। বাকি সব ট্রেনই যথা সময়ে কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে। আমাদের লক্ষ্য যাত্রীদের সেবা দেওয়া।’
তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ও এই প্রতিবেদক স্টেশনে দাঁড়িয়ে দেখেছেন, একটি নয়, দেরিতে ছেড়েছে ১২টি ট্রেন।
প্রতিদিন তিন লাখ যাত্রী ট্রেনে আসা-যাওয়া করছে বলে রেলমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের সেবা দিয়ে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সতর্ক রয়েছে। ট্রেনের ছাদে কিন্তু কোনো যাত্রী নেই। কারণ, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যাত্রীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে ছাদে ওঠা আইনবহির্ভূত। এ বছর যাত্রীরা ছাদে কেউ ওঠেননি। ঈদে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে যাত্রীদের সেবা নিশ্চিতের জন্য।’
তবে কমলাপুর স্টেশন থেকেই কোনো কোনো যাত্রীকে ছাদে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে।
বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ট্রেনের ছাদে যাত্রীরা উঠছে—সাংবাদিকদের এমন তথ্যের ব্যাপারে রেলমন্ত্রী জানান, ‘ছাদে ওঠা আইনে নেই। আমরাও সমর্থন করি না। যাঁরা ওঠেন, তাঁরা নিজ দায়িত্ব উঠছেন। যাঁরা উঠছেন, তাঁদের নিবৃত্ত করা হচ্ছে।’
রেলমন্ত্রী বেলা ৩টা ২০ মিনিটে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যান। একই সময়ে নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেসের স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু উপকূল এক্সপ্রেস ৩৭ মিনিট দেরি করে স্টেশন ছাড়ে।
রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেছেন, এবার ট্রেনের ছাদে কোনো যাত্রী উঠছেন না। অথচ এভাবে ঝুঁকি নিয়ে অনেক যাত্রীকে ট্রেনের ছাদে উঠতে দেখা যায়। কমলাপুর রেলস্টেশন, ঢাকা, ১৩ জুন। ছবি: আহমেদ দীপ্ত
রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেছেন, এবার ট্রেনের ছাদে কোনো যাত্রী উঠছেন না। অথচ এভাবে ঝুঁকি নিয়ে অনেক যাত্রীকে ট্রেনের ছাদে উঠতে দেখা যায়। কমলাপুর রেলস্টেশন, ঢাকা, ১৩ জুন। ছবি: আহমেদ দীপ্ত
সিল্ক সিটি ট্রেনের যাত্রী লিটন আলী এনজিওতে চাকরি করেন। চার বন্ধু মিলে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ট্রেনে ভ্রমণ সব সময় মজার। কোনো যানজটের চিন্তা নেই। বন্ধুদের সঙ্গে বিশ্বকাপের গল্প করতে করতে বাড়ি যাব। সিল্ক সিটি নির্ধারিত সময়ে বেলা ২টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায়।
যে ১২টি ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে
সকালে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৫৫ মিনিট, ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস ৪৫ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে। দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ছাড়ার সময় ছিল সকাল পৌনে নয়টায়। তবে তা ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ের পৌনে এক ঘণ্টা পর।
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাড়ার সময় সকাল আটটায়। তবে ট্রেনটি আধা ঘণ্টা দেরি করে সকাল সাড়ে আটটায় গেছে।
লালমনিরহাটের লালমণি ঈদ স্পেশাল ট্রেন বেলা সোয়া নয়টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা। এটি ছাড়ে বেলা ১১টায়।
রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন সকাল নয়টায় ছাড়ার কথা থাকলেও তা সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ছেড়েছে।
রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রেনে আধা ঘণ্টা দেরি হলেও সয়ে যায়। কারণ, ট্রেনে তো আরামে যাওয়া যায়। সড়কে গেলে তো আরও বেশি জ্যামে পড়তে হতো। মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে পারব—এটাই আনন্দ।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস কমিউটার ট্রেন সকাল সাড়ে নয়টার পরিবর্তে ২০ মিনিট দেরি করে নয়টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে গেছে। জামালপুরের তারাকান্দি রুটের অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেন আধা ঘণ্টা দেরি করে সকাল সোয়া নয়টায় ছেড়েছে।
দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেস ২০ মিনিট দেরি করে বেলা ১০টা ২০ মিনিটে ছেড়েছে।
৩টা ২০ মিনিটে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেসের। এটি ছাড়ে ৩৭ মিনিট দেরিতে।
রাজশাহী এক্সপ্রেস ১২টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও স্টেশন ছেড়েছে বেলা দুইটার দিকে।
রাজশাহী এক্সপ্রেসের যাত্রী মো. তামজিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসে যেতে যানজটে বেশি কষ্ট হয়। তাই ট্রেনে বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু ট্রেনেও যদি দেরি হয়, তাহলে তো খারাপ একটু লাগেই।’
জামালপুর কমিউটার ট্রেন ৩টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা। এটিকে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটের মধ্যেও ছাড়তে দেখা যায়নি।
কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, আজ ভোর থেকে স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় বেশি হয়েছে। কয়েকটি ট্রেন সামান্য দেরি করেছে, এটা বড় কিছু নয়। বিভিন্ন কারণে কয়েকটি ট্রেন দেরি করে গেছে। বাকিগুলো সময়মতো গেছে, দু-একটি হয়তো ৫ থেকে ১০ মিনিট দেরি করেছে। তবে ঈদের সময় ১৫-২০ মিনিট দেরি করে যাওয়াও বড় কিছু নয়। এটা ঠিক হয় যাবে।