ভাগ্য ও স্নায়ু পরীক্ষায় ইংল্যান্ডের জয়

ভাগ্য ও স্নায়ু পরীক্ষায় ইংল্যান্ডের জয়
বিশ্বকাপে টাইব্রেকার মানেই ইংলিশদের হার। স্নায়ুচাপের তোয়াক্কা না করে এবার উতরে গেল সেই টাইব্রেকারও। ইংলিশ খেলোয়াড়দের উল্লাসটা তো এমন হবেই। ছবি: রয়টার্স
কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড। ৭ জুন সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সুইডেনের বিপক্ষে খেলবে তাঁরা।


Pran upমাত্র ১২ গজ দূর থেকে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বলটা তিন কাঠির মধ্যে রাখতে হবে। মানসিকভাবে যারা একটু শক্তিশালী, তাদের জন্য কাজটা কঠিন নয়। কিন্তু এই অল্প দূরত্ব থেকে ২৪ ফুট প্রশস্ত ও আট ফুট উঁচু গোলপোস্টে বল রাখা কতটা যে কঠিন, ইংল্যান্ডের চেয়ে ভালো আর কোনো দলের জানার কথা নয়। কারণ এর আগে টাইব্রেকারে তিনবার হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল ইংলিশরা। দৃশ্যটা এবার বদলেছে। কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে ৪-৩ ব্যবধানে জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেল ইংল্যান্ড। 

নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র। অতিরিক্ত যোগ করা ৩০ মিনিটেও সমতা। এরপরে ম্যাচ গড়ায় ভাগ্য ও স্নায়ুর পরীক্ষা টাইব্রেকারে। সেখানেই বাজিমাত করেছে তারুণ্য নির্ভর ইংলিশ দল। প্রথম দুই শটে সমতা। তিন নম্বরে জর্ডান হেন্ডারসনের শট কলম্বিয়া গোলরক্ষক অসপিনা বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত সেভ করলে ৩-২ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। কিন্তু শেষ দুটি শটের একটি মিস করেন কলম্বিয়ার উরিবে। কার্লোস বাক্কার নেওয়া শেষ শটটি আটকে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। আর ইংল্যান্ডের হয়ে গোল করেন কিরেন ট্রিপিয়ার ও এরিক ডায়ার। এর আগে কলম্বিয়ার হয়ে স্পটকিক থেকে গোল করেছিলেন রাদামেল ফালকাও, হুয়ান কুয়াদ্রাদো ও লুইস মুরিয়েল। আর ইংল্যান্ডের কেইন ও রাশফোর্ড।

নকআউট পর্ব মানেই টাইব্রেকারের সম্ভাবনা। আর টাইব্রেকার মানেই যে ইংল্যান্ডের বুক ধুকপুকানি। তাই যদি না হবে, এর আগে তিনবার টাইব্রেকারে হেরে বিশ্বকাপ থেকে কেন বিদায় নেবে ইংলিশরা! তাই আজকের ম্যাচ উপলক্ষে অনুশীলনে পেনাল্টি শুটআউট নিয়ে বেশ কাজ করেছিলেন ইংলিশ কোচ সাউথগেট। দলের কোন কোন খেলোয়াড় পেনাল্টি নিতে মানসিকভাবে শক্ত, তা নিয়েও মনবিদের সঙ্গে শলা–পরামর্শ করে রেখেছিলেন ইংলিশ কোচ। তাই সব মিলিয়ে টাইব্রেকার গেরো খুলতে পেরেছে ১৯৬৬ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা।

অথচ ম্যাচটি তো টাইব্রেকারেই গড়ানোর কথা ছিল না। ১-০ গোলে জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ইংল্যান্ড। যোগ করা সময়ে ৯৩ মিনিটে কলম্বিয়াকে সমতায় ফিরিয়ে স্পার্তাক স্টেডিয়ামে রোমাঞ্চ নিয়ে আসেন ইয়েরি মিনা। এই রোমাঞ্চের বাদ দিলে কুৎসিত ফুটবলের মহড়ায় দিয়েছে দু দল। কলম্বিয়া ফাউল করেছে ২৬টি আর ইংল্যান্ড ১৩। ফলে বারবার হাতা–হাতিতে জড়িয়ে পড়েছে খেলোয়াড়েরাও। রেফারিকেও দেখাতে হয়েছে হলুদ কার্ড। কলম্বিয়া হলুদ কার্ড দেখেছে ছয়টি আর দুইটি ইংল্যান্ড।

৫৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নেন হ্যারি কেইন। কর্নারে হেড নিতে যাওয়ার সময় কেইনকে জাপটে ধরে মাটিতে ফেলে দেন কার্লোস সানচেজ। রোফারিও পেনাল্টির বাঁশি বাজাতে কোনো কার্পণ্য করেননি। স্পটকিক থেকে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নেওয়ার সঙ্গে রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত ষষ্ঠ গোল করেছেন ইংলিশ অধিনায়ক।

৮১ মিনিটে সমতায় ফিরতে পারত কলম্বিয়া। ইংলিশ ডিফেন্ডার ওয়াকারের ভুলে মাঝমাঠের ওপর থেকে বল পেয়ে যান কার্লোস বাক্কা। সেখান থেকে একক প্রচেষ্টায় বক্সে ঢুকে পাস বাড়িয়েছিলেন কুয়াদ্রাদোর উদ্দেশে। কিন্তু এই মিডফিল্ডার বার উঁচিয়ে বল বাইরে মারেন। এমন সুযোগ নষ্ট করাতে এখানেই লিখে দেওয়া যেত কলম্বিয়ার বিদায়। কিন্তু রোমাঞ্চ তো তখনো বাকি। ৯০ মিনিট পেরিয়ে যোগ করা সময়ের খেলা চলছে। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে হেডে গোল করে কলম্বিয়াকে সমতায় ফেরান ডিফেন্ডার ইয়েরি মিনা। তাঁর হেড গোল লাইন থেকে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেছিলেন কিরেন ট্রিপিয়ার। হেডও করেছিলেন ইংলিশ এই ডিফেন্ডার। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

prothom aloতবে দিন শেষে ভাগ্যটা ইংল্যান্ডের পাশে ছিল। না হলে কী আর টাইব্রেকার নামক ভাগ্য ও স্নায়ুর লড়াইয়ে জয় পায় ইংলিশরা। ২০০৬ বিশ্বকাপে শেষবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড। এরপর দুই বিশ্বকাপ শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল। এবার আবার কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছাল ইংল্যান্ড। কোয়ার্টার ফাইনালে সুইডেনকে হারাতে পারলেই সেমিফাইনাল।