ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বদলি জনিত কারণে বিদায় বেলা থানায় কর্মরত সকল সদস্যকেই কাঁদিয়ে গেলেন। তার এই বিদায়ে পুলিশ সদস্য ও কর্মচারীরা অশ্রুশিক্ত হয়ে তাকে বিদায় জানান।
অন্যদিকে নবাগত পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বিপিএম মঙ্গলবার যোগদান করেছেন। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বিদায়ী পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম নবাগত পুলিশ সুপারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এ সময় নবাগত পুলিশ সুপার ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের দায়িত্ব বুঝে নেন।
মঙ্গলবার বিকালে নবাগত পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন জেলায় আসলে বিদায়ী পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম তাকে পুলিশ সুপার কার্যালয়, পুলিশের মিডিয়া সেন্টার, সিসি ক্যামেরা (যা বিদায়ী পুলিশ সুপার নির্মাণ করে সারা দেশে মডেল হয়েছেন) ঘুরে দেখান।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহরিয়ার মো. মিয়াজী, জয়িতা শিল্পী, আল আমিনসহ অন্যান্য পুলিশ অফিসার, পুলিশ অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। পরে বিদায়ী পুলিশ সুপার পুলিশ অফিসের সকল কর্মচারী, পুলিশ সদস্যদের প্রতিটি রুমে গিয়ে হাত ও বুক মিলিয়ে বিদায় নেন।
পুলিশ সুপারের শেষ বিদায়কালে পুলিশ অফিসের সকল পুলিশ অফিসার, পুলিশ সদস্য ও কর্মচারীদের মাঝে কান্নাররোল পড়ে যায়। এক পর্যায়ে বিদায়ী পুলিশ সুপার নিজেও কেঁদে ফেলেন। পরে বিদায় পুলিশ সুপারকে পুলিশ লাইন্স থেকে ব্রিটিশ নিয়ম অনুসারে বিদায় জানান পুলিশ সদস্যগণ।
এর আগেই বিদায়ী পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, তিনি মঙ্গলবার রাতেই কুমিল্লায় পুলিশ সুপার হিসাবে যোগদান করবেন।
উল্লেখ্য,বহুগুণের অধিকারী বিদায়ী পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম দুই বৎসর পূর্বে ময়মনসিংহে যোগদান করেন। যোগদান করেই ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ কনস্টেবলের বাড়ী ফুলবাড়িয়াতে যান। নিহতের পরিবারের হাতে তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকা সহযোগিতা করেন। তারপর মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে কবর জিয়ারত করেন।
এরপর থেকেই শুরু হয় জেলা পুলিশকে ঢেলে সাজানো। সেই সাথে জেলা পুলিশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন এই পুলিশ কর্মকর্তা। শুরু হয় ঢাকা-ময়মনসিংহ ৪৮ কিলোমিটার সিসি ক্যামেরা যা সারাদেশে প্রশংসিত হয়। ফলাফলও আসে অনেক ভালো।
ডাকাতি করে মানুষ মেরে গরু নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে ডাকাত ও গাড়ি গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সাথে ত্রিশাল ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়ার পথে ভুয়া ডিবি সেজে টাকা ছিনতাই করে। সেই ছিনতাইকারীকেও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সনাক্ত করা হয়। এমন আরো হাজারো ঘটনা-দুর্ঘটনার ফলাফল পাওয়া যায় এই সিসি ক্যামেরার কারণে।
তবে হঠাৎ বেড়ে যায় শহরের চুরি ছিনতাই। এই চুরি ছিনতাই দমনের জন্য নগরীর বিভিন্ন স্থানে লাগানো হয় সিসি ক্যামেরা। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। চারদিক থেকে প্রশংসা পায় পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম। এরপর শুরু হয় মাদক নিয়ে গ্রেপ্তার, বন্দুকযুদ্ধ। সারা বাংলাদেশে সবচাইতে বেশি মাদকব্যবসায়ী পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় এই জেলাতেই।
রাজনীতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক সকলের সঙ্গে তার ছিল মধুর সম্পর্ক।